বিপরীত রিপু তাড়িত এক বিচিত্র ধর্মবিশ্বাসের রহস্যজাল - "সপ্তরিপু "- পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়

  


বই – সপ্তরিপু

লেখক – রবিন জামান খান

প্রকাশক – বাতিঘর প্রকাশনী

প্রথম প্রকাশ – ফেব্রুয়ারী ২০১৮

প্রচ্ছদ – ডিলান

পৃষ্ঠা – ৪২৯

মুদ্রিত মূল্য – ৪৫০/-

 

১৮২৮ সাল। আজ থেকে প্রায় দু’শো বছর আগের কথা। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে হঠাৎ খবর আসে রাজা সূর্যকান্তর সাথে আলোচনা করে ফেরার পথে অবিভক্ত ভারতের ময়মনসিংহ-মধুপুর অঞ্চল থেকে রাতারাতি গায়েব হয়ে যায় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ছোট্ট একটা দল। ব্রিটিশ সেনার আভ্যন্তরীণ মহলে এই খবরের সত্যতা অনুসন্ধানের জন্য  ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ম্যাকফিকে ওই অঞ্চলে তদন্তে পাঠানো হয়তাঁর বিশ্বস্ত সঙ্গী মহাবীর সিং ও জোনাথন। তদন্ত করতে গিয়েই অদ্ভুত এক অন্ধকার জগতের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন ক্যাপ্টেন ম্যাকফি'র দল। রাজা সূর্যকান্তর নির্মানাধীন শশীলজ থেকে এলাকার সবচেয়ে বড় ঘোড়ার হাট – সবখানেই সুত্রের খোঁজে দৌড়ে বেড়াতে হল। ধীরে ধীরে ম্যাকফিদের এই যাত্রাপথে সঙ্গী হল ডোংরু মহারাজ নামের এক পুরোহিত, প্রভাবশালী তালুকদার পরিবারের বেগম জোহরা, লাল পাগড়ি বাহিনী এবং স্বয়ং কিংবদন্তিতুল্য কর্নেল হেনরি ‘ঠগী’ স্লীম্যান। এই ঘটনার সাথেই ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়ে ভয়ঙ্কর এক ঠগী দল

 

বর্তমান সময়। মুক্তগাছাএক পুকুর থেকে উদ্ধার হয় একটি গাড়ি এবং গাড়ির ভিতরে একটি কঙ্কাল। পুলিশের ডিমোশন হওয়া অফিসার বাশারকে পাঠানো হয় এই ঘটনার তদন্তে। বাশারের  সঙ্গী হয় আব্দুল্লাহ এবং রমিজ দারোগা।  তদন্তের কাজ জটিল থেকে জটিল অবস্থায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে এর সাথে যুক্ত হন সাংবাদিক জয়া সরকার ও প্রত্নতত্ববিদ রিফাত মজুমদার। ধীরে ধীরে উন্মোচিত হতে থাকে ইতিহাস থেকে উঠে আসা এক বিচিত্র ও গভীর রহস্যের জাল।


অতীত ও বর্তমান ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থেকে সমান্তরাল সময়কাল ও ঘটনাপ্রবাহকে কেন্দ্র করে লেখক রচনা করেছেন এক সুদীর্ঘ উপন্যাস।

ঠগী সম্প্রদায়কে নিয়ে শ্রীপান্থ লিখিত বই “ঠগী” বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। ঠগীদের বিচিত্র বিশ্বাস, কুসংস্কার, প্রথা, আচার বিধি – সবকিছুর সাথে কাল্পনিক রহস্য যোগ করেও বেশ কিছু মধ্যমমানের রচনা আছে। সেই তুলনায় এই বই অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে। গল্পের জটিল রহস্যবিস্তার পাঠককে বই শেষ করতে বাধ্য করবে নিঃসন্দেহে।  

গল্পের টুইস্ট ও প্রতি অধ্যায়ের শেষে রহস্যের রেশ রেখে যাওয়া পরবর্তী অধ্যায় পড়ার একটা আলাদা আকর্ষণ তৈরি করে।

গল্প একবার অতীত একবার বর্তমান এইভাবে একসাথে এগিয়েছে। শুধু তাই নয় ঘটনার পরম্পরাও একই ভাবে একই সংখ্যক চরিত্র সমাহারে পরপর ঘটে চলেছে। এর সূচনা ও সমাপ্তিও একই। যেন অতীতের ঘটনা ও চরিত্ররাই আবার ফিরে এসে বর্তমানে সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছেন। আশ্চর্য সমাপতন!!

গল্পের মাঝামাঝি অংশে অনাবশ্যক প্রতি পদক্ষেপের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা শুধু যে গল্পের গতি শ্লথ করে দিয়েছে তাই নয়, বেশ খানিকটা বিরক্তিও তৈরি করে। অনায়াসে মাঝের একশো পৃষ্ঠা বাদ দিলে গল্প আরও টানটান হয়ে উঠতে পারত।

প্রধান খল চরিত্রর উন্মোচন চমকপ্রদ নিঃসন্দেহে কিন্তু কিছু প্রশ্ন রয়ে যায়, যা আরেকটু জানতে পারলে ভালো লাগত। বিশেষ করে কেন সে হঠাৎ খারাপ কাজে উদবুদ্ধ হওয়ার পেছনের যুক্তি বড় বেশি হালকা ও খেলো মনে হল।

বইয়ের অজস্র অফুরন্ত বানান ও কিছু ভাষাগত ভুল লেখকসহ প্রুফ রিডারের কাজ সম্পর্কে প্রশ্ন তুলতে বাধ্য।

ইদানিং কালের অধিকাংশ বই-ই সম্ভবত চলচ্চিত্র রূপায়নের কথা মাথায় রেখে লেখা হয়ে থাকে। এটিও ব্যতিক্রম নয়। সব মিলিয়ে একবার পড়ার মত বই অবশ্যই ।    

 

 কলমে - পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়,

  

 

 

  

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন