মৈনাক অনেক আশা নিয়ে জিওলজি নিয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করেছিল। ভেবেছিল দেশে দেশে নিত্যনতুন রত্নভাণ্ডারের খোঁজ আনবে। কার্যক্ষেত্রে চাকরিতে সুবিধে করতে না পেরে এক আজব ব্যবসার সন্ধান পায়। বড় বড় পোশাকের দোকানে ম্যানিকুইন সাপ্লাই করে। তবে ব্যবসায় লেগে থাকতে থাকতে ঐ ফাইবারের মানুষগুলো ওর অন্তর্লোকে হানা দেয়। নিজের নাদুসনুদুস চেহারা ঝরাতে ও জিমে গিয়ে ওয়ার্ক আউট করা শুরু করে। স্ত্রী পুরুষ নির্বিশেষে ঐ ম্যানিকুইনের দল ওর খুব কাছের হতে থাকে। ওদের শরীরের নজর কাড়া ঝলক, নিখুঁত অবয়বের মায়ায় মৈনাক আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে।
সুযোগ এলেও সে আর এই ব্যবসা থেকে বেরোতে পারে না। কখনও কখনও গোডাউন থেকে নেওয়ার পথে দু-একটা ম্যানিকুইনকে নিজের বাড়িতে নিজের ঘরেও ঠাঁই দিতে হয়। ওরা কেমন যেন ওর আত্মার আত্মীয় হয়ে গেছে। মনে হয় না যে ওরা কোন জড়বস্তু দিয়ে তৈরী। মনে হয় ওদেরও প্রাণ আছে, এক্ষুনি শ্বাস নেবে শ্বাস ছাড়বে। প্রাণের এসব লক্ষণ মৈনাক দেখতেও পায়। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখল মৈনাক, ওর বিয়ে হচ্ছে আর পাত্রী সেজে বসে আছে এক ম্যানিকুইন। ওর কালো চকচকে দেহ থেকে বেরিয়ে আসছে হীরের দ্যুতি। বরবেশে মৈনাক,রজনীগন্ধার গোড়ের মালা, শোলার টোপর, চারপাশে উলুধ্বনি। এক অপরূপ ভালোলাগা, কিন্তু একি! ওর নিজের বাড়ির লোকেরাও আস্ত এক একটা ম্যানিকুইন। ও নিজে পা ফেলতে যাবে, ওর পা এত শক্ত লাগছে কেন? এ কি! কালো চকচকে হাতপায়ে ও নিজেই তো কখন ম্যানিকুইন হয়ে গেছে। মায়ের ডাকে ও চেতনায় ফিরে এল। "বাবু ওঠ, তোর ইউপিএসসির অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটা এসেছে। পোস্টিং তো লিখছে কলকাতাতেই।"
মৈনাক একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস
ফেলল। আশা করা যায় এই ভোরের স্বপ্ন আর ওর জীবনে আসবে না। বিছানা থেকে নেমে মা'কে প্রণাম করে জড়িয়ে ধরল মৈনাক।
চিত্র সৌজন্যঃ আন্তরজাল থেকে সংগৃহীত
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন