রবিবারের সকাল। সবে কালীপুজো শেষ হয়েছে। হেমন্তের শিরশিরানি টের পাওয়া যাচ্ছে বাতাসে। ভূপেনবাবু বেশ সতর্ক। কয়েকদিন হল মর্নিংওয়াকে একটু গরম জামা চাপিয়ে তবে বেরোচ্ছেন। একটু ঠাণ্ডা লাগলে শ্বাসকষ্ট দেখা দেবে। মর্নিংওয়াকের সঙ্গীরা মজা করলেও তা একেবারেই পাত্তা দেন না। অন্য সময় ফেরার পথে বাজার করে ফেরেন বাড়ি। তবে ইদানিং সদ্য ঠান্ডার আমেজ পড়তেই ছেলে সিন্টুর ওপর ভার পড়ে বাজারের। খুব বেশি হলে মাস চারেক বাজারের দায়িত্ব পালন করে। গরমের ছাট পড়তেই আবার সক্রিয় হয়ে ওঠেন ভূপেনবাবু। সকালের এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটা নিতে গড়িমসি করেছিল সিন্টু। মা গৌরী দেবী মাথা-পিঠে হাত বুলিয়ে রাজি করিয়েছিলেন। কলেজে পড়া ছেলের ওপর প্রথম প্রথম রাগ করতেন। যখন মায়ের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করায় খুশিই হয়েছিলেন ভূপেনবাবু। কিন্তু বাজার করতে যে দক্ষতার প্রয়োজন, তা সিন্টুর মধ্যে নেই বললেই চলে। তবুও নাছোড় ছিলেন ভূপেনবাবু। যেভাবেই হোক বাজার করা সিন্টুকে শিখিয়েই ছাড়বেন।
শিস দিতে দিতে বাড়ির সামনে
দিয়ে কে যেন চলে গেল। সামনের ঘরে বসে
খবরের কাগজে ডুব দিয়েছিলেন ভূপেনবাবু। শিসের আওয়াজে মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে
জানালার সামনে এসে দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে তাকান। কাউকে দেখতে পান না। একটু আগেই
বাজার করে ফিরেছে সিন্টু। কিছুক্ষণ পরে সামনের টেবিলে জলখাবারের ডিসটা রেখে যান
গৌরী দেবী। প্লেটে খান ছয়েক লুচি আর বেগুন ভাজা। অতগুলো লুচি খাবেন না বলে চিৎকার
করে ওঠেন ভূপেনবাবু, “সিন্টু, অ্যাই সিন্টু!”
চিৎকার শুনে রান্নাঘর থেকে পড়ি
কী মরি করে ছুটে এসে হাজির হন গৌরী দেবী। বলেন,” সাত-সকালে চিৎকার করছো কেন?”
ভুপেনবাবু খবরের কাগজ থেকে মাথা
তুলে বলেন, “আমি তো সিন্টুকে
ডেকেছি। তুমি এলে কেন? সিন্টু কই?”
গৌরী দেবী তড়িঘড়ি বলেন, “ একটু বাইরে গেছে। কী হয়েছে বলবে তো? “
ভূপেনবাবু বিস্ময়ের সুরে বলেন, “ এই তো বাজার করে এল! এর মধ্যে...” , তারপর প্লেটের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ” অতগুলো লুচি খাব না। দুটো তুলে নিয়ে যাও।“
তারপর নিজের ভাবনায় ডুবে যান
ভূপেনবাবু। গৌরীদেবী কখন প্লেট থেকে লুচি তুলে নিয়ে গেছেন, টের পাননি।
তখনও শিসের আওয়াজটা কানে ভেসে বেড়াচ্ছিল। তাহলে কি সিন্টুকে বাড়ির বাইরে বের
করার জন্য সাংকেতিক আওয়াজ ব্যবহার করছে বন্ধুরা! কী জানি হতেও পারে।
সিন্টু, নবা, বুড়ো আর খোকন এ পাড়ার হরিহর আত্মা। ইদানিং আবার অনেকে হিন্দিতে ওদের জিগরি
দোস্ত বলে। যে কোনও কাজে, জন্মদিন পালন
থেকে কাঠুরিয়া, সব কাজেই ওরা
চারজন যেন অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে।
সাংকেতিক আওয়াজ যার
মস্তিষ্কপ্রসূত সে আর কেউ নয়, সে হচ্ছে নবা। সিন্টু যেদিন বলেছিল, “ বাবার রিটায়ারমেন্ট হওয়াতে যখন তখন বাড়ি থেকে বেরোনো যাচ্ছে না। বাইরে যাব, বললেই নানা প্রশ্নে জর্জরিত হতে হচ্ছে।“
সব শুনে নবা বলেছিল, “ ওসব নিয়ে ভাবিস না। যেদিন একটু সকাল-সকাল বেরোতে হবে, তার আগের দিন তোকে সাংকেতিক ডাকটা বলে দেব। ওটা
শুনলেই চুপিচুপি বেরিয়ে পড়বি।“
সবাই হাততালি দিয়ে উঠেছিল।
বুড়ো বলেছিল, “আমাদের জন্যও
ভাবিস।“ নবা চোখ টিপে হেসে উঠেছিল।
গরমকালে মাঠ জুড়ে ফুটবল খেলায়
ওরা চারজন এক টিমে থাকত। যদিও নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে ম্যাচ হত। কিন্তু যখন
আশেপাশের পাড়ার সঙ্গে ম্যাচ থাকত, তখন শুধুমাত্র নবা আর সিন্টু চান্স পেত। নবা ছিল ডিফেন্সের প্রাচীর। ওকে
ড্রিবল করে এগিয়ে যাওয়ার সাধ্য ছিল না কারও। তবে মাঝে মাঝে ডিফেন্স থেকে বল
নিয়ে সেন্টার অবধি এগিয়ে থ্রু বাড়াত সিন্টুর উদ্দেশে। অবশ্য সিন্টু বেশিরভাগ
সময় গোলের নিশানায় বল ঠেলে জয় এনেছে অনায়াসে। দুজনের বোঝাপড়া ছিল দেখার মতো।
মাঠের ভাষায় অনেকে ওদের নাম দিয়েছিল কৃশানু-বিকাশ।
ক্রিকেটে পারদর্শী ছিল বুড়ো।
শীতের হালকা রোদে সকাল থেকে শুরু হত খেলা। বুড়োর এলোপাথাড়ি ব্যাটে ছয়ের বন্যা
বইত। প্রতিপক্ষের বোলারদের নাজেহাল করে ছাড়ত সে। অনেকে ওর নাম দিয়েছিল ধোনি।
অসম্ভব ভাল স্পিন করত খোকন। মোটাসোটা চেহারার খোকন বল হাতে দু-তিন স্টেপ দৌড়ে
হাতের মোচড়ে বলটা ছুঁড়ে দিত। তারপর ব্যাটসম্যানের দিশাহারা অবস্থা দেখে হাতেগোনা
দর্শকরা বাহবা দিতেন খোকনকে। ওকে অনেকে মুরলীধরন বলেও ডাকত।
সন্ধে থেকে জমিয়ে আড্ডা হত
মোড়ের মাথায়। যাকে ওরা বলত ঠেক। ওরা চারজন ছাড়াও আরও দু-তিনজন যোগ দিত ওই
আড্ডায়। যেখানে বসে ওরা আড্ডা দিত, তার ঠিক পেছনের বাড়িটা ছিল শর্মিলাদের। মাঝে মাঝে ওই আড্ডা থেকে ওদের উঁচু
গলায় ব-আকারন্ত ভেসে আসত। রোজ কিছু না কিছু নিয়ে ঝগড়া লেগেই থাকত। নবার গলা ছিল
সব থেকে উঁচুতে।
এক সন্ধেবেলায় ওরা বসে রয়েছে
ঠেকে। আড্ডা জমতে না জমতেই শর্মিলার বাবা এসে হাজির। সবাই হকচকিয়ে যায়। নবা
বলেছিল,” কিছু বলবেন কাকু?”
শর্মিলার বাবা রেগে গিয়ে নবার
জামার কলার চেপে ধরে বলে, “ তোদের জ্বালায়
ঘরে বসা যায় না। কী পেয়েছিস তোরা? রোজ রোজ চিৎকার-চেঁচামেচি! সেইসঙ্গে তোদের মুখের যা ভাষা!”
নবা আস্তে আস্তে বলে, “ আগে জামার কলারটা ছাড়ুন, তারপর কথা বলব।“
শর্মিলার বাবা নবাকে ছেড়ে দেন।
রাগে ওনার হাত কাঁপতে থাকে।
এবার খোকন বলে ওঠে, “ যে জায়গায় আমরা আড্ডা দিই, সেটা তো আপনার নয়।“
নবা খোকনকে থামতে বলে। তারপর
কাকুর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে, “ ঠিক আছে, আপনার যখন আপত্তি, আমরা না হয় কাল থেকে অন্য জায়গায় আড্ডা দেব।“
শর্মিলার বাবা এবার শান্ত হন।
তারপর বলেন, “ তোরা যদি
চিৎকার-চেঁচামেচি না করিস, তাহলে আর আপত্তির
কী আছে! কিন্তু তোদের কথা শুনলে দু'কানে তুলো গুঁজতে হয়।“ বলেই শর্মিলার বাবা চলে গেলেন। সিন্টু, বুড়ো আর খোকন ঠেক থেকে উঠে বাড়ির দিকে হাঁটা দেয়।
ওদের এ রকম আচরণ দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় নবা। ওদের পেছন পেছন আসতে আসতে বলে, “তোরা এরকম করছিস কেন? আমি তো সবার কথা ভেবেই কথাগুলো বললাম।“
বুড়ো ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে, “ ওটা কি ওনার জায়গা, যে আমরা আড্ডা দেব না! তুই কী করে বললি!”
নবা জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে ফলতে
হাঁটছে ওদের পেছনে। তারপর আরও জোরে পা চালিয়ে তিনজনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ওরা
বাধ্য হয় দাঁড়িয়ে পড়তে। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নবা বলে, “ শর্মিলার বাবা যদি বাড়িতে গিয়ে জানায়, তখন তো সব ব্যাটা প্যাদানি খাবি। আপাতত ধামাচাপা
দেওয়ার জন্য দু-দিন কালীদার চায়ের দোকান হবে আমাদের ঠেক। আবার আমরা ফিরে আসব
পুরনো জায়গায়। ভগবানের দিব্যি দিয়ে বলছি!”
বাড়ি ফিরেও সিন্টু সন্ধের
ঘটনাটা মুছে ফেলতে পারেনি। রাত একটু গভীর হলে মাথাটা ঠান্ডা হয়েছে। এবার মনে
হচ্ছে, নবা ঠিক কথাই
বলেছে।
নতুন ঠেকের ঠিকানা হল কালীদার
চায়ের দোকান। সন্ধে হলেই ওরা হাজির হয় নতুন ঠেকে।
শ্রাবণের সকাল থেকে অবিরাম
বৃষ্টি পড়ছে। রাস্তায় তেমন লোকজনও নেই। সন্ধে হতেই বাড়ির পাশ দিয়ে আবার কেউ
শিস দিতে দিতে চলে যায়। ভূপেনবাবু শিসের ধ্বনি শুনে তড়িঘড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে
দরজার পাশে লম্বা একটা ছাতা রেখে আসেন। সিন্টু বেরোনোর সময় ছাতাটা নিয়ে নেয়।
সারাদিন বৃষ্টি হওয়ায় কালীদার
দোকান এমনিতেই ফাঁকা। ওরা চারজন জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। হঠাৎ উদ্বিগ্ন মেয়েলি গলা
ভেসে আসে। বাইরের দিকে তাকাতেই ছাতা মাথায় শর্মিলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
নবা উঠে এগিয়ে আসতেই কাঁপা কাঁপা গলায় শর্মিলা বলে, “ বাবা যেন কেমন করছে।“
কথা শুনে আর দাঁড়ায় না ওরা।
শর্মিলার বাবার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।
এখনই হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। বুড়ো আর দাঁড়ায় না। হারুকাকু সবজি বিক্রি করে
যে ভ্যান রিকশাটায়, সেটা কিছুক্ষণ
বাদে নিজে চালিয়ে নিয়ে আসে। ওই ভ্যানরিকশায় শর্মিলার বাবাকে নিয়ে যাওয়া হয়
হাসপাতালে। খোকন দৌড়ে বাড়ি থেকে সাইকেল নিয়ে আসে। সাইকেলে সিন্টুকে নিয়ে পৌঁছে
যায় হাসপাতালে। ইমারজেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হলে শর্মিলার বাবাকে ভরতি করে নেওয়া
হয়। ওরা উৎকন্ঠিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বারান্দায়। শর্মিলার মুখটা যেন ভেঙে
পড়ছে। নবা পাশে দাঁড়িয়ে বলে, “ অত চিন্তা করিস না। কাকু ভাল হয়ে যাবেন।“
শর্মিলা ফ্যালফ্যাল চোখে
তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। কিছুক্ষণ পরে ইমারজেন্সিতে ডাকা হয় ওদের। সামনে একজন
মধ্যবয়স্কা নার্স বসেছিলেন। ওরা গিয়ে দাঁড়াতেই বলেন,”তোমাদের পেশেন্ট এখন ভাল আছেন। প্রথমে যা যা ওষুধ
লেগেছে তা আমরা দিয়ে দিয়েছি।“
বলেই একটা প্রেসকিপশন বাড়িয়ে
দিয়ে আবার বলেন, ” এই ওষুধগুলো
এক্ষুণি এনে দাও। আর তোমরা রাতে এখানে থাকবে।“
তৎক্ষণাৎ প্রেসকিপশনটা নিয়ে
সিন্টু আর বুড়ো বেরিয়ে পড়ে ওষুধের দোকানের উদ্দেশে।
রাত তখন বেশ গভীর। বৃষ্টির ধারা
এখন কমে এসেছে। নবা বারান্দায় পায়চারি করতে থাকে। খোকন এগিয়ে এসে বলে, “ আমরা তো আছি।শর্মিলাকে বাড়ি দিয়ে আয়।“
নবা এবার শর্মিলাকে
বুঝিয়েসুঝিয়ে সাইকেলের পেছনের ক্যারিয়ারে বসিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেয়।খোকন থাকতে না পেরে ইমার্জেন্সির সামনে রাখা ট্রলিতে
গিয়ে শুয়ে পড়ে। বয়স্কা নার্স দেখতে পেয়ে বকাঝকা করেন। তারপর সারা রাত
হাসপাতালের বারান্দায় পায়চারি করে কাটিয়ে দেয় ওরা। সকাল হতেই ডাক্তারবাবু ডেকে
পাঠান। নবা গিয়ে কথা বলে আসে। তারপর ওরা ফিরে আসে হারুকাকুর ভ্যানে চেপে। নবা
সাইকেল চালিয়ে ফিরে সোজা চলে যায় শর্মিলাদের বাড়িতে। সিন্টু, খোকন, বুড়ো বসে থাকে ওদের পরিত্যক্ত ঠেকে।
*****************
এলাকার দ্রুত পরিবর্তন খুব চোখে
পড়ে। পুরোনো বাড়ি ভেঙে বহুতল উঠেছে এখানে-সেখানে। এখন হাতেগোনা কয়েকটি বাড়ি
অবশিষ্ট আছে। নবা আর সিন্টুদের বাড়ি এখনও প্রায় একই রকম আছে। খোকনদের বাড়িটা
বিক্রি হয়ে গেছে। সেখানে এখন বহুতল উঠেছে। বুড়োদের বাড়িটা লম্বায় বেড়েছে।
ওদের পরিবারে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাধ্য হয়েই বাড়ির উচ্চতা বেড়েছে।
“হ্যালো সিন্টু, খোকন বলছি। এই বিদেশবিভুঁইয়ে বসে তোদের কথা খুব মনে
পড়ে। হঠাৎ করেই তো চলে আসতে হল। তোদের সঙ্গে ঠিকমতো দেখাও করতে পারলাম না... “
এপারে ফোনটা কানে ধরে কোনও কথা
বলে না সিন্টু। এক সময় ফোনটা কেটে যায়। আজ আর বন্ধুদের সঙ্গে সেভাবে দেখাসাক্ষাৎ
হয় না।
নবা এখন পুরোদস্তুর সংসারী।
চাকরি আর বাড়ি, এটাই এখন ওর
রোজকার রুটিন। খোকন পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া ব্যবসায় ব্যস্ত থাকে সারা দিন। সিন্টু
একটা বহুতল নির্মাণ কোম্পানির অ্যাকাউন্টেন্ট। বুড়ো আইটি সেক্টরে উচ্চপদে কর্মরত। পরিত্যক্ত ঠেকটা
আজও আছে। শর্মিলা এখন নবার স্ত্রী। শর্মিলার বাবা ও মা চলে যাওয়ার পর নবা ওই
বাড়িটা প্রোমোটারকে দেওয়ায় বহুতল গড়ে ওঠে। সেখানেও নবা-শর্মিলার বড় একটা
ফ্ল্যাট আছে। নবা মাঝে মাঝে ওই ফ্ল্যাটে থাকে। চারিদিকে পরিবর্তন হলেও পরিত্যক্ত ঠেকের জায়গাটা
প্রায় একই রকম আছে। কালীদার চায়ের দোকান আর নেই। সিন্টু এখনও প্রায় সন্ধেবেলায় গিয়ে দাঁড়ায়
পরিত্যক্ত ঠেকের সামনে। বুক ভরে শ্বাস নেয়। একটা উদ্দীপনা টের পায়।
হঠাৎ কাঁধে একটা হাতের ছোঁয়া
পেতেই ঘুরে দ্যাখে নবা দাঁড়িয়ে। চোখে চোখ পড়তেই হেসে ওঠে ওরা। সিন্টু বলে, “ জানিস খোকন ফোন করেছিল!”
নবা ভারী গলায় বলে, “ কেমন আছে ও?”
সিন্টু অভিমান গলায় বলে,” ও একাই কথা বলে গেছে। আমি শুধু শুনেছি।“
আবহাওয়া মুহূর্তে ভারী হয়ে
ওঠায় নবা বলে, “ থাক, আর ওসব নিয়ে ভাবিস না। তবে আমরা একটা কাজ করতে পারি!”
সিন্টু এবার উৎসাহ নিয়ে বলে,” কী কাজ?”
নবা বিজ্ঞের মতো বলে, “ আজকাল হোয়াটসঅ্যাপে আমরা একটা গ্রুপ তৈরি করি।
প্রতিদিন দেখা না হলেও খোঁজখবর তো নেওয়া যাবে।“ সিন্টু জোরে জোরে
মাথা নেড়ে সায় দেয়।
নবা আবার বলে, “ চল, বুড়োকে ফোন করে আমাদের আইডিয়াটা বলি। তারপর দেখা যাক!”
হোয়্যাটসঅ্যাপে একটা গ্রুপ
তৈরি করে ফেলে বুড়ো। গ্রুপটার নাম দেয় ফ্রেন্ডস। আবার সেই বন্ধুত্বের ছোঁয়া
পেতে থাকে ওরা। কিছুদিন যেতে না যেতেই আরও কিছু বন্ধুকে অ্যাড করা হয় কিছু
বন্ধুকে। তবে ওদের চারজনের মধ্যে যা বোঝাপড়া ছিল, তার কণা মাত্র দেখা যেত না বাকিদের মধ্যে। ওইসব বন্ধুদের গ্রুপে জয়েন করতে
দেখে মেনে না নিলেও বুড়োকে আর কিছু বলেনি কেউ।
ওদের চারজনের স্মৃতি রোমন্থন
করাটাও দুরূহ হয়ে ওঠে। বিভিন্ন কমেন্টস ভেসে ওঠে ওদের ঘিরে। ইদানিং ওই গ্রুপ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখে সিন্টু। বেশ
কয়েক মাস পরে এক রাতে পর পর মেসেজ ঢুকতে থাকে ফ্রেন্ডস গ্রুপে। সিন্টু আর নিজেকে
ঠিক রাখতে পারে না। গ্রুপে ঢুকতেই চোখ কপালে ওঠে। একে অপরের বিরুদ্ধে কাদা
ছোড়াছুড়ি দেখে স্থবির হয়ে বসে থাকে সিন্টু। বন্ধুদের মধ্যে এত ক্ষোভ! যখন সবাই একসঙ্গে থাকতাম, তখন তো কিছুই বোঝা যায়নি! তবে এত দিন পর এসব কথাগুলো
কোথা থেকে আসছে! আসলে খোলামেলা মেলামেশায় যে ক্ষতগুলো চাপা পড়েছিল, আড়ালে তা যেন আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে!
ফোনটা বেজে ওঠে। ওপার থেকে নবা
বলে,” চল সিন্টু, আমরা আবার ওই ঠেকে যাই...”
বলতে বলতে গলা ধরে আসে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন