অন্য জীবন - আনন্দ গোপাল গরাই



ক্লান্ত হয়ে অফিস থেকে ফেরে দীপায়ন। জামা কাপড় না বদলেই সোফায় বসে একটু জিরিয়ে নেয় সে। এই সময় এক কাপ চা হলে ক্লান্তিটা কাটত ওর। কিন্তু কে করে দেবে চা? বৌ বৃতাও তো হাউস ওয়াইফ নয়। সেও চাকুরে। কোনদিন বৃতা আগে ফেরে, কোনদিন দীপায়ন আগে। বৃতা আগে ফিরলে অবশ্য চা বানিয়ে দেয় একটু বিরক্তভাবেই। ভালোবাসার মধু না থাকলেও তাই গিলে নেয় দীপায়ন। কিন্তু আজ মার্কেটিং-এ গেছে বোধহয়। ফিরতে দেরি হবে। নিজেই এক কাপ চা বানিয়ে খায় দীপায়ন।

ছেলেমেয়ে দুটোর সঙ্গে ওঘরে লুডো খেলছে কাজের মেয়ে মিনু। ওরা অফিস গেলে মিনুই দেখাশুনা করে ওদের। বাপি অফিস থেকে ফিরেছে জেনেও কাছে যায় না ওরা। একটু পরেই বাড়ি ফেরে বৃতা। চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। দীপায়নের দিকে না তাকিয়েই ফ্রেশ হবার জন্যে বাথরুমে ঢোকে সে। তার আগে সোম আর সোমাকে ধমক দেয় পড়তে বসার জন্যে। কিছুক্ষণের মধ্যে রান্নার মাসি এসে হাজির হয়। ওকে রান্নার ফরমাস জানিয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে মোবাইল ঘাঁটতে থাকে বৃতা। সোফায় বসে নিজের মনে মোবাইল ঘেঁটে চলে দীপায়নও। দুজনেই চোখের আড়ালে। স্বামী স্ত্রী নয়, যেন ভাসুর ভাদ্রবৌ। ওদেরই বা দোষ কী! ওরা দুজনেই তো টাকা রোজগারের যন্ত্র। পাশাপাশি বসে দুজনে যে একটু গল্প করবে, একটু সুখ দুঃখের কথা বলবে সেসব পাট উঠে গেছে ওদের জীবন থেকে। জীবনটা হয়ে গেছে একেবারে রুটিনে বাঁধা।

ছেলেমেয়েগুলোও যেন ভুলে গেছে মা বাবার আদর। স্বামী স্ত্রীর জীবন থেকেও যেন দূর হয়ে গেছে যাবতীয় রোমান্স, ভালোবাসায় লেগেছে ভাটার টান। জীবনটা চলছে রেলগাড়ির মতো এক অদৃশ্য লাইন ধরে। কোন্ স্টেশনে গিয়ে থামবে জানে না ওরা কেউই। জানেন একমাত্র বিধাতাই!



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন