সে ঈষৎ রেগে গিয়ে বললে, ‘সবই তো জানেন। ভণিতা করে লাভ কি!’
কয়েকবছর কোভিডে সব কিছু কেড়ে নিল। কে কোথায় চলে গেছে কে জানে! পেটের দায়ে অনেকেই এখন কোনো না
কোনো বিকল্প কাজ করছে, সংসার চালাতে হবে তো!
চা খেয়ে গেট পেরিয়ে জয়চন্ডী পাহাড়ে
চন্ডীমন্দির যাবার সিঁড়ি ধরতে গিয়ে থমকে দাঁড়াই। পলাশ ফুলের ডালি নিয়ে গ্রামের কচিকাঁচার দল সব গেল কোথায়! ওরা তো এখানে বসেই পলাশ
ফুলের মালা গাঁথত আর নামমাত্র দামে ভক্তদের হাতে তুলে দিত।
মাঘের শেষে ফাগুন বেলার একটু আগেই ফাগুনের
আগুন ঝরা শুরু হয়ে যায় পলাশের বনে বনে। সেবারে সেই আগুন ঝরানো রঙ ছিল না কোথাও! মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। মহামারীর প্রকোপে অনেকদিন আসা হয়নি
রাঙ্গামাটির দেশে। মহামারীর আঁচ পড়েছিল এখানেও, পলাশও
তাই মুখ
ফিরিয়ে নিয়েছিল !
একবছর পরে আবার আসা জয়চণ্ডী পাহাড়ে, পলাশের টানে। এবারে জায়গাটা আর কিন্তু ফাঁকা
নেই। চা বা অন্যান্য খাবারের স্টল অনেকগুলিই বসেছে। পুরোন পলাশের চায়ের দোকানটা
যথারীতি রয়েছে, সেখানে ঢুঁ মারলাম।
- ‘কি গো, কেমন আছ? আমায় চিনতে পারছ?’
- ‘চিনবো না আর! আপনি তো ফি বছরই আসেন।‘
- ‘তা এখন তো অনেকেই আবার ফিরে এসেছে
দেখছি!’
- ‘না না, এদের মধ্যে অনেকেই নতুন।
আমিই কেবল পুরোন।‘
- ‘তা তোমাদের ব্যবসাপাতি ঠিকঠাক চলছে
তো?’
- ‘আপনারা যতদিন আসবেন ততদিন চলবে। অফ
সিজনে অন্য কাজ।‘
- ‘১০০ দিনের কাজ?’
- ‘দূর মশাই, ১০০ দিনের কাজ এখন
কোথায়? ওরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে মরছে আর আমরা মরছি পেটের জ্বালায়! আমার আবার
কাজ পাবার জন্য একে তাকে ধরা পোষায় না। আমি আর আমার ছেলে পরের ক্ষেতিতে কাজ করে
বাকি সময় চালিয়ে দিই।‘
এক ভাঁড় চা খেয়ে পয়সা মিটিয়ে
চন্ডী পাহাড়ে যাবার গেটের দিকে পা বাড়াই। সিঁড়ির দু’পাশে পলাশ গাছ লালে লাল। মন আনন্দে
ভরে উঠলো। পলাশ ফুলের ডালি নিয়ে গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ছেঁকে ধরে। ওদের
একজনের থেকে পলাশের মালা কিনে পাহাড়ে উঠে চন্ডীমন্দিরে পুজো দিয়ে বাড়ি ফিরি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন