জন্মাষ্টমীতে গোপালের প্রিয় খাবার - বাণী মিত্র

ইস্কন মন্দিরের জন্মাষ্টমী উৎস
  

আগামী ৬ই সেপ্টেম্বর জন্মাষ্টমী। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন। নিঃসন্তান দম্পতিরা সন্তানলাভের আশায় কৃষ্ণের শিশুরূপ গোপালকে পুত্র জ্ঞানে আরাধনা করেন। যদিও প্রতিদিন গোপালের নিত্যপূজার প্রচলন আছে, কিন্তু জন্মাষ্টমীর দিন বিশেষ পূজা আরাধনার রীতিনীতি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ জুড়েই প্রচলিত। ভাদ্রমাসের কৃষ্ণ অষ্টমীর দিন শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন উপলক্ষ্যে তাঁকে ৫৬ প্রকারের ভোগ নিবেদন করা হয়। কথিত আছে একদা ব্রজবাসীর নিবেদিত প্রসাদে অসন্তুষ্ট দেন। বিপদগ্রস্ত ব্রজবাসী কৃষ্ণের শরণাপন্ন হলে শ্রীকৃষ্ণ নিজের কনিষ্ঠাতে গোবর্ধন পর্বতকে ধারণ করেন এবং পর্বতের নিচে সমগ্র  ব্রজের মানুষ আশ্রয়লাভ করেন। টানা ৭ দিন ৭ দিন প্রলয়ের পর ইন্দ্র শান্ত হলে ব্রজবাসী সাত দিনের অভুক্ত কৃষ্ণের জন্য ভোগ রান্না কড়ে নিবেদন করেন। প্রতিদিন ৮ বার খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস থাকায় কৃষ্ণকে সাত দিনের আট দফার খাবার হিসাবে ৫৬ প্রকারের খাবার নিবেদন করা হয়। এই ৫৬ প্রকারের ভোগ হল–


ভাত (ভক্ত), ডাল (সুপ), চাটনি (প্রলেহ), কঢ়ী (সদিকা), দই সব্জির কটী (দধিশাকজা), সিখরন (সিখরিণী), শরবৎ (অবলেহ), বাটী (বালকা), মোরব্বা (ইক্ষু খেরিণী), শর্করা যুক্ত (ত্রিকোণ), বড়া (বটক), মঠরী (মধু শীর্ষক), ফেনি (ফেণিকা), পুরী বা লুচি (পরিষ্টশ্চ), খজলা (শতপত্র), ঘেওয়ার (সধিদ্রক), মালপুয়া (চক্রাম), চোলা (চিন্দ্রিকা), জিলিপি (সুধাকুন্ডলিকা), মেসু (ধৃতপূর), রসগোল্লা (বায়ুপূর), চন্দ্রকলা (পগী হই), মহারায়তা (দই), থুলি (স্থূলী), লবঙ্গপুরী (কর্পূরনাড়ী), খুরমা (খণ্ড মণ্ডল), ডালিয়া (গোধূম), পরিখা, সুফলটয়া (মৌরী যুক্ত), বিলসারু (দধিরূপ), লাড্ডু (মোদক), শাক, অধানৌ আচার (সৌধান), মোঠ (মণ্ডকা), পায়েস (ক্ষীর), দই, গাওয়া ঘি, মাখন (হৈয়ঙ্গপীনম), মালাই (মন্ডুরী), রাবড়ি (কূপিকা), পাপড় (পপট), সীরা (শক্তিকা), লস্যি (লসিকা), সুব্রত, মোহন (সংঘায়), সুপারি (সুফলা), এলাচ (সিতা), ফল, তাম্বুল, মোহন ভোগ, লবণ, কষায়, মধুর, তিক্ত, কটূ, অল্প

 

জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে ঘরে ঘরে পূজার আয়োজন করা হয়। ভক্তরা নিজেদের সাধ্যমত শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় খাবার সমূহ গোপালকে নিবেদন করেন। তালের বিভিন্ন খাবার, দুধ নির্মিত ক্ষীর ও মিষ্টি, বিভিন্ন ভাজা মিষ্টি প্রসাদরূপে নিবেদিত হয়। এইরকমই কিছু খাবারের রেসিপি আজ দেওয়া হল।


শ্রীখণ্ডঃ




শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় খাবারের মধ্যে অন্যতম হল শ্রীখণ্ড। গুজরাত ও মহারাষ্ট্রর অধিবাসীরা পৃথকভাবে এই খাবার সৃষ্টি করার দাবী জানিয়ে আসেন। কিন্তু এই অতি সুস্বাদু খাবারের উৎপত্তির সঠিক ইতিহাস জানা যায় না। তবে K.T.Acharya লিখিত “The Historical Dictionary of Indian Food”  নামক বইয়ে উল্লেখ আছে যে  শ্রীখণ্ড গুজরাতের খাবারের সাথে শ্রীখণ্ড মিষ্টি হিসাবে পরিবেশিত হত প্রায় ৫০০ খ্রিষ্টপূর্ব থেকেআবার বঙ্গদেশেও প্রায় ১২০০ খ্রীপূ শিখরিণী বা শিখারিনি নামে দই ও মশলার সংমিশ্রণে তৈরি বিশেষ মিষ্টি তৈরি হত বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। যা শ্রীখণ্ড রূপেই চিহ্নিত করা হয়।  

 

উপকরণঃ

  • টক দই - ১ কেজি
  • গুঁড়ো চিনি/৫ চামচ
  • জাফরান - চিমটি, ( উষ্ণ দুধে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে)
  • এলাচ গুঁড়ো - ২ চামচ
  • জায়ফল গুঁড়ো - ১ চামচ
  • কাজু, আমন্ড ও পেস্তা – ২/৩ চামচ


প্রণালী

  • দই পাতলা মসলিন কাপড়ে মুড়ে ২ ঘণ্টা ঝুলিয়ে রেখে জল সম্পূর্ণ ঝরিয়ে নিতে হবে।
  • ঘন পনিরের মত দই পাওয়া জন্য ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা জল ঝরানো দই ফ্রিজে রাখতে হবেপ্রয়োজনে ভারী জিনিস চাপা দিয়ে অতিরিক্ত জল বার করে দিতে হবে।
  • এরপর ওই দইয়ের সঙ্গে জাফরান ভেজানো দুধ, এলাচ গুঁড়ো, চিনি এবং জায়ফল পাউডার যোগ করে ভাল করে ফেটাতে হবেফেটাতে হবে ততক্ষন যতক্ষণ না দই মিহি ক্রিমে পরিণত হয়।
  • এরপর একটি পাত্রে এই শ্রীখণ্ডকে কাজু, আমন্ড ও পেস্তার সংমিশ্রণ দিয়ে পরিবেশন করতে হবে

গোপালকলাঃ

 

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রেম ও উদারতার প্রতীকরূপে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে পূজিত হন। কৃষ্ণের ভক্তবাৎসল্য ও ভক্তকূলের প্রতি ভালোবাসার কাহিনী যুগ যুগ ধরে প্রচলিত। কৃষ্ণের লীলাভূমি ব্রজের অধিবাসীরা অত্যন্ত দরিদ্র ছিলেন। প্রত্যেকের প্রতিদিন যাতে অন্তত পেটভর্তি দুবেলা খাবার জোটে এবং যাতে প্রতিটি মানুষের গৃহীত খাবারের মধ্যে এক সামঞ্জস্য বজায় থাকে তাই ব্রজবাসীরা এক নিয়ম তৈরি করেছিলেন। প্রত্যেকের কাছে যা যা খাবার থাকত তাই একত্রিত করে একসাথে মিশিয়ে একটি পদ তৈরি করে সকলে সমান ভাগে ভাগ করে খেতেন। এই খাবার “গোপালকলা” নামে পরিচিতি লাভ করে। টক, ঝাল, মিষ্টি, নোনতার সমাহারে তৈরি এই খাবারটি অত্যন্ত উপাদেয় ও সুস্বাদু হয়। কথিত আছে এক জায়গায় একটি মাটির হাঁড়িতে প্রত্যেকে নিজেদের ক্ষমতা ও সাধ্যানুযায়ী খাবার দিয়ে যেতেন। খাবারের সময় সমস্ত খাবারের মিশ্রণ তৈরি করা হত। কিন্তু বালকৃষ্ণ নিজের সঙ্গীসাথীদের নিয়ে এই মাটির হাঁড়ি ভেঙ্গে খাবার চুরি করে খেয়ে ফেলতেন। পরবর্তীকালে মহারাষ্ট্রে জন্মাষ্টমী উৎসবের প্রধান অঙ্গ রূপে “দাহিহাণ্ডি” প্রথার প্রচলন হলে মাটির হাঁড়িতে এই গোপালকলা ভরে হাঁড়ি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সেই হাঁড়ি ভেঙ্গে অষ্টমী পুজার সূচনা করা হয়।

 

উপকরনঃ

  • চিড়ে – ৫০০ গ্রাম
  • ভাজা ছোলার ডাল – ১০০ গ্রাম
  • ভেজানো চিনে বাদাম – ১০০ গ্রাম
  • কাজু, কিশমিশ – ৫০ গ্রাম 
  • তাজা দই – ১০০ গ্রাম
  • চিনি – ৫০ গ্রাম
  • নুন – ১০ গ্রাম
  • কাঁচা লঙ্কা কুচি – ২৫ গ্রাম
  • লেবুর রস – আধা কাপ
  • ফলের ছোটছোট টুকরো – মূলত শশা, পেয়ারা, কলা, বেদানা, আঙুর
  • নারকোল কুচি – ১০০ গ্রাম
  • আদা কুচি – ২৫ গ্রাম
  • ধনেপাতা কুচি – ৫০ গ্রাম
  • লেবুর আচার – ১ চামচ
  • ভাজা মশলা – ২৫ গ্রাম

 

প্রণালীঃ

  • ভাজা মশলা -  জিরে, ধনে, শুকনো লঙ্কা, মৌরি, মেথি, সর্ষে, জোয়ান, দারচিনি, এলাচ অল্প পরিমাণে নিয়ে শুকনো কড়াইতে ভেজে নিয়ে গুঁড়ো করে নিতে হবে।  
  • চিড়ে ভিজিয়ে ধুয়ে জল ঝড়িয়ে নিতে হবে।
  • ভেজানো চিড়ের মধ্যে সমস্ত উপকরণ ভালো করে মিশিয়ে পরিবেশন করতে হবে।              

 



কলমে - বাণী মিত্র 

 

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন