কেরালা ক্রাইম ফাইল (মালয়ালম)
পরিচালক – আহমেদ খবীর
কাস্ট: অজু ভার্গিস, লাল, ঝিনজ শান, নাভাস ভাল্লিকুন্নু, সঞ্জু সানিচেন, অশ্বথি মনোহর, দেবকী রাজেন্দ্রন
ডিজনি হটস্টারে গত ২৩ শে জুন আহমেদ খবীরের প্রথম ওয়েব সিরিজ “কেরালা ক্রাইম ফাইল” প্রচারিত
হতে শুরু করেছে। ইদানিংকালে বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্মে থ্রিলারধর্মী সিরিজের রমরমা।
সেই ভিড়ের নবতম সংযোজন এটি। ছয় পর্বের জটিল এক তদন্তকে ধীরগতিতে পেশ করা হয়েছে।
২০১১ সালে শহরের উপকণ্ঠে এক সস্তার হোটেলে
একদিন এক যৌনকর্মীর মৃতদেহ পাওয়া যায়। তদন্তে আসেন সার্কেল
ইন্সপেক্টর কুরিয়ান আভিরান (লাল) এবং সাব ইন্সপেক্টর মনোজ (আজু ভার্গিস)সহ
একদল পুলিশকর্মী। তদন্তে তাঁদের হাতে একমাত্র ক্লু থাকে একটি জাল
ঠিকানা — শিজু, পারাইল ভিদু, নিন্দাকারা। সময় এগোতে থাকে হত্যাকারী বারবার ধরা পড়তে পড়তে হাত
ফসকে বেরিয়ে যায়। টানা ছয়দিন তিনটি শহরে অজস্র বিভ্রান্তিকর মোড় পার হয়ে এবং
সম্ভাব্য সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে শেষ অবধি কিভাবে রহস্যের সমাধান হয় তা
সত্যিই বিস্ময়কর। রহস্যের সমাধানের সাথে সাথে তদন্তে নিযুক্ত পুলিশকর্মীদের জীবনের
দৈনন্দিন জীবনও উঁকি মেরে যায়। সাথে সাথে ভারতীয় আইনি ব্যবস্থার ফাঁক ফোঁকর ও পুলিশ বাহিনীতে শ্রেণিবিন্যাস
কীভাবে কাজ করে তাও স্বল্প পরিমাণে দেখানো হয়েছে।
অল্প সংখ্যক পর্বে টানটান কাহিনী বিন্যাসে, দক্ষ
পরিচালনায় সিরিজটি বেশ উপাদেয় হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে পরিচালনা ও সম্পাদনার পৃথকভাবে
প্রশংসা করা প্রয়োজন। সাধারণত ওটিটি সিরিজের ক্ষেত্রে অনর্থক চরিত্র ও গল্প
বিস্তার বাড়িয়ে পর্ব সংখ্যা বৃদ্ধি করার প্রবণতা দেখা যায়। এক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম
ঘটেছে। ফলে অপরাধ ভিত্তিক সিরিজের ক্ষেত্রে সচরাচর যে একঘেয়েমি দেখা যায়, তা এখানে
অনুপস্থিত।
পরিচালক আহমেদ
খবীর ‘দ্য হিন্দু’র সাথে একটি সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন যে, তিনি ওয়েব
সিরিজের গুণমান - বিষয়বস্তু এবং ভিজ্যুয়াল - অন্যান্য ভারতীয় ওয়েব সিরিজের
সমতুল্য করে তুলতে চান এবং এক্ষেত্রে
তিনি তা করে দেখিয়েছেন। সিনেমাটোগ্রাফার জিথিন স্ট্যানিস্লসের সিরিজের মেজাজকে পরিপূর্ণভাবে ধরে রাখতে
সক্ষম হয়েছেন।
ক্লাইম্যাক্সে হত্যাকারীকে আবিষ্কার করার
জন্য কোন অপ্রত্যাশিত মোচড় নেই ঠিকই, কিন্তু যে স্থানে
যেভাবে পুলিশ খুনিকে খুঁজে পায় তা সত্যিই বিস্ময় তৈরি করে। সাথে সাথে সম্পূর্ণ সিরিজের যে ছোট খাটো ভুল ত্রুটিগুলি থাকে তাও
ভুলিয়ে দিতে সক্ষম হয়। অযথা রক্তপাত, যৌনতা, অকথ্য ভাষার গালিগালাজ এবং ভয়ঙ্কর
হিংসাত্মক দৃশ্যের অবতারণা না করেও যে হত্যারহস্যমূলক সিরিজ নির্মাণ করা যায় তার
উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই সিরিজটি। স্বল্প বাজেটে স্বল্প সময়কালের গণ্ডীতে আবদ্ধ থেকে
অপরাধমূলক তদন্ত কাহিনী সিরিজ হিসাবে এবং বাস্তব ছোঁয়া কাহিনী দর্শকের মন জয় করতে
সক্ষম হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন