----'খুকু, ত্বরায় এক ঘটি জল লইয়া আয়।উঠানডা ধুলায় ভর্তি
হইয়া গ্যাছে গা'। এই সাত সকালে ঠাকুরমা উঠোন ঝাট দিতে লেগেছেন। তা, তার কথা অমান্যি করে এ বাড়িতে এমন সাধ্যি কার? নীতা পড়া ফেলে তাড়াতাড়ি এক ঘটি জল নিয়ে উঠোনে
ছিটোতে লাগল। সব কাজে তারই ডাক পড়ে! তারও তো কলেজ যেতে হবে। প্রাকটিক্যাল খাতার
লেখাটা শেষ করে সব গুছিয়ে নিতে হবে। মা রান্নাঘরে ব্যস্ত।বাড়ি থেকে তিনজন বেরোবে, তাদের খাবার, টিফিন তৈরি করতে হবে। ক্লাস নাইনে পড়া ছোট ভাই বাবলু তো রাজা, উল্টে তার কাজ করে
দিতে হয়। বাবা শৈলেন রায়চৌধুরি বারাসাতের হাইস্কুলের মাষ্টারমশাই।
সারাজীবন ভাড়া বাড়িতে থেকে এখন যোগাযোগ হওয়াতে ধান্যকুড়িয়া বসিরহাটের মাঝে এই কপালি গ্রামে বেশ কিছুটা জায়গা জমি নিয়ে
তৈরি বাড়ি বেশ সস্তায় দুই ভাইয়ের থেকে কিনেছেন। তারা সোনার কারিগর, বাইরের প্রদেশে কাজে যাবে। বাবা,ঠাকুরমা এতেই খুশি। কিছুটা হেটে বড় রাস্তায় গেলে এক
বাসে বারাসাত। বাবা বাড়িঘরদুয়ার ঠিকঠাক মেরামত করে সংস্কার করে নিয়েছেন।
ঠাকুরমা তো উঠোন, গাছপালা এসব
নিয়েই থাকেন। তাদের দেশের বাড়ি নাকি এমনই ছিল। ঠাকুরমাকে শুধু ধরিয়ে দিলেই হল।
গল্পের মত তিনি বলতে থাকবেন তাদের ফরিদপুরের গোপালগঞ্জে নীলখি গ্রামের কথা। পাশে
আড়িয়ল খাঁ নদী। বড় পুকুর,গরুবাছুর, আম কাঠাল
সুপারিবনের কথা। সাতচল্লিশের দেশভাগেও তারা রয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু একাত্তরের
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় খানসেনারা, রাজাকারদের সাহায্যে গ্রামে ঢুকে মানুষজনকে কচুকাটা করতে লাগল। ঠাকুর্দা
কোনক্রমে প্রাণটা বাঁচিয়ে ঠাকুরমা, বাবাকে সঙ্গে নিয়ে এপার বাংলায় চলে এসেছিলেন। ঠাকুরমা লুকিয়ে শুধু তার
গয়নার বাক্সটা আনতে পেরেছিলেন। সেই গয়না একটা একটা করে বিক্রী করে বাবার
পড়াশোনার ব্যবস্থা হয়েছিল। ঠাকুর্দা সে ধাক্কা সামলাতে পারেন নি। কম বয়সে হার্ট
এট্যাকে মারা যান। নীতার প্রথম প্রথম মন বসত না। দুরে দুরে বাড়ি,জলাশয়, ভেড়ি,ঝোপঝাড় ভাঙা দেউল এইসব। ভাইটাতো ঘ্যান ঘ্যান করত।
এখন মোটামুটি ধাতস্থ হয়ে সকাল সকাল ভাই বোনে বারাসাতের স্কুল কলেজে যায়। নীতা
হায়ার সেকেন্ডারিতে ভাল রেজাল্ট করেছিল।ইচ্ছে ছিল কোলকাতার কলেজে পড়ার। কিন্তু ঐ
যে ঠাকুরমা 'ভেটো' প্রয়োগ করলেন।--'কাম নাই দুরের কলেজে গিয়া,ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে ম্যাঘ দেইখ্যা ভয় পাই'।
সেদিন রাতে খাবার টেবিলে মা শুকনো মুখে বললেন, 'আর তো পারা যাচ্ছে না, এক হাতে রান্নাবান্না,বাসন মাজা, কাপড় কাঁচা, আমারও তো একটু বিশ্রাম চাই। কালই আমি পাড়ায় বেরোব, দেখি একটা কাজের লোক পাই কি না'। ঠিকই, বারাসাতের ভাড়াবাড়িতে তাদের বরাবর ঠিকে কাজের লোক
ছিল। ঠাকুরমা বললেন, 'রও,মাইয়াছেলে একা একা বাইর অইতে হইবো না, আমি বুড়ামানুষ, ঠিক একটা জোগাড় কইরা আনুম অনে'।
পরের দুদিন শনি
রবি ছুটি,নীতা একটু দেরি
করে উঠেছে,দেখে উঠোনে ঐ
দুরের দিকে একটা জটলা। এগিয়ে দেখে বাড়ির লোকজন, ঠাকুরমা, এমনকি মা ও যেন
কাকে ঘিরে কথাবার্তা বলছে। কাছে গিয়ে দেখে লাল কল্কাপেড়ে শাড়ি পরনে, মাথায় ধ্যাবরা সিঁদুর দেওয়া একজন বেশ সুশ্রী চেহারার
মহিলা,হাটুর মধ্যে মাথা
গুঁজে বসে রয়েছে। তার মাথার চুল উস্কোখুস্কো, বিষাদক্লিষ্ট মুখে চোখের জল শুকিয়ে যাবার দাগ। ঠাকুরমা তাকে কত বলছেন, 'অ লালবউ,তুমি কোথার থিকা আইছ, কোথায় যাইবা, তোমার সঙ্গে কেডা আছে, কিছু খাইবা?' সে কোন উত্তর
দেয় না, শুধু মাঝে মাঝে
ঠাকুরমার দিকে মুখ তুলে তাকায়। বেশ কাটা কাটা চোখ নাক মুখ, চেহারায় সম্পন্ন পরিবারের গৃহবধুর ছাপ, কিন্তু কেমন যেন শোকজর্জর অবস্থা। ঠাকুরমা মাকে বললেন, 'বুঝলা বৌমা, এ কথা কইতে পারে না, বোবা, তুমি এরে এক গেলাস গরম দুুধ খাইত দাও তো!' ঠিকই, দুধ খেয়ে সে লালবউ যেন কিছুটা চাঙ্গা হয়ে উঠল। কথাবার্তা নেই, হটাৎ কোনা থেকে বড় ঝাঁটা টা তুলে নিয়ে, কলতলা থেকে মগে করে জল ছিটিয়ে সারা উঠোন পরিস্কার
করে ঝাঁট দিয়ে দিল। কলতলায় ডাই করে রাখা বাসনগুলো ঝকঝকে করে মেজে দাওয়ায় উপুড়
করে রাখল। ঠাকুরমা বললেন, 'এ গেরস্ত বাড়ির বউ, কাজের গোছ আছে, কপালের ফ্যারে
হ্যাথায় আইয়া পড়ছে'। এরপর মায়ের কাপড়ের দিকে আঙুল দিয়ে কিছু দেখায়। ঠাকুরমা বলেন, 'কাপড় চাও?' সে মাথা নেড়ে সবার জামাকাপড় দেখায়। কিছু ময়লা জামাকাপড় দেওয়া হল। সে
কলতলায় বসে সবগুলো কেচে উঠোনের দড়িতে মেলে দিল। উঠোনে বসেই সবজি কেটে ধুয়ে দিল।
সে ভিতরে ঢুকবে না। সে বেলাটা কাজের মধ্যেই গেল। দুপুরে মা যত্ন করে দাওয়ার পাশে
উঠোনে তাকে পদ্মপাতায় ভাত তরকারি মাছ এইসব খেতে দিল। সে কিন্তু তেমন কিছুই খেল না। মাকে হাত ছোট মুঠি করে বোঝাল যে সে কম খায়। সারা দুপুর
নিজের কাপড়ের আঁচল পেতে শুয়ে রইল। বিকেলে দুয়ারে জল ছড়া দিল। কিন্তু মা যখন
সন্ধ্যা দিতে তুলসীমঞ্চে এল, ঐ লাল বউকে কোথাও দেখা গেল না। বাবা বললেন, 'যেমন এসেছিল তেমন চলে গেল।' ঠাকুরমা বললেন,' আহা, বড্ড ভালা ছিল গো বউডা'। সেদিন নিশুতি রাতে দুরে ভাঙা দেউলের ঝোপঝাড়ের দিক থেকে বুকফাটা আর্তনাদের মত চিৎকার
করে কোন মহিলার কঁকিয়ে কান্নার
শব্দ শোনা গেল। কেঁদেই চলেছে। কোন মানুষ এতক্ষণ ধরে কি কাঁদতে পারে? যেন কোন প্রিয়জন সদ্য মারা গেছে! না কি কোন অশরীরী
আত্মা?
পরদিন সকালে
আমাদের অবাক করে দিয়ে লাল বউ হাতে এক থাবা গোবর নিয়ে ঢুকল। কাউকে কিছু বলার
অবকাশ না দিয়ে মাটির উঠোনে গোবর লেপা চলল। তারপর কলতলায় বাসন মাজতে লাগল যেন
এমনটাই চিরাচরিত ভাবে হবার কথা ছিল। এ কি কাল রাতে অমন বুকফাটা কান্না কেঁদেছে? কিন্তু চোখ খটখটে শুকনো,কান্নার লেশমাত্র নেই। শুধু গন্ড বেয়ে শুকনো কান্নার
জলের দাগ। এ অঞ্চলে বাওড়, ভেড়ি বেশি, সেখান থেকে মা পদ্মপাতা তুলে আনলো লালবউকে খেতে দেবে
বলে। ও মা, কোথা থেকে তার
নিজের কাঁসার মাজা থালা গ্লাস বের করল। মা তাতেই খেতে দিল। ঠাকুরমা বললেন,'দ্যাখলা বৌমা, আমি কই নাই, ও গেরস্ত বাড়ির
বউ'! দুপুরে কিছুক্ষন
নিজের আঁচল পেতে শুয়ে কোথা থেকে এনে পুরোনো হলদে হয়ে যাওয়া খবরের কাগজ পড়তে থাকে। দেখার কোন উপায় নেই, সে কাউকে কাছ ঘেষতে দেয় না নিজেও কারো কাছাকাছি যায়
না। এমনি করে মাস দুয়েক চলল। তবে রাতে কান্নার হাহাকার চিৎকারে কখনও কখনও ঘুম
ভেঙে যেত। কে ঐ দুরে ভাঙা দেউলে কাঁদে? লালবউ নয় তো? বিকেলে সে যে
কোথায় চলে যেত বোঝা যায় না। এর মধ্যে ঠাকুরমা একদিন বললেন,'রোজ এক শাড়ি পইরা আহ,নোংরা হইছে,আর একখান শাড়ি লইবা? সে মাথা নাড়ে। নেবে না। পরদিন ঐ শাড়িটাই বেশ কাঁচা পরিস্কার দেখাল। কোথায়
কাচলো কে জানে! ছোট ভাই বাবলু
লালমাসি বলে ছুটির দিনে তার সাথে গল্প করে। বোবা লালবউ শুধু তাকিয়ে থাকে। একদিন ঠাকুরমা বললেন,' দেখ, লালবউ, কিছু মায়না তোমারে লইতেই অইবো'। সে জোরে জোরে
মাথা নাড়ে। নেবে না। তখন তার জন্য একটা নতুন লাল তাঁতের শাড়ি কেনা হল। পাট করা
শাড়িটা তার কাছে রাখা হল। সে নিয়ে গেল কিন্তু পরদিন আবার সে তার নিজের লাল
কল্কাপেড়ে শাড়িটাই পরে এল। রাতে খাবার সময় একদিন মা বলল,'ঐ যে দুরে ভাঙা দেউলের দিক থেকে রাতে বীভৎস অমানুষী
কান্নার শব্দ শোনা যায় সেটা লালবউ এর নয় তো? কারন ও আসার দিন থেকেই ঐ দিক থেকে ঐ রকম কঁকিয়ে কান্নার আওয়াজ শোনা
যাচ্ছে'। পরদিন বিকেলবেলা ঠাকুরমা তক্কে তক্কে থেকে লালবউ কোথায় যায় দেখার জন্য পিছু
নিলেন কিন্তু সে বেরিয়ে কোথায় যে মিলিয়ে গেল ঠাকুরমা ঠাহর করতে পারলেন না। দুরে
দুরে প্রতিবেশীদের বাড়িতে যে খোঁজ নেবেন, এখানে বাড়ির চেয়ে ভেড়ি বেশি। এই ভর সন্ধ্যেবেলায় জলা পেরিয়ে আর সেদিকে
গেলেন না। তা ক'দিন পরে কয়েকজন
প্রতিবেশী মহিলা বেলাবেলি তাদের বাড়িতে এল। ঐ যে রাতে কান্নার হাহাকার শোনা যায়, আগেও মাঝে মাঝে শোনা যেত এখন রোজ শোনা যায়, অপদেবতা না কি, পাড়ায় একটা নারায়ণ পুজো করলে হয়। তারা শুনেছে এবাড়িতে না কি একটা বউ কাজ
করে কিন্তু এ গরিবানা মত চলা পাড়ায় তো কোন ঠিকে কাজ করার লোক নেই। সবাই যার যার
কাজ নিজে করে নেয়। তারা যতক্ষণ ছিল লালবউকে দেখা গেল না। চলে যাবার পরে কোথা থেকে
উদয় হল।
কিছুদিন পরে এক রবিবার বেলা এগারোটা নাগাদ সেই দুই ভাই এল যারা এই বাড়ি তাদের কাছে বিক্রি করে গেছে।
বারান্দার কোনার দিকের চেয়ার টেবিলে বসে বাবার সাথে কথা বলছে। বাবা জিজ্ঞেস করাতে
জানালো যে তারা সোনার গয়না তৈরির কারিগর, তাদের কাজ ভালই চলছে তামিলনাড়ুতে। সেখানেই থাকে তারা। জীবনে অনেক ঘাত
প্রতিঘাত পেরিয়ে এই বয়সে পৌঁছেছে, তাদের আর বিয়ে করে ওঠা হয় নি। মা এসে একসময় তাদের জলখাবার, চা দিয়ে গেল। ঠাকুরমাও দাড়িয়ে তাদের কথা শুনছেন। তারা জানতে চাইল এ বাড়িতে
সবাই কেমন আছেন। বাবা বললেন
বাড়িতে তো কোন অসুবিধে নেই তবে রাতে দুরের ঐ ভাঙা দেউল থেকে রোজ বুকফাটা
মড়াকান্নার মত শোনা যায়। শুনে লোকদুটোর মুখ কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেল। সামলে নিয়ে
তারা বলল বাড়িঘরদুয়ার তো বেশ তকতকে রেখেছেন। তখন ঠাকুরমা বললেন এ সবই লাল বউ এর
কাজ।---'ঐ দেখ উঠান
লেইপ্যা রাখছে , বাসনকোসন ঝকঝক
করত্যাছে'। কিন্তু কাছেপিঠে কোথাও লালবউকে দেখা গেল না। সে কে, জানতে চাইলে
প্রথম দিন থেকে ফর্সা টুকটুকে লাল শাড়ি পড়া মাথায় ধ্যাবড়া সিঁদুর দেওয়া লালবউ এর ইতিবৃত্ত ঠাকুরমা
উজাড় করে শোনালেন। শুনতে শুনতে দুই ভাইয়ের চোখ দিয়ে অবিরল ধারায় জল গড়াতে
লাগল। তারা একেবারে ঠাকুরমার পায়ে পড়ে গেল। -------'আমাদের খুব অন্যায় হয়ে গেছে,আমাদের মাফ করে দেন'।----'ব্যাপারখান কি?'- ঠাকুরমা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন। তারা চোখের জলে
জানালো তারা বেশ সম্পন্ন
গৃহস্থই ছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় এক রাতে খানসেনারা নোয়াখালিতে তাদের বাড়ি, পাশে পিসির বাড়ির সবাইকে খুন করে। তাদের বাবা মা,পিসির স্বামী,ছেলে সব খুন হয়ে
যায়। পিসি আলমারির পেছনে লুকিয়ে প্রাণে রক্ষা পায়। তারা তখন খুব ছোট। কচুবন ঝোপঝাড়ের মধ্যে লুকিয়েছিল।
পরদিন সকালে গ্রামের বেঁচে যাওয়া মানুষজনের সাথে পিসির হাত ধরে বর্ডার পেরিয়ে
এপারে হাসনাবাদের রিফিউজি ক্যাম্পে ঠাই পায়। ঐ গ্রামের একজন দয়ালু সোনার বেনের
সাথে পরিচয় হওয়াতে তিনি তাদের তিনজনকে আশ্রয় দেন ও দুই ভাইকে ঐ সোনার কারিগরির
কাজ শেখান। পরে কোলকাতায় গিয়ে কাজ করে তারা বেশ কিছু পয়সা জমায়। তখন ঐ
আশ্রয়দাতা ভদ্রলোক হাসনাবাদ থেকে কিছুটা দুরে বসিরহাটের কাছে এই জায়গাটার খোঁজ
পেয়ে দুই ভাই যাতে কিনতে পারে ও বাড়ি তৈরি করতে পারে তার সহায়তা করেন। পিসিমা উঠোন লেপে,
বাসন মেজে,ঘরদোর গুছিয়ে,রান্না করে খাইয়ে তাদের আগলে রাখতেন। কিন্তু নিজে খেতেন খুব কম, কখনও খেতেনই না। তিনি নোয়াখালীর বাড়িতে আলমারীর পিছনে লুকিয়ে নিজের স্বামী, ছেলেকে খুন হতে দেখেছিলেন। আতঙ্কে কেঁপে নিজের মুখে
হাত চাপা দিয়েছিলেন। এই ঘটনা মন থেকে মেনে নিতে পারতেন না। খুব কম কথা বলতেন।
বিধবার পোষাক তো পরেনইনি, উল্টে লাল শাড়ি
পরতেন আর মাথাভর্তি সিঁদুর। রাতে কঁকিয়ে কাদতেন। না খেয়ে খেয়ে শীর্ণকায় হয়ে এই বাড়ি বিক্রির কিছুদিন আগে
তিনি মারা যান। দুই ভাই নিজেরা গিয়ে শ্মশানে তাকে দাহ করে এসেছে। ক'দিন পর থেকে ঐ ভাঙা দেউলের দিক থেকে মাঝে মাঝে তাদের
পিসিমার গলার অমানুষী চিৎকৃত হাহাকার ভেসে আসত। থাকতে না পেরে বাড়ি বিক্রি করে দুরদেশে কাজ করতে চলে যায়।
ইদানীং প্রায়ই তারা দুজনেই লাল শাড়ি পরা পিসিকে স্বপ্নে দেখছে যে তিনি অঝোরে
কেঁদে চলেছেন। বলতে বলতে দুই
ভাই হাউ হাউ করে
কাঁদতে লাগল। বাবার হাতে পায়ে ধরে বলতে লাগল, 'চলেন কর্তা, পিসির জন্য
গয়ায় পিন্ডি দিয়ে আসি। এ ভিটে এখন আপনার, আপনিও আমাদের সাথে একটু জল দিয়েন'। তাদের কাকুতি মিনতিতে বাবা রাজি হয়ে সেদিনই তাদের
সাথে গয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। পিন্ডি দিয়ে ফিরেও এলেন। কি আশ্চর্য্য! দুই ভাই আসার পর থেকে লালবউ এর আর
দেখা নেই। সেদিন দুপুরে খেতেও এল না। আর কোনদিনই এল না। রাতে কান্নাও আর শোনা গেল
না। বারান্দার এক দিকে সেই নতুন শাড়িটা পাট করা রয়েছে দেখা গেল। তবে কি সত্যিই ঐ
লালবউ ঐ দু'ভাইয়ের মরা পিসি
ছিল? ঠাকুরমা বললেন,'বড্ড মায়া পইড়া গেছিল। যাউক, অর আত্মা শান্তি পাক'।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন