আকাশে গুড়ুম - গুড়ুম আওয়াজ শোনা মাত্রই দৌড়ে গিয়ে তিন তলার ছাদে জামা কাপড় আনতে, হুট করে দাড়িয়ে হাত দুটি খুলে আকাশের দিকে একভাবে তাকিয়ে রইল সায়নী। আজ তার নবমতম বিবাহবার্ষিকী। সৌরনীলের মনেও নেই হয়ত। অফিস থেকে একবার ফোন করেছিল বটে, কিন্তু সে তার দরকারি কাগজের ছবি তুলে পাঠানোর জন্য। অফিসে তার এখন খুব চাপ। সামনে তার নতুন প্রজেক্টের কাজে দিন পঁচিশের জন্য ব্যাংকক যেতে হবে। গায়ে দু - এক ফোঁটা বৃষ্টি পড়তেই নিচে নেমে আসল সে। শ্বশুর মশাইকে চা দিয়েই রান্না ঘরে ঢুকল আজকের স্পেশাল দিনের ডিনার রান্না করবে বলে। আজ সে সম্পূর্ণ সৌরনীলের পছন্দের বাসন্তী পোলাও ও ছানার কোপ্তা কারি রান্না করল। আধুনিক ফুল দিয়ে সাজাল তার বেডরুমের টেবিলটা। হঠাৎ ফোন বেজে উঠল, সৌরনীল ফোন করেছে হয়ত। মনে পড়লো তাহলে! ফোন হাতে নিয়ে দেখে মা।
"হ্যাঁ মা বলো", গলা শুকিয়ে বলল সে। ওপার থেকে মা গলা শুনেই বলল, "কি হয়েছে মানি, তোর গলার আওয়াজটা এরকম লাগছে কেন?"
ছোট থেকেই খুব বদমেজাজি সায়নী। তার কোনো কিছুতেই পোষায় না। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে সে, কখনোই কারোর তোয়াক্কা না করে চলার মেয়ে সে। পড়াশোনায় খুব ভালো হওয়ার
কারণে মা বাবা তাকে আর এই ব্যাপারে কিছু বলত না। বি এ সেকেন্ড ইয়ারে পড়তে গিয়ে
আলাপ সৌরনীলের সঙ্গে।
বন্ধুত্বের সাত মাস পরেই দুজন দুজনের প্রেমে পড়ে তারা। প্রথম দিকে সায়নীর মা
বাবার আপত্তি হলেও সৌরনীলকে দু’ একবার
দেখার পর আর কোনো আপত্তি করেননি তারা। দীর্ঘ চার বছরের সম্পর্কের পর বিয়ে করে
তারা।
কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে দরজা
খুলল সায়নী। আজ খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছিল সৌরনীলকে। বাড়ি ঢুকেই সে সোজা বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বাবার ঘরে
ঢুকে বিছানায় বসল। বাবা তখন চেয়ারে বসে খবরের
কাগজের পাতা উল্টোতে উল্টোতে জিজ্ঞেস করলেন, " কি রে কিছু বলবি?"
একটু
অন্যমনস্ক হয়ে সৌরনীল বলে উঠল " না বাবা, ভাবছি
অনেকদিন তো হল, অনেক চিকিৎসাও করা হল, আর এসব না করে এবার একটা সিদ্ধান্তে আসা যাক।"
বিয়ের নয় বছর হয়ে গিয়েছে
কিন্তু অনেক ডাক্তার ও চিকিৎসার পরেও তাদের কোনো সন্তান হয়নি। চেন্নাই, বেঙ্গালুরু ও অনেক বড় বড় জায়গায় গিয়ে টেস্ট করিয়েও কোনো লাভ মেলেনি
তাদের। তাই আজও সায়নী নিজের একাকীত্ব কাটিয়ে উঠতে পারেনি। প্রথমদিকে তাদের অনেক মানসিক চাপের
মধ্যে কাটাতে হয়েছে কিন্তু এখন আর এই বিষয়ে কোনোরকম আলোচনা করতে দেখা যায়না।
তাহলে আজ হঠাৎ কেন? সায়নীকে কুরে কুরে খেতে লাগল
ভাবনাগুলো। তাহলে কি সৌরনীল এই নয় বছরের
বিবাহের সম্পর্ক থেকে বেরাতে চাইছে? তারপর তার কানে এল সে আজ অফিসের এক ভদ্রলোকের সাথে এক অনাথ আশ্রমে গিয়ে একটি
ছোট্ট মেয়েকে দেখে এসেছে। সে চায় কালকের মধ্যেই সায়নীকে নিয়ে সেই বাচ্চাটিকে
দেখে আসতে ও আইনি
ব্যবস্থা সম্পূর্ন তৈরি করতে। সায়নী বাইরে থেকে সব কথা শুনে দৌড়ে
নিজের ঘরে গিয়ে কাঁদতে থাকে। নিজেকে
দোষ দিতে থাকে যে সে সৌরনীলকে ভুল বুঝেছে। সৌরনীল বাবার অনুমতি নিয়ে নিজের ঘরে এসে
সায়নীকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে বলে, “আমাকে ক্ষমা
করো। আমি আজ তোমাকে
একটি বারও শুভেচ্ছা জানাতে পারিনি। আসলে তুমি তো
জানো অফিসের কত চাপ।“ সায়নী হাত দিয়ে সৌরনীলকে থামিয়ে, আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন