টাকা মাটি মাটি টাকা - সুদেষ্ণা মুখোপাধ্যায়


উফফ! আর ভালো লাগে না। রোজ সকালে উঠে ধড়াচুড়ো পরে পার্কে ছোটো। কাঁহাতক পারা যায়? কিন্তু বাড়িতে টুঁ শব্দটিও করার উপায় নেই। তাহলে যাও বা দুপিস মাটনের টুকরো, হাফ সন্দেশ জুটছে তাও যাবে। অগত্যা … “

 

আজ সকাল থেকে যা গরম, একটু হেঁটেই হাঁফিয়ে উঠলেন পরাশর বাবু। ঘাসে নেমে যেই না বাবু হয়ে বসতে গেছেন দেখেন একখান কড়কড়ে পাঁচশ টাকার নোট। চোখের ভুল নয় তো? নাহ। পরিষ্কার পাঁচশ টাকা। এদিক ওদিক চাইলেন। কেউ নেই। ভাবলেন, "টাকাটা ওঠানো কি ঠিক হবে? এটাকে কি চুরি বলে? না বলিয়া পরের দ্রব্য গ্রহণ করাকে চুরি বলা হয়।

 

এখানে মালিক নেই তাহলে বলবেনটা কাকে? দোনামনা করে নিয়েই নিলেন টাকাটা।

যাক বাবা! এতদিনে ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন। প্রতিদিন পার্কের গেটে কেশব গরম গরম জিলিপি ভাজে। মুচমুচে রসে টইটম্বুর।“  ভাবতেই জিভে জল চলে এল পরাশর বাবুর। অন্যদিন শুধু জুলজুল করে তাকানো ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। কারণ গিন্নি শুধু যাওয়া আসার অটোভাড়া মানিব্যাগে ভরে দেন। তিরিশ বছর ঘর করছেন তো, তাই কর্তার মতিগতি ভালোই বোঝেন।

 

হুঁ হুঁ আজ? আজকে কি করে আটকাবে?”

 

শুধু কি জিলিপি? তার উল্টোদিকে মিলন মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের কচুরি আর পেটাই পরোটা! তার সঙ্গে হিমসাগর রসগোল্লা! একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে কি? পেট টেট আবারনিকুচি করেছে পেটেরআজকে কেউ ওনাকে আটকাতে পারবে না।

 

তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে চললেন গেটের দিকে। যতই উনি স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছেন কিরম যেন একটা চোর চোর ভাব চলে আসছে চাউনিতে। কেউ তাকালেই মনে হচ্ছে সব বুঝে গেল বোধহয়। যাই হোক প্রায় ছুটতে ছুটতে যখন গেটের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন, হঠাৎ পেছন থেকে জামায় টান। ঠিক এই ভয়টাই করছিলেন পরাশর বাবু। নিশ্চয়ই নোটের মালিক। ইসস! এই বয়সে এসে শেষে চোর অপবাদ না জোটেকি কুক্ষণে যে টাকাটা কুড়োতে গেলেন!

 

"ফেরত দিয়ে কিছু একটা বলে ম্যানেজ করতে হবে।" ভেবে উনি পকেট থেকে টাকাটা বের করে পিছনে ফিরে দেখেন; "হে ভগবান! এটা তো সাধু পাগলা।" সাধু হলুদ হলুদ দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলল, "টাকা দে, ঘুগনি খাব"।


বলেই তার চোখ পড়ল পরাশর বাবুর বাড়ান হাতের দিকে। পরাশর বাবু এতটাই হতচকিত হয়ে গেছিলেন যে খেয়াল করেননি উনি টাকাটা বাড়িয়ে ধরে আছেন। সাধু পাগলা টাকাটা হাত থেকে নিয়ে নিতেই চমক ভাঙল ওনার। "এই এই কি করছিস? ওটা তোর জন্য নয়।" সাধু ততক্ষণে পগার পার।

 

ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল পরাশর বাবুর। এইজন্যেই বোধহয় শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, "টাকা মাটি মাটি টাকা"।

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন