কৃষ্ণকলি - কৃপাণ মৈত্র


  

মা চুলের ফিতেতে একটু টান দিতে, সহনা 'আউচ' শব্দ করে বলে, কী কর মা। চুল ছিঁড়ে যাবে যে

মা মুখে ফিতের একটা প্রান্ত ধরে চুলে ফিতে দিতে দিতে বলেন, ছিঁড়বে কেন।তোর যা গাছা চুল, এমনটা আর কারো দেখি না

সহনা হাসতে হাসতে বলে, ওটা কোন গুণ নয়

কী যে বলিস। মায়ের বিস্ময়। কজনের এমন আছে শুনি

জন তোমার মেয়ের মতোএমন কুচ্ছিত শুনি?

-কুৎসিত কেন হবে? রংটা না হয় চাপা

-চাপা নয়, লোকে বলে ব্ল্যাক জাপানের মত কালো। তারপরে ঠোঁট মোটা, নাক চাপা, জোড়া ভুরু আরও কত বদ দোষ- কেমন যেন আফ্রিকান পুরুষ

মা একটু থেমে বলে, যার দেখার চোখ আছে, সে তোকে ঠিক দেখতে পাবে। 

-জন্মদাত্রির চোখে তার সন্তানের সবকিছুই ভালো, কার দায় পড়েছে তোমার চোখে আমায় দেখে

মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, কেউ নেই বলছিস। না না এখন অনেক সমঝদার আছে... শুধু রূপে কি হয় গুণটাই তো আসল

সহনা হাসতে হাসতে বলে, কথায় বলে, আগে রূপ নেহারি পরে গুণ বিচারি। তুমি যতই আমার সামনে বলো না কেন, আমি ঠিক জানি তুমি বাস্তবকে অস্বীকার করতে পারো না

মা সহনার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে, না না তোর কথা ঠিক নয় মা

-বিয়েটা তো শেষ কথা নয়, মা...

সহানাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে মা বলে, বিয়ে তো পরিচয় নয়, এটা নির্ভরতা। জীবনের মানে। পড়ন্ত বয়সে বড় বেশি দরকার

সহনা হাসতে হাসতে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, আমি তোমার কাছে সব থেকে স্বচ্ছন্দ

সে হয় না মা। কালো জটের আবর্তের একটা অর্থ আছে। যত গভীর তত কালো, তত রহস্য। আমি নিশ্চিত জানি একদিন কেউ না কেউ রহস্য ভেদ করতে আসবেই

সহনা হাসতে হাসতে মায়ের গালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে বলে, তুমি ওই আশায় মাথার চুল পাকাও। শিল্পী শুধু কৃষ্ণকলির ছবি আঁকতে পারেন। তাকে নিয়ে ঘর করতে গেলে ভাবনা অতলান্ত হয়। 

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন