সত্যজিৎ রায়ের অমর সৃষ্টি প্রফেসর শঙ্কুকে চেনেন না এমন বাঙালি সম্ভবত বিরল| আপাদমস্তক বিজ্ঞানপ্রেমী এই চরিত্রটিকে নিয়ে সত্যজিৎ রায় একটি গল্প লেখেন “শঙ্কুর পরলোকচর্চা” যেখানে দেখানো হয় যে শঙ্কু নিজে শুধু যে আত্মায় বিশ্বাসী তাই নয়, সেই বিশ্বাসের ভিত্তিতে তিনি আত্মাকে ইহলোকে নামানোর জন্য অন্যান্য বিজ্ঞানীদের সঙ্গে মিলে একটি যান্ত্রিক মিডিয়ামও তৈরি করেছেন!সেইসাথে অন্যান্য সংশয়ী বিজ্ঞানীদের “সন্দেহবাতিকগ্রস্ত” বলেছেন |
আমি দীর্ঘ এক দশক ধরে পদার্থবিদ্যা চর্চা করছি | শঙ্কুর গল্পের এককালীন ভক্ত হিসেবে তাই বলতে দুঃখ লাগলেও পাঠকের কাছে সততার খাতিরে স্বীকার না করে পারছি না যে শঙ্কুর এই গল্পটি রীতিমতো অবৈজ্ঞানিক | গল্পটিতে যারা শঙ্কুর কৃতিত্বকে সন্দেহ করেছিলেন তাঁরাই প্রকৃত বিজ্ঞানমনস্ক ছিলেন, কারণ আত্মার ধারণাকে বিজ্ঞান স্বীকার করেনা |
তবে একটা যে ব্যাপারে সত্যজিৎ রায় ভুল করেননি সেটা হল আত্মা ও পরলোক সম্পর্কে মানুষের অপার কৌতুহল | শঙ্কুর গল্পে আত্মার সত্যতা সন্দেহতীতভাবে প্রমাণ হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু বাস্তব দুনিয়ায় এই নিয়ে বিতর্ক আজও বিদ্যমান |
আজ এর সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয়েই আলোচনা করব যেটা বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী উভয় পক্ষের মধ্যেই আগ্রহ ও কৌতূহলের উদ্রেক করেছে—মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতা বা near-death experience, যেটাকে কেউ-কেউ আত্মা এবং পরলোকের অস্তিত্বের স্বপক্ষে জোরালো প্রমাণ হিসেবে দাবী করেছেন ।
আমার নিজের এই ব্যাপারে কৌতূহল সৃষ্টি হয় অন্তর্জালে আবিষ্কৃত একটি প্রবন্ধের [১] মাধ্যমে, যার শিরোনাম ছিল “The Near Death Experience as Evidence for Life After Death”; লেখক ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে দর্শন ও ধর্মপাঠের অধ্যাপক । প্রবন্ধের একেবারে গোড়াতেই তিনি দাবী করেছেন যে মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতা কোনো স্বপ্ন কিংবা হ্যালুসিনেশন নয়, বরং এই বিষয়ে বর্তমানে উপলব্ধ তথ্য এই ইঙ্গিতই দিচ্ছে যে সেটা বাস্তব ।
বলা বাহুল্য, এটা পড়ার পর আমাকে প্রবন্ধটা পড়ে দেখতেই হল । অস্বীকার করব না, পড়ে প্রথমটায় একটু হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু তারপর বিষয়টি নিয়ে আরও যত গভীরে প্রবেশ করতে লাগলাম ততই অধ্যাপক মহাশয়ের দাবীর ভিত্তি নিয়ে সংশয় উৎপন্ন হতে লাগল । আপাতত এই উত্তর লেখার মুহূর্তে আমার যা মনে হচ্ছে—জ্ঞানী মানুষরাও motivated reasoning এর ফাঁদে পড়তে পারেন; সংশয়বাদ তাই সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ।
তবে পাঠকেরা যাতে নিজেরা বিচার করতে পারেন সেই সুবিধার্থে আমি প্রথমে মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতা যে আত্মা ও পরলোকের অস্তিত্বের ইঙ্গিত এর স্বপক্ষে যত প্রমাণ আছে বলে প্রবন্ধে দাবি করা হয়েছে সেগুলো তুলে ধরব, তারপরে সেইসব প্রমাণের বিকল্প ব্যাখ্যা কী-কী হতে পারে তার আলোচনায় যাব । পাঠক কোনদিকে ঝুঁকবেন সেটা সম্পূর্ণ তাঁর সিদ্ধান্ত ।
মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতা কেন বাস্তব?
১. ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হওয়া সত্ত্বেও মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতার অধিকাংশ বিবৃতিরই একে-অপরের সাথে আশ্চর্য মিল পাওয়া যায়— দেহ থেকে মুক্ত হয়ে ভেসে বেড়ানোর অনুভূতি, সমস্তরকম যন্ত্রণাবোধ ও কষ্ট থেকে মুক্তির অনুভূতি এবং একটি নিরাকার আলোর সত্তার উপস্থিতি । এই সত্তার উপস্থিতিতে এক অবর্ণনীয় প্রশান্তি ও প্রেমের অনুভূতির কথাও পাওয়া যায় অনেকের বিবৃতিতে । মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতা যদি কেবল স্বপ্ন কিংবা হ্যালুসিনেশনই হয়ে থাকে তবে তাদের মধ্যে এতখানি মিল কীভাবে থাকা সম্ভব? বিশেষ করে সেই মিল যখন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে লক্ষিত হচ্ছে ।
২. আমরা যখন ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখি তখন আমাদের চোখের নড়াচড়া ও পাতার কম্পন লক্ষিত হয়, যেটাকে “Rapid eye movement” (REM) হিসেবে অভিহিত করা হয় । হ্যালুসিনেশনকে হয়তো আমরা স্বপ্ন বলে মনে করিনা কারণ মানুষ জাগ্রত অবস্থায়ও হ্যালুসিনেট করতে পারে কিন্তু হ্যালুসিনেশন মূলত একধরণের vivid dream; তাই চোখ-বন্ধ অবস্থায় হ্যালুসিনেশনের ক্ষেত্রেও REM শুধু লক্ষিতই হবে না, বরং তা আরও স্পষ্ট হয়েই ধরা দেওয়া উচিত । অথচ মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতার সময়ে (অর্থাৎ যে সময়টাতে তাঁরা দেহমুক্ত হয়ে ভেসে বেড়িয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা পরবর্তীকালে দাবি করেন) কারও ক্ষেত্রেই এরকম REMএর দরুন অক্ষিপল্লবের কম্পন দেখা যায়নি ।
৩. মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিল আছে এমন উপলব্ধি অনেক সময় বিভিন্নরকম সাইকেডেলিক বা হ্যালুসিনোজেনিক ড্রাগের প্রভাবেও ঘটতে পারে বলে যুক্তি দেওয়া হয় । কিন্তু বাস্তবে এমন অনেকেই মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন যারা কখনই এমন কোনো ড্রাগ গ্রহণ করেননি ।
৪. অন্ধ কিংবা জন্মান্ধ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতার বিবৃতি বোধকরি সবচাইতে চাঞ্চল্যকর, কারণ এই অভিজ্ঞতার সময়ে তাঁরা প্রথমবার দেখতে পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন । শুধু তাই নয়, তাঁরা যা-যা দেখেছেন ও যেখানে দেখেছেন বলে বর্ণনা দিয়েছেন, সেগুলো বাস্তবেই ঠিক সেখানেই ছিল বলে জানা গিয়েছে । মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতা স্রেফ স্বপ্ন বা হ্যালুসিনেশন হলে এমনটা কীভাবে সম্ভব?
৫. যারা অন্ধ নন, তাঁদের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতা চলাকালীন তাঁরা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের যেমনটি দেখেছেন, তাঁরা সত্যিই ওই সময়ে ওই অবস্থাতেই ছিলেন । এমনকি তাঁদের নিজের শরীরের সাথে কী করা হচ্ছে সেটাও তাঁরা তৃতীয় ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন । শুধুমাত্র স্বপ্ন বা হ্যালুসিনেশনের ভিত্তিতে এর কোনো ব্যাখ্যা আছে কি?
৬. সবশেষে, মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতালব্ধ ব্যক্তিরা বেঁচে ওঠার পর তাঁদের ব্যক্তিত্বে অভাবনীয় পরিবর্তন লক্ষিত হয়—মৃত্যুভয় থেকে চিরতরে মুক্তি, ঈশ্বরে অবিশ্বাস থেকে গভীর বিশ্বাসে উত্তরণ, জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া, মৌলবাদীদের ক্ষেত্রে ধর্মীয় সংকীর্ণতা ও বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে প্রেমের অনুভূতিতে ভরে ওঠা । প্রশ্ন ওঠে— স্বপ্ন বা হ্যালুসিনেশনের কি এতটা ক্ষমতা থাকে? মানুষের মৌলিক ধ্যান-ধারণা ও বিশ্বাস এইভাবে আমূল বদলে যাওয়া কি একমাত্র বাস্তব অনুভূতির দ্বারাই সম্ভব নয়?
পাঠক হয়তো এতদূর অবধি পড়ে বুঝতে পারছেন কেন আমি প্রবন্ধটা পড়ে খানিকটা হকচকিয়ে গিয়েছিলাম । তবে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া যাই হোক, উপরোক্ত দাবিগুলিকে যে আমি নিঃসংশয়ে গ্রহণ করিনি সেটা বলা বাহুল্য । বরং মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতার ব্যাপারে আরও একটু খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিই। বার্তার মাধ্যমে একপ্রস্থ আলোচনাও হয় এক বন্ধুর সাথে। তারই ভিত্তিতে যে-যে প্রত্যুত্তরে আপাতত উপনীত হয়েছি সেগুলো নিচে তুলে ধরলাম—
১. মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতা সকলের জন্য সমান কেন?
এটা আপাতদৃষ্টিতে যতখানি আশ্চর্যের বলে মনে হয় আদতে ততটা নয় । কারণ জাতি-ধর্ম-বর্ণের বাইরে আমাদের একটা সাধারণ পরিচয় আছে—আমরা সবাই হোমো সেপিয়েন্স প্রজাতির প্রাণী । এর অর্থ আমাদের সকলের মস্তিষ্কেরই কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে । স্নায়ুবিজ্ঞানীরা ল্যাবে ইঁদুরদের উপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন যে মৃত্যুর পূর্বে তাঁদের মস্তিষ্কে স্নায়বিক গতিবিধি অস্বাভাবিক মাত্রায় বৃদ্ধি পায় [২] এবং তাঁরা একটি hyper-alert অবস্থায় উপনীত হয় [৩]। মস্তিষ্কের এই অবস্থার কারণেই মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতায় লক্ষিত নিরাকার আলোকসত্তার অনুভূতি হওয়া সম্ভব [৪]। সুতরাং, সকলের ক্ষেত্রেই একই অভিজ্ঞতার কারণ আমরা সকলেই মনুষ্যপ্রাণী।
এছাড়া যে কথাটা প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়নি তা হল— এই অভিজ্ঞতা সকলের জন্যই আনন্দের কিংবা প্রশান্তির নয়; কারও-কারও ক্ষেত্রে এটা অত্যন্ত ভয়াবহ হয় এমন নজিরও আছে [৫] । কিন্তু অধ্যাপক সেটা বেমালুম ভুলে গিয়েছেন ।এর থেকে সন্দেহ হয় যে এই অভিজ্ঞতার নেপথ্যে একটা সমাজ-সাংস্কৃতিক প্রভাবও কাজ করে।
২.মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতায় REM কেন নেই ?
এক্ষেত্রে অধ্যাপক মশাইয়ের যুক্তি অনুযায়ী REMএর উপস্থিতি স্বপ্ন/হ্যালুসিনেশনের জন্য আবশ্যক; REM না দেখা গেলে মনে করে নিতে হবে তা স্বপ্ন/হ্যালুসিনেশন নয় । কিন্তু এই দাবি প্রশ্নাতীত নয় । মানুষ যখন সাধারণ অবস্থায় ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে (এবংREM দেখা যায়) তখন তাঁর মস্তিষ্ক জীবন-মরণ সংগ্রামে লিপ্ত নয়; উল্টোদিকে মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে ঠিক এটাই ঘটছে ।এরকম চরম পরিস্থিতির ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অবস্থার নিয়ম খাটবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই । এমনটা হতেই পারে যে জীবন-মরণ সংগ্রামের ক্ষেত্রে REM দেখা যাবে না ।
এছাড়া হ্যালুসিনেশনের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে যে আমাদের মস্তিষ্কের গতিবিধি অস্বাভাবিক মাত্রায় বৃদ্ধি পায় [৬] (১. নং পয়েন্ট দ্রষ্টব্য) । সুতরাং মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতা যে কোনোভাবে হ্যালুসিনেশনের থেকে সম্পূর্ণই ভিন্ন কোনো অনুভূতি এমনটা মনে করার কারণ নেই ।
৩. ড্রাগ ছাড়াও মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতা কীভাবে ?
কিন্তু হ্যালুসিনেশনের জন্য তো ড্রাগ নেওয়া প্রয়োজন! তাই নয় কি? দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, এইখানে অধ্যাপকমশাই একটু অসততার পরিচয় দিয়েছেন । তাঁর এইটুকু অন্ততঃ জানা উচিত ছিল যে হ্যালুসিনেশনের জন্য ড্রাগ আবশ্যিক নয় । প্রচন্ড জ্বরের কারণেও মানুষ হ্যালুসিনেট করতে পারে; আবার ডিমেনশিয়া কিংবা স্কিৎজ়োফ্রেনিয়ার মতো মানসিক অসুস্থতার ক্ষেত্রেও হ্যালুসিনেশন সম্ভব [৭]।
দ্বিতীয়ত, যে ধরণের হ্যালুসিনোজেনিক ড্রাগ গ্রহণের ফলে মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতার সাথে মিল আছে এমন হ্যালুসিনেশন হওয়া সম্ভব, যথা কেটামিন, এলএসডি, ও DMT, তাঁদের মধ্যে DMT আমাদের মস্তিষ্কেই উৎপন্ন হয় [৮] । অর্থাৎ বাইরে থেকে ড্রাগ গ্রহণ করার আবশ্যিকতা নেই । তাই এটা একেবারে অসম্ভব নয় যে মৃত্যু-পূর্ব পরিস্থিতিতে আমাদের মস্তিষ্কে DMTর পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আমরা এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হই [৯] , যদিও এর স্বপক্ষে আপাতত কোনো প্রমাণ নেই ।
৪. জন্মান্ধ ব্যক্তি দেখতে পান কীভাবে?
এই দাবিটি কতটা প্রশ্নাতীত তা নিয়ে আমি সন্দিহান কারণ অধ্যাপকমশাই তাঁর প্রবন্ধে কেবল একটি বইয়ের উল্লেখ করেছেন মাত্র । কোনো গবেষণাপত্রের উল্লেখ নেই । উপরন্তু আমি নিজে এই বিষয়ে ঘাঁটতে গিয়ে প্রথমেই যে গবেষণাপত্রটির সন্ধান পেলাম [১০] তাতে এই “দেখতে” পাওয়ার বিষয়ে পূর্বে উপলব্ধ সমস্ত বিবৃতিকে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে এবং পরিবর্তে “অতীন্দ্রিয় সচেতনতা”র তত্ত্বের সাহায্যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, যাকে স্পষ্টতই “দর্শন”এর থেকে ভিন্ন বলে দাবি করেছেন গবেষকরা । যা মনে হচ্ছে, এই মুহূর্তে অন্ধ মানুষের দৃষ্টিলাভের বিষয়ে কোনো পক্ষেই জোরালো প্রমাণ নেই ।
৫. পরিজনদের দেখতে পাওয়া ও তাঁদের নির্ভুল বর্ণনা কীভাবে সম্ভব?
এই দাবি নিয়েও একইরকম সংশয়ের অবকাশ থেকে যাচ্ছে, কারণ এই ক্ষেত্রেও প্রবন্ধে কোনো নির্দিষ্ট সূত্রের উল্লেখ নেই; বরং মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতায় মানুষ আদতেই দেহবিচ্যুত হয়ে ভেসে বেড়ায় কিনা সে বিষয়ে পরীক্ষা চালিয়ে (পরীক্ষায় রোগীদের এমন কিছু জিনিসের বর্ণনা দিতে বলা হয় যা একমাত্র শরীর ছেড়ে ভেসে উঠলে দেখতে পাওয়া সম্ভব) নেতিবাচক ফলই পাওয়া গিয়েছে [১১]। এই দাবির ক্ষেত্রেও তাই সন্দেহ পোষণ করতেই হচ্ছে ।
৬. ব্যক্তিত্বে আমূল পরিবর্তন কীভাবে?
এক্ষেত্রেও অধ্যাপকমশায় ছলনার আশ্রয় নিয়েছেন কারণ তাঁর দাবি অনুযায়ী হ্যালুসিনেশন কারও ব্যক্তিত্বে আমূল পরিবর্তন আনতে পারেনা । অথচ হ্যালুসিনোজেনিক ড্রাগ সেবনের ফলে চিন্তাধারায় আমূল পরিবর্তন, ধর্মীয় অভিজ্ঞতা, অথবা জীবন-বদলে-দেওয়া উপলব্ধির নজির মোটেই বিরল নয় [১২]। এমনকি ধ্যানের মাধ্যমেও এমন অভিজ্ঞতা লাভ করা যায় । এছাড়া ড্রাগ নিয়ে ৩ নং পয়েন্টে আগেই বলেছি যে ড্রাগ সেবন করাও আবশ্যিক নয় এমন অভিজ্ঞতার জন্য ।
তবে কী দাঁড়ালো শেষমেশ?
আমার ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ অনুযায়ী কেবল এটুকুই বলতে পারি— মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতার প্রকৃতি যাই হোক, তা মৃত্যুর পূর্বের বা মৃত্যু-প্রান্তিক উপলব্ধি এবং এগুলি “ক্লিনিকাল ডেথ” এর পরবর্তী মিনিটকয়েকের বেশি স্থায়ী হয় না । সেক্ষেত্রে আমাদের “ক্লিনিকাল ডেথ”এর সংজ্ঞা সংশোধন করা উচিত, মৃত্যু-পরবর্তী পরলোকের সন্ধান পেয়ে গেছি ভেবে নাচানাচি নয় । অভিজ্ঞতালব্ধ ব্যক্তি যদি জীবিত ফিরে এসে থাকেন তবে এটা মনে করাই সঙ্গত যে তাকে “মৃত” বলে মনে করা হলেও তিনি আদতে মারা যাননি । সুতরাং তিনি যা দেখেছেন তা মৃত্যুর “এপার” থেকেই দেখেছেন । তাঁর মিনিটকয়েকের এপারের অভিজ্ঞতাকে মৃত্যুর “ওপারের” অনন্ত সত্য বলে মেনে নেওয়া চলে না ।
অন্যদিকে আপনি যদি বিশ্বাসী হন, তবে মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে আপনার ইতিমধ্যেই বিশ্বাস আছে । সেক্ষেত্রে আদতে “মৃত্যু” বলে কিছু নেই, তা কেবল আমাদের আত্মার দেহত্যাগ মাত্র । তার পরবর্তীতে আপনি কোন ঈশ্বরের দেখা পাবেন, সেটা হয়তোবা আপনার বিশ্বাসনির্ভর, হয়তো নয় ।
তবে মানবমস্তিষ্কের রহস্য যে আমাদের এই মহাবিশ্বের রহস্যের চেয়ে কিছু কম দুর্ভেদ্য নয় সেটা স্বীকার না করে উপায় নেই!
ফুটনোটঃ
[১]১ https://skepdic.com/nde.html
[১]২ https://www.bbc.com
[১] https://philosophynow.org
[২] https://www.livescience.com
[৩]https://www.nationalgeographic.com
[৪] https://bigthink.com/surprising-science
[৫] https://www.scientificamerican.com
[৬] https://www.ncbi.nlm.nih.gov
[৭] https://www.bbc.com/
[৮] https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/31249368/
[৯]https://www.scientificamerican.com/article/new-clues-found-in-understanding-near-death-experiences
[১0] Ring, K., Cooper, S. Near-Death and Out-of-Body Experiences in the Blind: A Study of Apparent Eyeless Vision. Journal of Near-Death Studies 16, 101–147 (1997)
[১১] https://skepdic.com/nde.html
[১২] https://www.bbc.com
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন