মানুষ সামাজিক প্রাণী। বলা বাহুল্য, সমাজের নানান ব্যাপারে খোঁজখবর রাখতে তারা বরাবর আগ্রহী। আর সেসব যদি হয় চটুল মুখরোচক খবর, তাহলে তো কোনো কথাই নেই! "গুজবে কান দেবেন না" এই অমোঘ বাণীকে তারা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়। কিন্তু এই গুজব যদি সব সীমারেখা অতিক্রম করে যায়? তখন হেলায় তছনছ হয়ে যায় কিছু মানুষের জীবন যার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে Afwaah নামক চলচ্চিত্রে।
Afwaah চলচ্চিত্রটি প্রকাশ পেয়েছে
নেটফ্লিক্সে। প্রধান চরিত্রে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি এবং ভূমি পেড়নেকর। সুধীর
মিশ্র পরিচালিত রহস্য রোমাঞ্চ এই চলচ্চিত্র মুক্তি পায় ২০২৩ সালের ৫ই মে। নাম
শুনে খুব সহজেই সিনেমাটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে অনুমান করে ফেলা যায়। কিন্তু
প্রশ্ন হলো, চলচ্চিত্র পর্যালোচনার এমন
শিরোনাম কেন? সেই ক্ষেত্রে নামকরণের সার্থকতা
হিসাবে বলা যায়, একজন মানুষ যখন ব্যক্তিগত
স্বার্থের জন্য তার বাগদত্তার ব্যাপারে গোটা দেশে গুজব ছড়ানোর কর্মচারী নিয়োগ
করে যাতে ওই খবর নাম্বার ওয়ান trending
হয়, সেই গুজব তখন নতুন মাত্রা পায় বৈকি! চলচ্চিত্রটির কাহিনী সংক্ষেপে একটু বলে
নেওয়া যাক।
রাজনৈতিক
পটভূমিকায় এই চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। নিবেদিতা সিংয়ের পিতা রাজস্থানের একজন
স্বনামধন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি তাঁর কন্যার বিবাহ স্থির করেন ভিকি বানা
নামক এক যুবকের সঙ্গে। সেইমতো বাগদান পর্বও সম্পন্ন হয়ে যায়। কিন্তু নিবেদিতা
কিছুতেই এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারে না। নিবেদিতার মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গী তার বাবা
এবং হবু স্বামীর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই নিয়ে নিত্যনৈমিত্তিক ঝামেলা লেগেই থাকে।
শেষপর্যন্ত আর থাকতে না পেরে নিবেদিতা ঘর ছাড়ে। কিন্তু ছাড়বো বললেই তো আর ছাড়া
যায় না। ভিকি বানা মোটেও সুবিধার লোক নয়। সে তার সঙ্গীসাথী নিয়ে নিবেদিতার পিছু
নেয় এবং কিছু পরে তার সন্ধান পেয়েও যায়।
এদের
হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে নিবেদিতা যখন মরিয়া, আশেপাশে
অনেক লোকজন উপস্থিত থাকলেও তাকে সাহায্য করতে একজন মানুষও এগিয়ে আসে না। এগিয়ে
আসে রাহাব আহমেদ নামক এক ভদ্রলোক। তারপরেই শুরু হয় আসল কাহিনী। সকলের সামনে নিজের
সম্মান ও পৌরুষত্ব বজায় রাখার জন্য এবং রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য হবু স্ত্রীর
সম্পর্কে অত্যন্ত নিকৃষ্ট এক গুজব ছড়িয়ে দেয় ভিকি বানা। ধর্মকে হাতিয়ার করে এই
গুজবের নাম দিয়ে দেয় লাভ-জিহাদ। মুহূর্তের মধ্যে খবরটি সবজায়গায় আগুনের মতো
বিস্তার লাভ করে। কে না জানে, সত্যর চেয়ে মিথ্যার বিস্তৃতি
দ্রুততর। ওতেই যে মানুষ মজা পায়! ফলস্বরূপ, একটার পর
একটা সমস্যার জালে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে যায় নিবেদিতা আর রাহাব। আশেপাশের প্রতিটা
মানুষ তাদের প্রাণহরণ করতে উদ্যত। শেষপর্যন্ত কী হলো তাহলে? সেটা তো নিজেকেই সিনেমা দেখে জেনে নিতে হবে!
এবার
আসি চলচ্চিত্রটি কেমন লাগলো সেই প্রসঙ্গে। সিনেমার গোত্র রহস্য রোমাঞ্চ হলেও টান
টান উত্তেজনার যথেষ্ট অভাব লক্ষ্য করা গেছে। সেই যেন "কী হয়, কী হয়" ব্যাপারটা নেই। সকল অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা দক্ষতার সঙ্গে তাঁদের
কাজ সমাপন করলেও সিনেমাটি বেশ স্তিমিত লেগেছে। সিনেমার বিষয়বস্তু নিঃসন্দেহে
ভালো। কিন্তু ঘটনার ঘনঘটার অভাব এবং কাহিনীর বুনটের দুর্বলতার কারণে চলচ্চিত্রটি
যে কতজনের মন জয় করতে পারবে এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকেই যায়।
তবে
অন্যের ভালো লাগা মন্দ লাগার উপর নির্ভর করে নিজে সেই অভিজ্ঞতা সঞ্চয় থেকে বিরত
থাকলে নিজেকেই কিন্তু বঞ্চিত করা হয়। কারণ সকলের পর্যালোচনা সমান হয় না। তাই
নিশ্চয়ই সিনেমাটি দেখুন এবং আপনার কেমন লাগলো সেই সিদ্ধান্ত নিজেই নিন। কাহিনীর
শেষটুকুও তো জানতে হবে, না কী! এই চলচ্চিত্রের মধ্য
দিয়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেকগুলো বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেগুলো
অনুধাবন করতে হলে অবশ্যই দেখে ফেলতে হবে Afwaah।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন