কন্যাদান - সঞ্চালী ভট্টাচার্য

 


রাতের খাবার টেবিলে সবাই খেতে বসে গেছে। আজ মাংসটা খুব ভালো রান্না করেছে মৌনী। শ্বশুরমশাই গরম রুটি ছাড়া খেতে পারেন না। তাই মৌনী গরম গরম রুটি সেঁকছে আর পাতে দিয়ে আসছে। মৌনীর স্বামী  বরুণও বাবা মায়ের সাথে খেতে বসে গেছে। মৌনীর মনটা আজ একটু অন্যমনস্ক রয়েছে। সন্ধ্যাবেলায় মায়ের ফোনটা আসার পর থেকেই আর কোনো কিছুতে মনোযোগ দিয়ে উঠতে পারছে না। বেশ কয়েকটা রুটি তাই ভাজতে গিয়ে খানিক পুড়ে গেল। পোড়া রুটি পাতে দিতেই বরুণ প্রচন্ড রেগে গেল। এই দেখে শাশুড়ি মাও দুকথা শুনিয়ে দিলেন মৌনীকে।

 

-      ছেলেটা সারাদিন খেটেখুটে আসবে,একটু শান্তিতে খেতেও পারবে না? এই আধপোড়া রুটি কখন খাওয়া যায়?” 



শাশুড়ির কথায় সম্বিত ফিরল মৌনীর। সে তাড়াতাড়ি করে আরও রুটি তৈরি করে এনে পাতে দিল বরুণের। রাতের খাওয়া শেষ করে যে যার মত শোওয়ার ঘরে চলে গেল



মৌনী সবার শেষে এক টুকরো মাংস আর রুটি নিয়ে যখন খেতে বসল, মায়ের কথাগুলো খুব মনে পড়ছিল। ওর মা বিধবা মানুষ। দুদিন ধরে মায়ের শরীর ভালো নেই। প্রচন্ড প্রেসার হাই, মাথা তুলতে পারছেন না। বাড়িতে দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি নেই যে একটু ওষুধ এনে দেবে বা রান্নাটা করে দেবে। মা একরকম না খেয়ে রয়েছে। অথচ নিজের সন্তান অন্যের সংসারে এসে সারাদিন তাদের সেবা যত্ন করে চলেছে। নিজের মায়ের জন্য একটু রান্নাটুকু করে পাঠাবে সে সুযোগও তার নেই। কষ্টে মৌনীর চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এল মায়ের জন্য।

 

বিয়ে নামক সামাজিক রেওয়াজ কি শুধুই মেয়েদেরকে শাস্তি দেওয়ার জন্য? যাতে নিজের পরিবার থেকে তাকে আলাদা করে দিয়ে অন্যের পরিবারের বেগার খাটুনি খাটতে হয়? তাও আবার কটু কথার বিনিময়ে?   

 

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন