দত্ত বাড়িতে কান্নার রোল উঠল, আবার। এবার হয়তো শেষরক্ষা হবে না আর! বাড়ির কর্ত্রী অনুপ্রভাদেবী এবারে হয়তো ইহলোকের মায়া কাটিয়ে মুক্ত হবেন। তবে কি তার সোনাদাদুভাইকে ফাঁকি দেবেন তিনি!
একটা বোর্ড মিটিংয়ে ব্যস্ত সূর্যর ফোনে অনেকগুলো অভিমানে ভরা টেক্সট আসে, মনে মনে হাসে সূর্য। সিঞ্জিনিকে ইদানিং একদম সময় দেওয়া হচ্ছে না। নাহ! এবার বাড়ি গিয়ে বিয়ের কথাটা পাকা করতেই হবে।
সিনিয়রদের কথাবার্তায় সম্বিৎ ফিরে বহুজাতিক সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মচারী সূর্যর। চাকরি সূত্রে ভিন শহরে বাস। ফোনালাপটুকুও জোটে না মেয়েটার কপালে মাঝেমধ্যে। ফোন অফ করে মিটিং অ্যাটেন্ড করে সূর্য।
অন করতেই বাবার অনেকগুলো মিসডকল অ্যালার্ট সূর্যর কপালে ভাঁজ ফেলে। ফোন করে জানতে পারে সোনাঠাম্মা অসুস্থ, এবারে হয়ত শেষ রক্ষা হবে না। মুষড়ে পরে সূর্য। ছেলেবেলায় মায়ের অসুস্থতার সময় সোনাঠাম্মাই ওকে দেখাশোনা করতেন। নিজের নাতিদের থেকে ওকে আলাদা ভাবেন নি কখনোই। আজ সেই মানুষটাই......
দু'দিনের ছুটি ম্যানেজ করতেই হবে, যেভাবেই হোক।
খবরটা ইতিমধ্যেই পাড়াময় ছড়িয়েছে। সেনগুপ্ত বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কাল পর্যন্ত অনুপ্রভাদেবী আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকলেও আজ সামান্য সুস্থ। নীলাভ্র আর নয়ন বরুণবাবুর দু’পাশে বসে, কীভাবে কাকুমণির যন্ত্রণা লাঘব করবে বুঝে উঠতে পারছে না!
ভাবলেশহীন মুখে শ্রীময়ীদেবী সিঞ্জিনির কাছে বসে আছেন, সিঞ্জিনিরও শূন্য দৃষ্টি। ভবিষ্যতের স্বপ্নগুলো চোখের জলে ভেসে গেল।
নীলাভ্রর বাবা সতীনাথবাবুর তত্ত্বাবধানে সূর্যকে পাড়ার ছেলেরা সেনগুপ্ত বাড়ির উঠানে শুইয়ে দিল। সতীনাথবাবু বরুনবাবুর কাঁধে হাত রেখে ভেজা গলায় বললেন, "বাড়ির একদম কাছেই রে ভাই, ছেলেটা আমাদের আনমনে থাকায় বোধহয় খেয়াল করেনি বড় রাস্তার উল্টোদিক থেকে আসা ট্রাকটাকে।“
পাশাপাশি দু’টো বাড়ি একেবারে ঘেঁষাঘেঁষি। সোনাঠাম্মার আর্তচিৎকার ছড়িয়ে পড়তে থাকে, "ক্যান রে ক্যান! আমি কি তগো অরুচি হইছি!! আমারে ফ্যালাইয়া কচি ছেলেটারে টানলি ক্যান, ক্যান,ক্যান,ক্যা......ন"!
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন