ভূতের গল্প - মীনা রায় বন্দ্যোপাধ্যায়

  



 

নামটি ভূতনিপুর। অজ গ্রাম। সেখানে পলেস্তারা ঝরে পড়া পরিত্যক্ত পোড়ো প্রাসাদ। ছাদে নিম অশ্বত্থ গাছে বকের বাসা। বাড়ির চিলেকোঠার ঘরে পেঁচা আর  পেঁচানীর সংসার। সেই বাড়িতেই থাকতো আমার সহপাঠী। বসন্ত পূর্ণিমাতে ভূতনিপুর গ্রামের প্রান্তরে বসে ফাগের মেলা। এই মেলাতে ছেলে মেয়েরা আবীর মাখে অবাধে। মেলাটা রাতে যুবক যুবতীতেই জমজমাট। শাঁকচুন্নিপুরব্রহ্মদৈত্যপুর, প্রেতনিপুর ,মামদোপুর, গেছোপুর মেছোপুর, রাক্ষসপুর, গলাকাটাপুর, রেলেকাটাপুর, গলায়দড়িপুর, গলায়কলসি দড়িপুর প্রভৃতি গ্রামের  ভূত যুবক যুবতীদের আবীর খেলা দেখতেই আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ডুবি। ডুবি ছিল খোনা। নাকি সুরে কথা বলতো। আমাদের স্কুলের সবাই ওকে এড়িয়ে চলতো। আমি কথা বলতাম। আমাদের বাড়িটা  সরস্বতী টাউনে। বিদ্যাবতী স্কুলের পাশেই। আমরা এই বিদ্যাবতী স্কুলের ক্লাস নাইনে পড়ি। এটি মফঃস্বল শহর

 

ডুবি আমাকে তাদের গাঁয়ের বসন্ত উৎসবে নিয়ে যেতে  চায়। ওর মুখে গ্রামের সব নাম শুনে আর ছেলে মেয়েদের মেলামেশা এসব শুনে যুবতী আমার মনটা দোলা দিল। বললাম, আমার মাকে একটু বলবি চল আমাদের বাড়ি। ডুবি মাকে জানালো তাদের বাড়ি গেলে আমার কোনো অসুবিধা হবে না। দোলের পরের দিনে আবার একসঙ্গে এসে স্কুল  করা হবে। আমার আগ্রহ দেখে মা না করে নি। শুধু বলল, তুই তো বন্ধুর সঙ্গে থাকবি সোনালি ,কিন্তু আমি কি একা ঘুমাতে পারবো ? যা ।একদিন তো পরের ঘরে যাবি। অভ্যাস হোক।

 

নদী পার হয়ে বাসে চড়ে তারপরে মাঠ বন জঙ্গল পেরিয়ে ডুবিদের ঘর। ওমা ! ডুবিদের বলছি কেনডুবি তো একলাই থাকে দেখছি।তবে রাঁধে না সে। কিন্তু !!

সুখাদ্য খাবার এসে যাচ্ছে কিভাবে?

- “ডুবি, এই খাবার কে আনলো ?”

আমার মা। আমরা গরিব। মা অন্যের বাড়ি রান্না করে

- “এই পোড়ো বাড়িতে থাকি। তবে আমার কোনো অসুবিধা নেই।

- “ও ঘরে কিসের শব্দ? কে যেন গোঙাচ্ছে ডুবি?”

,ও আমার বাবা। উনি অসুস্থ। আমার মা ওনাকে ওষুধ দেন।

- “দেখবো তোর বাবাকে ?”

- “ভয় পাবি না তো ?”

- “কেন ?”

বাবার শরীর হাড়কঙ্কাল

- “আমি খুব সাহসী। ভূত দেখে ভয় পাই না । বাবা তো মানুষ । চল

ডুবি তার বাবার গায়ে নোংরা কাঁথা খুলতেই দেখি অস্থিসার এক নরমূর্তির বিকট দাঁত ঠোকাঠুকি হাসি। বাবা গো বলেই আমি অজ্ঞান হয়ে পড়িডুবি জল দিতেই জ্ঞান ফিরলো। বললো,

- “সোনালি, আমার বাবা মা । ওঁরা দুজনেই ভূত। আমিও ভূত। আমাকে কোথায় পেল ! মানুষ করছে  কি আশায় কেন জানি না !!! “

শুনেই আমি দে ছুট । দৌড় আর দৌড়

 

 

চিত্র সৌজন্যঃ আন্তর্জাল

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন