ওকে আগে সবাই চিনত। সামাজিকতার কোনো খাঁটি রঙ যদি থাকে সেই রঙ ফুটে উঠত একমাত্র ওর শরীরেই। তখন অবশ্য ওর বয়স অল্প, মনে অনেক স্বপ্ন আর সম্ভাবনা। লোকে বিপদে পড়েছে আর ও ঘরে বসে থাকবে তা কি করে হয়? ফলে জাতপাত, ধর্ম, ভাষার ভেদাভেদ ভুলে ও নেমে পড়ত ময়দানে। বাবা, মা ওকে যে স্বামীজী আর সুভাষকে চিনিয়ে দিয়েছিলেন সেই শৈশবে; তারপর যে কি হল, সাধু-সন্ত-নেতা সব ঘেঁটে গিয়ে কোনো একদিন ও আয়নায় নিজেকে দেখল ওর বয়সটা বেশ বেড়ে গেছে অথচ তেমন কিছুই করা হল না।
ও ফুল, পাথুরে নদী, জংলী জানোয়ারের গন্ধ চিনেছিল
ঠিকই, তবে টাকার গন্ধটা আর চেনা হয়নি। নিজের জন্য কিছু না করে অন্যের জন্য করতে
যাওয়াটা যে বোকামি হতে পারে সেটা ও ক্রমেই বুঝতে পারছিল। আশেপাশে
যাদের কাছে ওর কদর ছিল সেই কদরই যাচ্ছিল কমে। শুধু ঠুনকো শুকনো সমাজসেবা দিয়ে
কি আর দিন চলে?
দু’একজন শুভাকাঙ্খীরা যদি বা ওকে সেকথা বোঝাতে আসত, ও গা’জোয়ারি দিয়ে আত্মরক্ষা করে পার পেত। কিন্তু ভেতরে ভেতরে জানতো যে এই অবতার
সেজে থাকাই বা ক’দিন? ফলে ক্রমে ও
নিজেকে গুটিয়ে নিতে লাগল। যে মোড়ে, মহল্লায় বেশি বেশি করে ও আড্ডা দিত সেখানে যাওয়া
কমিয়ে দিল। কারণ দেখাত ওরা সুবিধের নয়। যদিও মনে মনে জানত দোষটা ওর নিজের।
নাকি জানত না! কেননা, মাঝে মাঝেই যে রাগের দরুণ পাড়ার লোকেদের সাথে
ও অশান্তিতে মেতে উঠত, সেই অশান্তির নেশাটা ওর ভালো লাগলেও
পরে তার অন্তঃসারহীন সত্তাটা ও টের পেত। যদিও তখন আর বিশেষ উপায় থাকত না
স্বাভাবিকতায় ফেরত যাওয়ার।
ও ঘরে এক-একদিন ঘন্টার পর ঘন্টা ভিডিও গেম খেলার ফাঁকে ঘাড়ে, চোখে ব্যথা হলে যখন অতীতের কথা
স্মৃতিচারণ করত ওর মনে মনে পড়ত আগে ওকে কত লোকে চিনত।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন