অস্টিওপোরোসিস নিঃশব্দ ঘাতক - সুকৃতি দাস


 

হাঁটার সময় ব্যাথা। কোমরে অসহ্য যন্ত্রণা। হাঁটুতে ব্যাথা। এইসব নানাবিধ সমস্যা বয়স বাড়ার সাথেই সাথেই বাড়তে থাকে প্রায় ৬১ মিলিয়ন ভারতীয় এই সমস্যায় জর্জরিত তার মধ্যে ৮০% রোগী হলেন মহিলা।

অস্টিওপোরোসিস কি ?

আমাদের শরীরের হাড় হল একটি সজীব টিস্যু। এইজন্য পুরাতন হাড় ভঙ্গুর হয়ে গেলে নতুন হাড় সেই স্থান গ্রহণ করে এর ফলে হাড় শক্ত থাকে এবং আমাদের শরীরের ভার বহন করতে সক্ষম হয় অস্টিওপোরোসিস তখন দেখা যায় যখন পুরানো হাড়ের স্থানে নতুন হাড়ের উদ্ভব হয় না। এরফলে হাড় ক্রমশ দূর্বল ও ভঙ্গুর হতে শুরু করে।

 

কেন অস্টিওপোরোসিস দেখা যায়?

হাড়ের ভিতরের অংশ স্পঞ্জের মতো হয়। এটি ট্রাবিকিউলার বোন(trabecular bone) নামে পরিচিতএর বাইরে অংশটি শক্ত আস্তরণে আচ্ছাদিত থাকে। এই শক্ত আস্তরণকে কর্টিকাল বোন (cortical bone) বলে।

 

অস্টিওপোরোসিসের সময় হাড়ের ভিতরে স্পঞ্জের মতো অংশে ছিদ্রের সংখ্যা ও আকার ক্রমশ বাড়তে শুরু করে এরফলে হাড় ভেতর থেকে অনেক বেশি কমজোরী হয়ে যায় হাড় গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে রক্ষা করে এবং ক্যালসিয়াম ও অনান্য মিনারেলসকে সংরক্ষণ করে রাখে। শরীরের কখনো ক্যালসিয়াম প্রয়োজন হলে শরীর হাড়কে ক্ষয় করে ক্যালসিয়াম সংগ্রহ করেএরপর পুনরায় রিমডেলিং -এর মাধ্যমে হাড় আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে।

তিরিশ বছর বয়স পর্যন্ত হাড়ের ক্ষয় থেকে হাড় গঠনের হাড় বেশি থাকে ৩৫ বছরের পর হাড়ের ক্ষয়ের হার বেড়ে যায়‌ এবং অস্টিওপোরোসিস থাকলে এই ক্ষয়ের হার বহুমাত্রায় বৃদ্ধি পায়



অস্টিওপোরোসিসের লক্ষণঃ


  • অস্টিওপোরোসিসের সেই অর্থে কোন নির্দিষ্ট লক্ষণ নেই তাই একে অনেকসময় বলা হয় নীরব ঘাতক। তবে এই নিম্নলিখিত লক্ষণের বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত – 
  • উচ্চতার হঠাৎ অবনমন। এক ইঞ্চি উচ্চতা কমে যাওয়া।
  • সামনের দিকে অথবা পিছনের দিকে ঝুঁকে পড়া।
  • শ্বাসের সমস্যা। কারণ অস্টিওপোরোসিসের ফলে অনেকসময় ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যায়।
  • খুব সহজেই হাড়ে চিড় ধরা বা ভেঙে যাওয়া
  • কোমরে ব্যাথা


মহিলারা কেন অস্টিওপোরোসিসে বেশি আক্রান্ত হন ?

ঋতুনিবৃত্তির পর ইস্ট্রোজেন হরমোনের অভাবে হাড়ের ক্ষয়ের হার বহুগুণ বেড়ে যায় মূলত হাড়ের ক্যালসিয়াম শোষণের হার কমে যাওয়ায় এইপ্রকার ঘটনা দেখতে পাওয়া যায়


কাদের অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক

  • কম ওজন ও রোগা হলে অনেকসময় এর সম্ভাবনা বেড়ে যায় ওজন কম হওয়ার জন্য অনেক সময় হাড়ের ক্ষয় খুব দ্রুত হয়। 
  • রিউমাটয়েড আর্থারাইটিসে আক্রান্ত হলে অস্টিওপোরোসিসের সম্ভাবনা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়
  • পরিবারে পূর্বে কেউ অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত হলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় বংশানুক্রমিক হাড়ের গঠন ও আকার এই রোগের কারণ হিসাবে মনে করা হয়।
  • ধূমপান ও মদ্যপানের ফলে হরমোনের তারতম্য ঘটে এরফলে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে
  • কর্টিকোস্টেরয়েড, প্রোটোন পাম্প ইনহিবিটর, অ্যান্টিএপিলেপটিক ওষুধ দীর্ঘকাল ধরে সেবন করলে এর সম্ভাবনা বেড়ে যায়।  


হাড়কে শক্ত রাখার উপায় 

  • ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে কম ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত দ্রব্য, পাতাযুক্ত সবুজ সবজি, মাছ, শস্যদানাতে প্রভূত পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার ও ওষুধ খেতে হবে   
  • নিয়মিত যোগাভ্যাস, হাঁটা, জগিং ইত্যাদি হাড় আরো শক্ত করে তোলে।
  • ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন