অনলকে
খুব ভালোবেসে বিয়ে করেছিল সর্বজয়া। হাল ফ্যাশানের নাম না রেখে বাবা মা আদ্যিকালের সর্বজয়া
নামটিকেই বেছে নিয়েছিল। মনে হয়েছিল হরিহর আর সর্বজয়ার সেই অপুর সংসার। এই সর্বজয়ার
সংসারে অপুদের মত শান্তি ছিলনা, তবে সুখের বাহুল্যের অভাবও ছিলনা। এমনিতে বদলে যাচ্ছিল
অনল বিয়ের পর থেকে একটু একটু করে। আসলে সর্বজয়া বোঝে থেকে যাওয়া একটা অভ্যাস। আর সেটা
চোখ সওয়া হতে হতে সাবেকিয়ানা থেকে ভেতো বাঙালীর ভাতঘুমের মতই কখনো তৃপ্তি, কখনো অম্বলে
পরিণত হয়। একেই বলে সংসার। তবে পরের অপ্রাপ্তি আর তিক্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণ টুটুল।
সর্বজয়ার সংসারে যখন সবার আশনাই ছিল তাদের মত ছেলে হবে, তখন টুটুল এল। ছোটবেলায় ধরা
না পড়লেও পরে বোঝা গেল জেনেটিক ডিসঅর্ডার থেকে সে অটিজমের শিকার। হাঁটতে গেলে পা বেঁকে
যায়। কোথাও বসলে মুখ থেকে লালা গড়িয়ে পড়ে। বুদ্ধিজীবী সমাজ তাকে স্পেশাল চাইল্ড নামটা
দিলেও, শাশুড়ি, কাকীশাশুড়িদের সংসারে ন্যুলো-ন্যাবলা এসব বলে হাসাহাসি চলে। টুটুলের
সাথে কেউ খেলতেও চায়না। ডাক্তার অবশ্য তাকেই বন্ধু হয়ে উঠতে বলেছেন। সে চেষ্টাও করে।
শিক্ষিত হয়েও মা - কাকীর কথায় টুটুল অনলের চোখে ন্যাবলা বলেই পরিচিত।
তবে আজ সর্বজয়া বড় বেশী খুশি হয়ে গেছে।
অহংকার তাকে এই প্রথমবার সন্তানের জন্য গর্বিত করেছে। এবার বিজ্ঞানের এক দেশব্যাপী
পরীক্ষায় টুটুল দ্বিতীয় স্থানাধিকার করেছে। তাকে যারা ন্যাবলা বলে দূরে সরিয়ে রাখত,
কেউই চান্স পায়নি তাতে। দিনে দিনে কালে কালে সর্বজয়াদের বার বার প্রমান করতে হয়েছে
তারা হেরে যায়নি। তবে টুটুলের চোখের কোণার চিকচিকে হাসির সাথে গালের কশ বেয়ে গড়িয়ে
আনন্দটাই সমাজের প্রতি সর্বজয়াদের উত্তর। পিছিয়ে পড়া মানুষ যে হেরে যায়না, তা সে অচিরেই
প্রমাণ করেছে।
চিত্র সৌজন্যঃ আন্তর্জাল
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন