রঙের উৎসবে ত্বক ও চুলের বিশেষ পরিচর্যা - পৌষালী ব্যানার্জী

  


দোলযাত্রা, অর্থাৎ রঙের উৎসব। ছোট বড় সকলের মনে রঙের ছোঁয়ার সঙ্গে খুশির পরশ যেন উৎসবের আনন্দকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলে। দখিনা বাতাস এসে কানে কানে বলে যায়, বসন্ত এসে গেছে। লাল নীল সবুজ হলুদ গোলাপী কমলা ইত্যাদি নানাবিধ শুকনো আবির থেকে শুরু করে রঙিন জলরঙে কাকভেজা হয়ে যাওয়া, দোলের মজা এমনই। কিন্তু এই মজা আনন্দের মধ্যেও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভুলে গেলে চলবে না। সেটি হলো চোখ, চুল ও ত্বককে এইসব রঙ থেকে সুরক্ষিত রাখা। এর মধ্যে উপস্থিত বিষাক্ত রাসায়নিক চুলে ও ত্বকে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এগুলির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দূরে থাকার জন্য রইল কয়েকটি প্রয়োজনীয় পরামর্শ

 

১) আমরা ছোট থেকে শুনে আসছি রঙ খেলতে যাওয়ার আগে মুখে গলায় হাতে পায়ে ভালো করে নারকেল তেল মেখে নিতে হয়। এর ফলে অতি সহজে রঙ তুলে ফেলা যায়। হ্যাঁ, এটা ঠিক। তবে রোদের যা তেজ! সেক্ষেত্রে তেল মেখে হোলি খেলতে গেলে ত্বকে ট্যান পড়ে যেতে পারে। তার জন্য ওয়াটারপ্রুফ সানস্ক্রিনের সঙ্গে ময়শ্চরাইজার মিশিয়ে ত্বকে খুব ভালো করে মাখতে হবে এবং ঠোঁটে লাগাতে হবে পেট্রোলিয়াম জেলি। এরকম করলে ত্বক পিচ্ছিল হয়ে থাকবে এবং পরবর্তীতে রঙ সহজে উঠে যাবে

 

২) হোলি খেলার জন্য বাজারে ভিন্ন মানের ভিন্ন মূল্যের রঙ পাওয়া যায় যেগুলির মধ্যে রাসায়নিক যুক্ত সিন্থেটিক রঙের রমরমা বেশি। এগুলির দামও অপেক্ষাকৃত কম। কিন্তু নিজের ত্বককে বাঁচাতে হলে এইধরণের রঙগুলি একেবারেই ব্যবহার করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে বেছে নিতে হবে প্রাকৃতিক রঙ বা হারবাল রঙ। কারণ প্রাকৃতিক রঙ ধুয়ে ফেলা যতটা সহজ, ঠিক ততটাই কঠিন সিন্থেটিক রঙ ধোওয়া

 

৩) দোলযাত্রার অন্তত তিন-চারদিন আগে থেকে ওয়াক্সিং, থ্রেডিং, ফেশিয়াল বা অন্য কোনও স্কিন ট্রিটমেন্ট বন্ধ রাখা উচিত। এতে ত্বকের পোরগুলি উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং হোলির রঙ ত্বকের ভিতরের স্তরে পৌঁছে যায়। ফুলহাতা জামা পরে রঙ খেলা সবথেকে বেশি সুরক্ষা দেয়

 

৪) চুলের ক্ষেত্রে দোল খেলতে যাওয়ার আগে কখনও শ্যাম্পু করা উচিত নয়। এতে স্ক্যাল্প শুষ্ক হয়ে পড়ে। চুলে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল মেখে নিয়ে দোলে অংশগ্রহণ করাই শ্রেয়। পরে শ্যাম্পু করে নিলেই রঙ চলে যাবে। আর অবশ্যই চুল বেঁধে দোল খেলা উচিত, চুল খোলা রেখে কখনই নয়। স্কার্ফ দিয়ে চুল ঢেকে রাখলে আরো ভালো

 

৫) দোল খেলার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রঙ তুলতে শুরু করা বাঞ্ছনীয়। রঙ শুকিয়ে যাওয়ার আগেই ধুয়ে ফেলতে পারলে ভালো হয়। রঙ ওঠানোর জন্য হালকা গরম জল ব্যবহার করতে হবে। মুখ এবং গা হাত পা থেকে রঙ তুলতে সাবান একেবারেই ব্যবহার করা যাবে না। এইসব রঙ এমনিতেই ত্বককে শুষ্ক করে দেয়। সাবানে উপস্থিত ক্ষার এই শুষ্কতাকে আরো প্রকট করে তোলে। এক্ষেত্রে ফেসিয়াল ক্লিনজার অথবা বেবি অয়েল ব্যবহার করতে হবে এবং ঘষে ঘষে রঙ তোলা যাবে না। আলতো হাতে ম্যাসাজের মাধ্যমে রঙ তুলে ফেলতে হবে

 

৬) মুখ থেকে রঙ তোলার জন্য স্ক্রাবিং অথবা এক্সফোলিয়েটিং একেবারেই করা যাবে না। এসবের পরিবর্তে ফেসমাস্ক লাগালে ভালো লাগবে। ত্বকে কোনরকম জ্বালাভাব হবে না, মুখেও উজ্জ্বলতা আসবে

 

৭) যাঁদের সংবেদনশীল ত্বক, তাঁদের যতসম্ভব দ্রুত রঙ পরিষ্কার করে ফেলা উচিত। নয়তো অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রোদ লাগলে সমস্যা আরও বাড়ে। রঙ খেলতে গিয়ে যদি শরীরের কোনও অংশে চুলকানি বা জ্বালা অনুভূত হয় বা ত্বক লাল হয়ে ওঠে তাহলে শীঘ্রই সেই স্থানটিকে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলা দরকার। এর ফলে জ্বালাভাব খুব তাড়াতাড়ি কমে যাবে। এক্ষেত্রে ত্বকে ডেটল বা স্যাভলন জাতীয় লিক্যুইড না লাগিয়ে ক্যালামাইন জাতীয় সুদিং লোশন লাগানা অপেক্ষাকৃত শ্রেয়। কোনরকম অস্বস্তি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন