১. অধিকাংশ শিশুরই এক বছরের মধ্যে অল্প সংখ্যক দাঁত উঠে যায়। ফলে যে কোনো ছোট খাবারের টুকরো অনায়াসে তার হাতে দিয়ে নিজের হাতে খাবার খাওয়ার অভ্যাস শুরু করানো যায়।
২. শক্ত খাবার বেটে, চটকে প্রায় তরলে পরিণত করে
খাওয়ানোও এই সময় থেকে বন্ধ করে দিতে হবে। নরম খাবার অল্প অল্প করে চিবিয়ে খাওয়ানো শুরু
করা দরকার।
৩. এক বছরের পর থেকে শিশুকে সামান্য পরিমাণে নোনতা ও মিষ্টি স্বাদের সাথে পরিচয় করানো
উচিত। তাই শিশুর আহারে সাধারণ নুনের পরিবর্তে হিমালয়ান পিঙ্ক সল্ট এবং সাদা চিনির পরিবর্তে
মধু বা গুড় ব্যবহার করাই ভালো।
৪. এই সময় যেহেতু মাতৃদুগ্ধের পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকে তাই স্তন দুগ্ধের সাথে সাথে
অল্প পরিমাণে ধীরে ধীরে গরু বা মহিষের দুধ ভালো করে ফুটিয়ে অথবা ফুল ক্রিম মিল্ক খাওয়ানো
শুরু করে দিতে হবে। এর ফলে শিশুর শরীরে ক্যালসিয়ামের সরবরাহ হবে।
৫. শক্ত খাবারের মধ্যে ভাত, রুটি, সুজি, ওটস, সাবু, ডাল, ফল, সব্জি প্রভৃতির পাশাপাশি
ডিম ও মাছ খাওয়ানো অবশ্যই প্রয়োজনীয়।
৬. ফল রস করে না খাইয়ে যতটা সম্ভব ছোট ছোট টুকরো করে খাওয়ানো দরকার। আপেল, নাসপাতি
প্রভৃতি ফল সেদ্ধ করে না খাওয়ানোই মঙ্গল।
৭. সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল অবশ্যই খাওয়াতে হবে। অন্তত তিন বছর বয়স অবধি জল ভালো
করে ফুটিয়ে ছেঁকে খাওয়ানো উচিত।
৮. তেলে ভাজা জাতীয় খাবার, রেস্তোরাঁর কেনা খাবার, চর্বিযুক্ত মাংস, চিপস, চকলেট
প্রভৃতি একেবারেই দেওয়া উচিত নয়।
৯. শুধু মাত্র সেদ্ধ খাবারের বদলে পাতলা ডাল – ভাত, জিওল মাছের ঝোল, গ্রীষ্মকাল ব্যতীতে
সামান্য মাখন, চিড়ে, মুড়ি, দই, ছানা প্রভৃতি খাওয়ানো শুরু করা উচিত।
১০. এক বছরের পর থেকে শিশুকে নিজে হাতে খাবার খাওয়ার অভ্যাস শুরু করানোর প্রথম ধাপ
হিসাবে পাত্রে খাবার সাজিয়ে চামচ দিয়ে বা হাত দিয়ে খাবার খেতে উৎসাহ দিতে হবে।
১১. এক বছরের পর থেকে বাচ্চাকে ডিম ও মাংস খাওয়ানো শুরু করতে হয়। প্রথম দিকে সপ্তাহে
একদিন করে খেতে দিয়ে তারপর ধীরে ধীরে সপ্তাহে তিনদিন পর্যন্ত খাওয়ানো উচিত।
১২. শুরুর দিকে সেদ্ধ ডিম খাওয়ানো উচিত। মাংসের ক্ষেত্রে মুরগীর মাংস অল্প পেঁয়াজ আদা রসুনসহ ভালো করে সেদ্ধ করে সামান্য পরিমাণে খাওয়ানো উচিত।
১৩. বাচ্চাকে খাবার খাওয়ানোর জন্য ইদানিং সুন্দর খেলনাসহ রঙিন বাসন এবং চেয়ার ও টেবিল কিনতে পাওয়া যায়। এই ধরণের আসবাবের ব্যবহারে শিশু খেলার মাধ্যমে খাওয়া শিখে যায়।
১৪. শিশু খেতে না চাইলে জোর করে বকুনি দিয়ে ভয় দেখিয়ে বা টিভি – ফোন – ট্যাব প্রভৃতির লোভ দেখিয়ে খাবার খেতে বাধ্য করা উচিত নয়।
১৫. যে কোনও খাবার প্রথমবার খাওয়ালে পরপর তিনদিন খাইয়ে তারপর লক্ষ্য করা দরকার শিশুর শরীরে কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা। অ্যালার্জি, পেটের গণ্ডগোল, বমি বা অন্য কোনও শারীরিক অসুবিধা হলেই সেই নির্দিষ্ট খাবারটি খাওয়ানো বন্ধ করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
১৬. সবশেষে শিশুর আহারে ব্যবহার্য সমস্ত জিনিসপত্র জীবাণুনাশক করা বাধ্যতামূলক। তা সে সব্জি, ফল বা অন্যান্য খাবারের জিনিসই হোক অথবা খাওয়ার জন্য ব্যবহৃত বাসনপত্রই হোক। সব্জি রান্নার আগে বা ফল খাওয়ানোর অন্তত ৩০ মিনিট আগে নুন জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। রান্নার ও খাওয়ার বাসন গরমজলে ভিজিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে ব্যবহার করতে হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন