ঘরের কয়েদী - চিত্রাভানু সেনগুপ্ত

  


সকালের টাটকা হিমেল বাতাসটাকে হঠাৎ পানসে করে দিয়েছিল গরমাগরম খবরটা। প্রথম পাতায় বড় বড় করে হেডিং গৃহবধূ খুন। ফেসবুকে আলাপ, অল্পদিনের প্রেম, তারপর সোজা ছাদনাতলা। তারপর যা হয়! এখন তো আবার কোভিডের পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার দহরম মহরম যেন অসুখের মত ছড়িয়ে গেছে মানুষের মনে। মানুষ সবকিছু ভুলে সামাজিক মাধ্যমকেই নিজের ঘর বাড়ি ভাবলে যা হয়। সকাল থেকে কতবার যে খবরের কাগজখানা নাকের সামনে নাড়িয়ে দেখিয়েছে প্রশান্ত! 

 

--খোঁজ নিলেই দেখবে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রেম আর নয়তো পরকীয়ার গল্প। তবু মানুষ বোঝে ?

 

--ফ্যা, ফ্যান! রান্নাবান্না, সাজুগুজু, ব্যাবসা বাণিজ্য, সাহিত্য, শিল্প সবই। আর হ্যাঁ সাহিত্যের কথা কী বলি?  লিখতে পারি আর না পারি, ছাইপাশ যা কিছু লিখে ফেললেই প্রাইজ। সাহিত্যিক?!

 

প্রশান্তর নানারকম টিপ্পনী রিয়া আজকাল ভালোই ধরতে পারে। আজ থেকে ঘরে দরজা দিয়ে সব কাজ বারণ হল। ঘরের ছিটকিনিগুলো সব পিটিয়ে ভাঙা হচ্ছে । অস্থির লাগছে বড়। দবন্ধ করা কান্না। দুই বাচ্চার মা হলে মেনে নিতে হয় কত কী!

 

বহুদিন পর রিয়া ছাদে এসে দাঁড়িয়েছে। একা। রাতের আধভাঙা চাঁদটাও ভাঙা ছিটকিনিটার মত কোষ্ঠিকালো আকাশের গায়ে আলগোছে ঝুলে আছে। রাতজাগা খেচরের ডানারা নিশুতরাতে দীগন্ত ছোঁয়। বহুদূরে মাথাচাড়া দেওয়া শহুরে আলোগুলো দেখে রিয়ার মনে পড়লো... পাঁচ মিনিট হাঁটা পথে বাবার বাড়ি। বৃদ্ধ বাবাকে কতদিন দেখেনি সে! নিজের ইচ্ছায় শেষ কবে ঘর থেকে বের হতে পেরেছে তাই তো মনে পড়ে না। একগুচ্ছ গল্পের পান্ডুলিপি চুপিসারে লুকিয়ে রেখেছে ভয়ে। কে দেবে বের হবার সুযোগ? বইপ্রকাশের স্বপ্নটা কখনো কী আদৌ সত্যি হবে?

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন