প্রাকপুজো রূপটান প্রস্তুতি - শ্বেতা মিত্র


 

বছর ঘুরে কালের নিয়মানুয়ায়ী দোর গোড়ায় উপস্থিত বাঙালি জীবনের মহোৎসব দুর্গোৎসব। পুজো এসে গেলেই বঙ্গসমাজ সাজো সাজো রবে মেতে ওঠে। সারাবছরের দায়িত্ব কর্তব্য মানসিক চাপ ভুলে পুজোর চারদিন অন্তত নিজের ও পরিবারের খুশিই প্রাধান্য হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিদিনের নিয়মনীতি মেনে ঘড়ির কাঁটার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে এবং পরিবারের সকলের দেখাশোনা করার পর অধিকাংশ নারীই নিজের যত্ন নেওয়াকে তালিকার শেষে ফেলে দিয়ে বাতিলও করে দেন। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রূপচর্চা সংক্রান্ত বিষয়গুলো বাহুল্যবোধে ও আলস্যের জেরে একেবারেই আর প্রাধান্য পায় না। কিন্তু বছরের মহোৎসবের সময় সবার সামনে নিজেকে একটু সুন্দর দেখানোর স্পৃহা প্রত্যেকের মনেই উঁকি মারতে থাকে। সারাবছর যত্ন নিতে অপারগ হলেও পুজোর একমাস আগে থেকেও যদি একটু আধটু নিজের যত্ন নেওয়া হয় তাহলেও নিজেকে সুন্দর ও সতেজ করে তোলা যায়। তার জন্য দরকার নিয়মিত কিছু ছোটখাটো পরিবর্তন।


১. প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গার পরেই অন্তত এক লিটার জল পান করুন। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য সারাদিনে কমপক্ষে ৩ লিটার জল পান করা দরকার। 


২.  দিনের শুরুতে অনেকেরই চা বা কফি পানের অভ্যাস থাকে। চা বা কফি দুধ ও চিনি বাদ দিয়ে পান করুন। মিষ্টি ছাড়া চা – কফি পান করতে একান্ত অনীহা হলে এক চামচ মধু ও লেবু দিয়ে খান।

৩. সকালের জলখাবারে কাঁচা ফল, সব্জি, অঙ্কুরিত ছোলা - মুগ, কাঁচা বাদাম দিয়ে প্রস্তুত স্যালাড খান। স্যালাডে নুনের বদলে বিটনুন বা রক সল্ট, গোলমরিচ গুঁড়ো, বাড়িতে বানানো ভাজা মশলা গুঁড়ো বানিয়ে খান।

৪.  দুপুরের খাবারের তালিকায় শর্করা জাতীয় খাবার কম খান। পরিবর্তে প্রোটিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করুন। সম্ভব হলে সাধারণ ভাত, রুটির বদলে জটিল শর্করা সমন্বিত খাবার যেমন ব্রাউন রাইস, ওটস, ফ্লেক্সসিড, কুইনোয়া, অ্যামারান্থ, মিলেট প্রভৃতি খান।

৫. রাতের খাবার রাত আটটার মধ্যে খেয়ে নিন। খাওয়ার অন্তত দু’ঘণ্টা পর ঘুমান।

৬. রাতে কমপক্ষে আট ঘণ্টার নিশ্চিন্ত ঘুম একান্ত দরকার।

৭. রোজ রূপটানের জন্য ত্বক ও চুল পরিষ্কার করা একান্ত বাঞ্ছনীয়। ত্বক ও চুলের জন্য ব্যবহৃত সামগ্রী যেন ভালো গুণমানের হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। ত্বকচর্চার জন্য ব্যবহৃত দ্রব্যাদি আয়ুর্বেদিক বা প্রাকৃতিক হলে ভালো হয়।  

৮. ত্বকের জন্য রোজ তিনটি কাজ করতেই হবে। স্ক্রাবিং, ক্লিনিং এবং ময়শ্চারাইজিং। সপ্তাহে দু’দিন মুখ, গলা ও ঘাড় ভালো করে স্ক্রাব করতে হবে। দিনে দু’বার ক্লিনিং ও প্রয়োজনমত ময়শ্চারাইজিং করতেই হবে।

৯. সপ্তাহে অন্তত দুদিন মুখে কোনও ভালো প্যাক লাগান। প্যাক বাড়িতে বানিয়ে নিতে পারেন। বাড়িতে বানাতে অপারগ হলে ভালো কম্পানির ফেসপ্যাক লাগান।

১০. শুধু ত্বক নয় চুলেরও নিয়মিত পৃথক যত্ন যত্ন নিতে হবে। সপ্তাহে একদিন শ্যাম্পু করতে হবে।

১১. শ্যাম্পু করার আগের দিন রাতে নারকোল তেল অল্প গরম করে মাথার তালুতে ভালো করে মালিশ করুন। বাজার চলতি নারকোল তেলের পরিবর্তে কোল্ড প্রেস নারকোলতেল ব্যবহার করলে ফল ভালো পাওয়া যাবে।  

১২. চুলের তেলের জন্য নারকোল তেলের সাথে কয়েক ফোঁটা ক্যাস্টর বা রেড়ি তেল, ভিটামিন-ই তেল, এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে গরম করে মালিশ করুন।

১৩. সপ্তাহে একদিন হেনা করলে চুল স্বাস্থ্যজ্জ্বল ও মসৃণ হবে। হেনা করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করা অবশ্য কর্তব্য।

১৪. মুখ বাদ দিয়ে শরীরের বাকি ত্বকেরও নিয়মিত যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। স্নানের সময় ভালো করে সপ্তাহে দুদিন সারা শরীর স্ক্রাব অবশ্যই করুন।

১৫. চুল ও ত্বকের সাথে সাথে হাত ও পায়ের নখেরও যত্ন নিন। নিয়মিত নখ পরিষ্কার করে কেটে সুন্দর করে রাখুন।

নিয়মিত মাত্র কিছু সময় ব্যয় করলেই নিজেকে করে তোলা যায় সুন্দর ও সুস্থ। সবার পুজো আনন্দময় হোক এই কামনা রইল।  




Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন