বর্ষাকালে অঝোরধারার বৃষ্টিতে বাঙালি মন আড্ডাতে মেতে ওঠে। সান্ধ্য বৈকালিক
জমাটি আড্ডায় গল্প গানের সাথে যোগ্য সঙ্গত করতে ভাজাভুজির উপস্থিতিও হয়
অবশ্যম্ভাবী। সাধারণত এই সময় ঘরোয়া আড্ডায় পেঁয়াজি, আলুর চপ, ফুলুরি, বেগুনী
সহযোগে ঝালমুড়িই বেশি জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য। আবার অনেকসময় আরেকটু মুখরোচক বানানোর
তাগিদে কেউ কেউ বানিয়ে ফেলেন আলুর চপ, ডিমের ডেভিল, ভেজিটেবল চপ, চিকেন পকোড়া
বা মাছের চপ। কিন্তু যদি আড্ডার জমাটি আসরে চেনা পরিচিত স্বাদের বাইরে নতুন
স্বাদের খাবার জোগান দেওয়ার ইচ্ছা হয় তখন একটু নিজের দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের দিকে নজর
দিলে মন্দ হয় না। আজ তাই বর্ষণমুখর আড্ডার আসরে স্বাদবদলের তাগিদে এরকমই কিছু
ভিনদেশী ভাজাভুজির খোঁজ দিলাম। এগুলো বানানোও সহজ আবার খেতেও অসাধারণ।
প্ররগিসঃ
পোল্যান্ডের জাতীয় খাবার হল প্ররগিস। বয়স নির্বিশেষে পোল্যান্ডের জনগণ যে কোনও অনুষ্ঠানে বা সাধারণ দিনেও এই খাবার খেয়ে থাকেন। ঐতিহাসিকরা মনে করেন ত্রয়োদশ শতকে এই খাবারের আবিষ্কার হয়। তবে বিভিন্ন পুথিতে সপ্তদশ শতকের থেকে এই খাবারের উল্লেখ পাওয়া যায়। বলা হয় সম্ভবত মার্কো পোলো তাঁর ভ্রমণকালে চিনদেশ থেকে এই খাবার পোল্যান্ডে নিয়ে আসেন। প্রচলিত কাহিনী অনুযায়ী পোল্যান্ডের এক বিধ্বস্থ ঝঞ্ঝায় ক্ষেতের সমস্ত ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায়, সেন্ট হায়সিন্থ সকলকে মন দিয়ে প্রভুর আরাধনা করতে বলেন। সারারাত ব্যাপী সেই প্রার্থনার ফলে পরবর্তী দিন সকালে ক্ষেতের সমস্ত ফসল পুনরায় ফিরে আসে। সেন্ট হায়সিন্থকে নিজেদের কৃতজ্ঞতা জানানোর উদ্দেশ্যে সবাই প্ররগিস বানিয়ে নিবেদন করেন। সেই থেকেই এই খাবার জাতীয় খাবারের মর্যাদা পায় ও বহুলভাবে প্রচলিত হয়।
উপকরণঃ
- ভুট্টার ময়দা / সাধারণ ময়দা – ২ কাপ
- জল – ১/২ কাপ
- ডিম – ১ টি
- নুন – স্বাদ অনুযায়ী
- পুর বানানোর উপকরণঃ
- আলু – ১০০ গ্রাম
- পেঁয়াজ - ৫০ গ্রাম
- নুন – স্বাদ অনুযায়ী
- গোল মরিচ গুঁড়ো – ১/২ চামচ
- রিকোটা চীজ – ১ কাপ
- মাখন – ৫০ গ্রাম
- বাঁধাকপি – ১০০ গ্রাম ( মিহি গ্রেট করা)
- মাশরুম – ২০ গ্রাম ( কুচোনো)
- ক্রিম (sour) – ৫০ গ্রাম
প্রণালীঃ
- জলে ডিম ফাটিয়ে ভালো করে গুলে নিতে হবে।
- ময়দা নুন মিশিয়ে চেলে নিতে হবে। এর মধ্যে ডিম মিশ্রিত জল দিয়ে ভালো করে ময়দা মাখতে হবে।
- ময়দা নরম করে মেখে ভিজে কাপড় চাপা দিয়ে অন্তত ৩০ মিনিট রেখে দিতে হবে।
- অন্য পাত্রে পুরের সমস্ত উপকরণ মিশিয়ে চটকে ঢাকা দেওয়া বাটিতে ফ্রিজে ১০ মিনিট রাখতে হবে।
- এখানে দুরকম পৃথক পুর বানানো যায়। আলুর সাথে পেঁয়াজ, চীজ, নুন ও গোলমরিচ একসাথে চটকে নিয়ে এক রকম পুর।
- অন্য প্রকারে বাঁধাকপি, মাশরুম, ক্রিম, নুন ও মরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে চটকে আধা ঘণ্টা রেখে দিলে দ্বিতীয় প্রকার পুর তৈরি হবে।
- ময়দা থেকে ছোট ছোট লুচি আকৃতির বানিয়ে তার মধ্যে পুর দিয়ে আধা গোলাকৃতির পুলি বানাতে হবে।
- বড় পাত্রে জল ফোটাতে হবে। ফুটন্ত জলে এক এক করে পুর ভরা বানানো পুলিগুলো ছেড়ে দিতে হবে।
- ৫ মিনিট ফোটার পর সেদ্ধ প্ররগিসগুলো তুলে ফেলতে হবে।
- ফ্রাইপ্যানে মাখন গরম করে তার মধ্যে সেদ্ধ প্ররগিস দিয়ে হালকা করে দুপীঠ ভেজে তুলে ফেলতে হবে।
- যে কোনও রকম সস বা চাটনি সহযোগে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে।
- স্বাদ বৃদ্ধির জন্য পুরের মধ্যে মুরগীর মাংস বেটে মিশিয়ে দেওয়া যাবে।
ক্রিস্পি ওয়নটনঃ
ঝ্যাং ঝোংজিং নামে একজন চৈনিক ডাক্তার তুষারক্ষত সারানোর জন্য ময়দার ছোট ছোট পুরিয়া বানিয়ে তার ভিতর বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদের অংশ পুর করে ভরে রুগিদের খেতে দিতেন। এটি খেতেও সুস্বাদু হত আবার রোগ নিরাময়েও অব্যর্থ হত। ক্রমে ক্রমে বিবর্তনের মাধ্যমে এই ঔষধিটি মুখরোচক খাবার হিসাবে প্রচলিত হয়।
উপকরণঃ
- ময়দা – ২ কাপ
- সাদা তেল – ৫০০ মিলি
- নুন – স্বাদ অনুযায়ী
- বেকিং সোডা – ১ চামচ
- মুরগীর মাংস – ২৫০ গ্রাম ( ভালো করে বাটা)
- চিংড়ি মাছ – ২০০ গ্রাম ( ছাড়িয়ে পরিষ্কার করা)
- পেঁয়াজ কুচি – ১০০ গ্রাম
- লঙ্কা কুচি – স্বাদ অনুযায়ী
- আদা কুচি – ১ চামচ
- সোয়া সস – ১/২ চামচ
- গোলমরিচ গুঁড়ো – ১ চামচ
- তিল তেল – ২ চামচ
- ময়দা, নুন, বেকিং সোডা এবং ৫০ মিলি তেল একসাথে মিশিয়ে ভালো করে নরমভাবে মেখে নিতে হবে।
- ময়দা থেকে পাতলা রুটি বানিয়ে তার থেকে চৌকো আকৃতির টুকরো বানাতে হবে।
- বাকি সমস্ত উপকরণ একসাথে মিশিয়ে পুর তৈরি করতে হবে।
- ময়দার চৌকো টুকরোর মধ্যে রেখে কোণাকুণি করে ভাঁজ করে নিতে হবে।
- তেল গরম হলে এক এক করে পুর ভরা ওয়নটন দিয়ে বাদামী বর্ণে ভেজে নিতে হবে।
- গরম গরম মুচমুচে অবস্থায় পরিবেশন করতে হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন