একটা করে মাস - প্রতীক মিত্র

 


একটা করে মাস কেটে যায়ট্রেনে করে ঘিঞ্জি শহর থেকে ধুধু প্রান্তর চিরে যখন কর্মক্ষেত্র হাজির হয় সবুজ গাছপালার নিবিড় সখ্যতায় গ্রামীণ সরলতা আর আনাড়িপনার মাঝে বোঝাই যায় না একটা গোটা মাস কেটে গেল কি করে? চাকরিটা মাঝে মাঝেই ওর মনে হয়েছে ছেড়ে দেবে। ছাড়েনি।আত্মীয়রা বলেছে। বর বলেছে( পরিবারে আয় কমে যাবে জেনেও)। ব্যস্ততায় পরিবারের মানুষ(হাতে গোণা…বর আর মেয়ে)গুলো পর্যন্ত কেমন যেন আগন্তুকের মতন ঠেকে। অসময়ে ঢুলুনি আসে। বদহজম হয়ে যায় রাত জাগার কারণে। মনোমালিন্য খাওয়ার শেষে মুখে মাছের গন্ধের মতন থেকে যায় বরের সাথে ক্ষণিকের অন্তরঙ্গতার কারণে। পাড়ায় লোকজনের সাথে অভ্যেসবশত যেটুকু কথা হওয়ার হয়। কখনও হয়না। বন্ধগলি। তারই মধ্যে বেশ ক’টা বাড়িতে লোক ভাড়াটে বসিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। ভাড়াটেদের অধিকাংশের মুখ মনে থাকে না ওর। ওকেও তারা বিশেষ মনে রাখে না।  দোকানপাট, বাজার, মাসকাবারি ওর একঘেয়েমি বাড়ালেও দিন যাপনের অভিন্নতাকে এমন সুন্দর একটা মোড়কে পুড়ে রাখে যে ও টেরই পায়না ওর মন খারাপ হতে পারে। অথচ ফেসবুক ইউটিউব বা টিকটকে নিম্নরুচির অখাদ্য ভিডিওগুলো দেখতে দেখতে ও বুঝতে পারে ওর বুকের ভেতরটা খালি খালি লাগছে।বর বরের মতনই আছে। তবুও যেন কোথাও একটা আড়াল। মেয়ে মেয়েরই মতনতবু কেমন যেন যান্ত্রিকতা। একটা করে মাস কেটে যায়। ট্রেনে এক একটা সন্ধ্যে বাড়ি ফেরার সময় ঢুলুনির পর স্বপ্নে ও দ্যাখে ওর শৈশবের মফস্বলের বাড়ির সামনের মাঠে ওর বাবা বাবার বন্ধুরা ব্যাডমিন্টন খেলছে। পেছনে দিগন্তে জঙ্গলের মাথায় নীল সবুজ পাহাড়ের চূড়া। ওর মা ওর পাশে এসে ওকে রবীন্দ্রসঙ্গীতের একটা লাইন ধরিয়ে দিচ্ছে। ওর সামনেই গানের পরীক্ষা। মাঠটার উলটো দিক দিয়ে দুটো মেয়ে সাইকেলে চেপে পড়তে যাওয়ার সময় ওকে জিজ্ঞেস করলো কাল স্কুলে যাবে কিনা।ও মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো। ওদের ওর নাম ডাকা শুনে ওর মনে পড়লো তাইতো ওর নামতো শ্রীজিতা। কাজ আর ব্যস্ততার দরুণ নামেও যেন জং ধরে গেছে। অথচ ওর নামটা মন্দ নয়।এই রবিবার হারমোনিয়ামটা নিয়ে বসবে।তারপর মনে পড়ল হারমোনিয়ামটা তো কিনবো কিনবো করে কেনাই হয়নি। সেক্ষেত্রে…  মেয়ে আর বরের সাথে একটু গ্রামের দিক থেকে বরং ঘুরে আসবে। একটু প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেওয়া যাবে। মাসগুলো হেলায় কেটে যাক, একটা দিন অন্তত যদি আঁকড়ে ধরা যেত…


কলমে - প্রতীক মিত্র

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন