মূত্রনালীর সংক্রমণ -শ্বেতা মিত্র

 

 

ইদানিং কালে ব্যস্ত জীবনে মূত্রনালীর সংক্রমণ জনিত সমস্যা নিয়ে অনেকেই ভুগছেন। মহিলাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি হলেও পুরুষরাও কিন্তু বাদ থাকে না। রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে সেখান থেকে এই ধরণের সংক্রমণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়মূত্রনালির সংক্রমণ ( urinary tract infection) বা ইউটিআই (UTI) হল মূত্রনালির এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াঘটিত সংক্রমণ  এর ফলে যখন মূত্রনালির নিম্নাংশ আক্রান্ত হয়, তখন তাকে মূত্রথলির সংক্রমণ ( সিস্টাইটিস বা Cystitis) বলে আর যখন এর ফলে মূত্রনালির ঊর্ধ্বাংশ আক্রান্ত হয়, তখন তাকে কিডনির সংক্রমণ ( পাইলোনেফ্রাইটিস বা pyelonephritis) বলেমূত্রনালির সংক্রমণের প্রধান কারণ এশেরিকিয়া কোলাই (Escherichia coli) হলেও, কখনো কখনো অন্যান্য  ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের কারণেও এটি হতে পারেযদিও এই সংক্রমণ প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা, কিন্তু অনেক সময় শিশুদেরও এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।


মূত্রনালীর সংক্রমণের লক্ষণঃ 




মূত্রনালীর সংক্রমণের লক্ষণগুলো হল —  


  • প্রস্রাবের সময়ে ব্যাথা অথবা জ্বালা হওয়া 
  • স্বাভাবিকের চেয়ে ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ অনুভূত হওয়া  
  • অস্বাভাবিক কটুগন্ধযুক্ত এবং ঘোলাটে প্রস্রাব হওয়া 
  • হঠাৎ প্রস্রাবের বেগ আসা এবং বেগ ধরে রাখতে সমস্যা হওয়া 
  • তলপেটে তীব্র ব্যথা হওয়া 
  • কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে প্রস্রাবের সাথে রক্তপাত হওয়া 
  • কোমরের পেছনে পাঁজরের ঠিক নিচের অংশে ব্যথা হওয়া 
  • জ্বর হওয়া এবং কখনও কখনও কাঁপুনি হওয়া 
  • ক্লান্তি ও বমি বমি লাগা

 

শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণ লক্ষণগুলোর পাশাপাশি ভিন্ন ধরনের কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন-

  • মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া 
  • ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেওয়া 
  • তীব্র জ্বর হওয়া 
  • ঘন ঘন প্রস্রাব করা কিংবা হঠাৎ বিছানায় প্ৰস্রাব করতে শুরু করা 
  • বমি হওয়া

 

মূত্রনালীর সংক্রমণের কারণঃ  




  • সাধারণত মলে থাকা বিভিন্ন জীবাণু মূত্রতন্ত্রে প্রবেশ করে মূত্রনালীর সংক্রমণ ঘটায়। প্রস্রাবের রাস্তা বা মূত্রনালী দিয়ে এসব জীবাণু মূত্রতন্ত্রে প্রবেশ করে। 
  • নারী-পুরুষভেদে সবারই মূত্রনালীর সংক্রমণ হতে পারে। তবে নারীদের মধ্যে এই রোগের সংক্ৰমণ হওয়ার প্রবণতা বেশি। এর কারণ হলো, নারীদের মূত্রনালী পুরুষদের মূত্রনালীর তুলনায় দৈর্ঘ্যে অনেক ছোটো ও উন্মুক্ত। 
  • এ ছাড়া নারীদের মূত্রনালী পায়ুপথের খুব কাছাকাছি অবস্থিত। ফলে ব্যাকটেরিয়া পায়ুপথ থেকে মূত্রনালীতে প্রবেশ করে প্রস্রাবের সংক্ৰমণ ঘটানোর সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। 


যেসব কারণে মূত্রনালীর সংক্রমণ সম্ভাবনা বেড়ে যায়—  

  • পর্যাপ্ত জল পান না করলে 
  • মূত্রতন্ত্রের স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে এমন রোগ হলে। যেমন: কিডনিতে পাথর হওয়া।যৌনাঙ্গ পরিষ্কার ও শুকনো না রাখলে। 
  • অসুরক্ষিত যৌন সহবাস করলে। এই সংক্রমণ ছোঁয়াচে নয় এটি যৌন সহবাসের মাধ্যমে ছড়ায় না। কিন্তু সহবাসের সময়ে ঘর্ষণের কারণে জীবাণু মূত্রনালীতে প্রবেশ করতে পারে কিংবা ইতোমধ্যে মূত্রনালীতে থাকা জীবাণু আরও ভেতরে চলে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সজাগ ও সুরক্ষিত থাকা একান্তই দরকার। 
  • প্রস্রাবের রাস্তায় নল বা ক্যাথেটার পরানো থাকলে  
  •  ইতঃপূর্বে প্রস্রাবের ইনফেকশন হয়ে থাকলে

 

যেকোনো কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে। যেমন—

 

o   টাইপ ২ ডায়াবেটিস অথবা এইচআইভি আক্রান্ত হলে

o   কেমোথেরাপি অথবা দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবনকালে

o   গর্ভবতী হলে

o   মূত্রথলি পুরোপুরি খালি করতে বাধা সৃষ্টি করে এমন রোগ হলে। যেমন: পুরুষদের ‘প্রস্টেট গ্রন্থি’ বড় হয়ে যাওয়া, শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা স্নায়ুতন্ত্রের কোনো অসুখ

o   মাসিক চিরতরে বন্ধ হয়ে গেলে অর্থাৎ ‘মেনোপজ’ হলে। এক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন কমে যাওয়ায় সংক্ৰমণ প্রবণতা বেড়ে যায় ইস্ট্রোজেন লেভেল কমে গেলে জীবাণু বিরোধী ভেজাইনাল ফ্লরা ও যোনিপথে অবস্থানকারী ভালো ব্যাকটেরিয়ার উৎপাদন কমে যায় এবং স্বাভাবিক ভাবেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। 



চিকিৎসা ও উপশমঃ 


  • রোগ উপশম করার একমাত্র পন্থা যত শীঘ্র সম্ভব কোনও বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া। এক্ষেত্রে urologist, gynaecologist বা nephrologist এর শরণাপন্ন হওয়াই শ্রেয়। 
  • প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবনের সাথে সাথে ও চিকিৎসকের বলে দেওয়া নিয়মাবলীও পালন করা বাধ্যতামূলক হয়। 
  • প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া দরকার। রোগাক্রান্ত অবস্থায় অন্তত ২.৫ লিটার থেকে ৩ লিটার জল খেলে রোগের প্রাদুর্ভাব কমতে থাকে। 
  • মনে রাখতে হবে, অনেক সময় প্রসাব আটকে রাখার প্রবণতা এই সংক্রমণ বৃদ্ধি করে। 
  • শারীরিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অবশ্যই মেনে চলা দরকার।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন