তখনও সন্ধ্যা নামেনি। অসময়ে মেঘ করে আসা ক্লান্ত বিকেলের আকাশের রঙ ঘসা স্লেটের মতো। আকাশ যেন রঞ্জিতের মনের সঙ্গে মন মিলিয়ে একাকার হয়ে গেছে।
- তুমি হেরে গেছ, রঞ্জিত। তুমি হেরে গেছ।
রঞ্জিত চমকে ওঠে। কে বললো কথাটা ?
টার্মিনাসের এক পাশে গাড়ি রেখে একটা
চাটাই পেতে শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখছিল রঞ্জিত। হঠাৎ কথাটা কানে এলো। অথচ, আশেপাশে কেউ নেই। কিন্তু সে স্পষ্ট
শুনেছে, খুব কাছ থেকে খুব প্রিয়জন কেউ যেন ফিসফিস করে বলে
গেল।
রঞ্জিত দেখল, একটা ছোট্ট প্রজাপতি, আকাশের রঙ দেখে
বোধহয় ভয় পেয়েছে; দ্রুত টগর গাছের ঝোপের দিকে ছুটছে। তবে,
ওই কি বলে গেল? কিন্তু ও কি করে জানবে ?
ওর জানার কথা নয়।
ভেজা আকাশে দুটো শঙ্খচিল, ওরা পাশাপাশি উড়ছে, একসঙ্গে ঘরের পানে
ছুটছে। ওরাই বলে গেল না তো, ফিসফিস করে ?
রঞ্জিত উঠে বসে। ঘোলাটে আকাশের দিকে
তাকিয়ে চোখ ঘোলা হয় ওর। সন্ধ্যার আকাশের রঙ আরও গাঢ় হয়। আকাশে শঙ্খচিল দুটো আর
নেই। হয়তো পৌঁছে গেছে নিরাপদ আস্তানায়।
তখুনি হারানদা এসে বলল, “ ট্রান্সপোর্টারের সঙ্গে কথা ফাইনাল হয়ে গেল রে রঞ্জিত,
রাতেই মাল লোডিং হবে। কাঁচা মাল, পনেরো
ঘণ্টায় সাতশ’ কিলোমিটার। হবে তো?”
- “ হয়ে যাবে হারানদা, স্টিয়ারিং ধরলে আর কোনো চিন্তা নেই।“
- “ তবে তৈরি হয়ে নে। বৃষ্টি আসতে
পারে।“
রঞ্জিত ট্রাকে গিয়ে বসে। বসে বসে
আকাশ দেখে। ট্রাকের এই ছোট্ট কেবিনই ওর ঘর, ওরসুখ-দুঃখের
রোজনামচার একমাত্র সাক্ষী।
বিকেলে মদন হাসতে হাসতে বলছিল, “ কি রে রঞ্জিতদা, তোর বউ নাকি পালিয়ে
গেছে?”
কেবিনের জানালা দিয়ে একবার বাইরে তাকায় রঞ্জিত।
তখনই ঝমঝম করে মুষলধারে বৃষ্টি নামে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন