- “গতরাতে জ্বরে বেহুশ হয়ে পড়ে থেকে
এখন সাতসকালে চললে যে বড়ো?”
- “আজ আর
কাজে যেতে হবে না। মালিকের কাছে পাওনা টাকা ক’টা আনতে যাচ্ছি। ফেরার পথে যদি জিওল মাছ পাই তো এসে ঝোল রেঁধে দেব।“ বলে হারান ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই, কনক শাড়ির আঁচলটা ভালো করে গায়ে মাথায় জড়িয়ে নিল।
পথটুকু হেঁটে আসতে হাঁপ ধরেছে। দেখে, রায় গিন্নী কলতলায় এঁটো
বাসন নিয়ে বসেছে। তাড়াতাড়ি হাত থেকে কেড়ে নেয়।
- “তোর গায়ে এখনও জ্বর রয়েছে, কনক। এই শরীরে তোকে আসতেই হবে?”
- “ও, কিছু নয়। ঠিক সেরে যাবে। মা, ছোট খোকা এখনও ঘুম থেকে ওঠেনি? বৌদিকে দেখছি না যে!”
প্রতিমা দেবী ভালোই জানেন, তার ওই একরত্তি নাতিটি যে কনকের মূল আকর্ষণ। বৌমা যদিও পছন্দ করে না
কনকের এই বাড়াবাড়ি রকমের টানটা, তবুও মেনে নিতে হয়।
ওর অভিজ্ঞ হাতে যে স্নেহ ঢেলে দেয়, বৌমার তাতে যে অনেক সুরাহা হয় সে কথা প্রতিমা দেবীর চেয়ে বেশি কেউ জানে না। কনক তার সবটুকু আদর যত্ন দিয়ে দাদুভাইকে আগলে রাখে। কনকের হাতে ছাড়া সে যে কিছুই খায় না!
এদিকে কনকের দিন কাটে এই ছোট্ট ছেলেটিকে ভর করে। এক
বৈশাখের সেই ভয়ানক রাতটা ভুলে থাকে। কালবৈশাখীর তান্ডবে কাঁচা ঘরটা সেদিন
হুড়মুড় করে ভেঙে পড়েছিল ঘুমন্ত মানুষগুলোর ওপরে। সাত বছরের ছেলেটার মাথাটা
একেবারে থেঁতলে গিয়েছিল। তিনদিন কনকের কোন জ্ঞান ছিল না। হুঁশ ফিরতে ছেলের জন্য
পাগল হয়ে উঠেছিল।
এ বাড়িতে এলে হারিয়ে যাওয়া সন্তানের শোক কিছুটা ভুলে থাকে। প্রতিমা দেবী নাতিকে ডেকে আনতে বলেন। কনকের হাতে কিছু টাকা দিয়ে বলেন ডাক্তার দেখিয়ে নিতে।
- “দাদুভাইয়ের জন্য যে তোকে তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে হবে, কনক। দেরি করিস না, দুদিন বিশ্রাম নিয়ে তারপরে না হয় আসবি।“
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন