পটকাইয়ের প্রতিদিন - প্রিয়াঙ্কা পালিত

 


ট্রেনটা এসে থামতে পটকাই দেখল সামনের লেডিস কম্পার্টমেন্টের চার পাঁচজন মহিলার হেব্বি হাতাহাতি হচ্ছে দোনামনা করে সে টুক করে উঠেই পড়ল বগিটায়। যদিও কোলে বাচ্চা, ধুঁকতে থাকা ভদ্রলোক বা ট্রেন মিস্ হওয়ার থেকে কোনরকমে বাঁচতে লেডিস কামরায় নিতান্ত অনিচ্ছাকৃতভাবে ওঠা নির্জীব কিশোর বা যুবকদের এই মহিলাবাহিনী একধাক্কায় গুষ্টির ষষ্ঠীপুজো দেখিয়ে দেয়, তবুও পটকাই তথা ওর মতো গুটিকয়েক হকারদের খানিক ক্ষমা ঘেন্না করেই পোষে ঐ দিদিরা।


পটকাই কামরায় উঠে ধীর পদক্ষেপে এই পানিপথের কখনো শেষ না হওয়া যুদ্ধের দিকে এগিয়ে গেল হাতাহাতি ততক্ষণে লাথালাথির বেদম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এখানে অশান্তির কোন পোক্ত কারণ থাকে না একজন টিপটপ বৌদির বাদামি চুলের মুঠি ধরে নেড়ে দিল এক শাঁকচুন্নি কাকিমা, এক মোটাসোটা হতভম্ব দিদির মাথায় পড়ল বিধ্বংসী জেঠিমার করাল মুষ্ঠি, বাকি কেউ একজন ওড়না খুঁজে পাচ্ছে না, কারো একপাটি চটি জানলা দিয়ে উড়ে গেছে এরই মধ্যে পটকাই দেখল এক ঠাকুমা চারপক্ষের ঝামেলা ঠেকাতে গিয়ে দু'টি কথা বলতেই কারোর এক রামধাক্কায় এক পাটি নকল দাঁত খুইয়েছে। আর এক মাসিমা এইসব বাল্যখিল্যের খন্ডযুদ্ধের থেকে দূরে বসে শশা চিবোচ্ছে।

নাহ্, এসব দেখতে থাকলে পটকাইয়ের ক্ষতির সীমা থাকবে না মনে হিমালয়ের মত জোর এনে সে গলা চরালো,মাথার শান্তি, হাতের স্বস্তি লিবে নাকি গো দিদিরা।

এই শুনে কামরার সকল রমণীকুল এক ঝটকায় ফিরে তাকায় তার দিকে পটকাইয়ের মনে হ ক্ষণিকেই সে পৌঁছে গেছে আফ্রিকার একদল সিংহীর সামনে। তবে পটকাইও এতদিনে পাকা রিং-মাষ্টার সে তার খয়েরি ক্ষয়ে যাওয়া দাঁত বের করে আবার বলে ওঠে, 

- ‘দুটো উকুন মারার ওষুধের সাথে একটা উকুনের চিরুণি এক্কেরে ফিরি, ফিরি, ফিরি।

1 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন