ভেট - বিজয় লক্ষ্মী মুখার্জী


 

আগ্রার লালকেল্লার অন্দরমহলের অলিন্দে আজ একাকিনী দন্ডায়মান মালেকা বেগম জাহানারা। পরনে মসলিন, মাথায় বাদলকিনারী ওড়নার আড়ালেও কপালের কুঞ্চন দৃশ্যমান গুপ্তচর খবর এনেছে, আওরঙ্গজেব আগ্রার পথে, মনে অস্বস্তি, আজ সকাল থেকেই ডান চোখ নাচছে, বদনসীবীর আর কত বাকি আল্লাহ্!

পাশের প্রকোষ্ঠে বৃদ্ধ শাহজাহান, গবাক্ষপথে তাকিয়ে আছেন তাজমহলের দিকে, ওখানে চিরশান্তিতে নিদ্রিত আম্মিজান মমতাজমহল । সত্যিই কি শান্তিতে? আম্মিজানের মৃত্যুর পর পত্নী প্রেমিক সম্রাট প্রতিটা রাত কাটিয়েছেন নিত্যনতুন নারীসঙ্গে। শোক ভুলতে? জানেন না জাহানারা। প্রেমের কি বোঝেন সম্রাট ? জাহানারা ভোলেননি নিষ্ঠুর সম্রাটের ইশারায় প্রাণ দিয়েছিল প্রেমিক ছত্রশাল তবু দাগ লাগতে দেয়নি শাহজাদীর নামে। মৃত্যুশয্যায় আম্মিজান অনুরোধ করেছিলেন পিতাকে দেখভাল করার, অনুরোধ রেখেছেন জাহানারা। আওরঙ্গজেবের বদৌলত বৃদ্ধ অসহায় গৃহবন্দী পিতার একমাত্র সঙ্গী আজ জাহানারা, পিতার খাতিরে মেনে নিয়েছেন স্বেচ্ছাবন্দিত্ব। 

 হঠাৎ ভেরীর শব্দ! বিচলিত হন জাহানারা। জয়ধ্বনি হচ্ছে কি সম্রাটের নামে? না, না,এ অসম্ভব কল্পনা! তবে কি আওরঙ্গজেব এসে গেলো ? এত দ্রুত? ওর পক্ষে সবই সম্ভব! পদশব্দে ফিরে তাকালেন জাহানারা‌,"একি! আওরঙ্গজেব তুমি? বিনা এত্তেলাতে!

এই ভগিনীটিকে পারতপক্ষে এড়িয়ে চলেন আওরঙ্গজেব। "পিতার কাছে পুত্র আসছে, এত্তেলা কিসের ভগিনী!

কন্ঠস্বর কানে যেতে ফিরে তাকালেন শাহজাহান, আওরঙ্গজেব সেলাম জানালেন, হাতের স্বর্ণথালিকায় পিতার জন্য ভেট; পুত্রকে দেখে সম্রাটের মনে মুক্তির ক্ষীণ আশা জেগে ওঠে। এগিয়ে এসে স্বর্ণথালিকার রেশমী আচ্ছাদন সরালেন সম্রাট, মুহূর্তের স্তব্ধতা! আকাশ ভেঙে পড়লো মাথায়; থালায় জ্যেষ্ঠপুত্র দারাশিকোর রক্তাক্ত ছিন্ন মস্তক!

"দারাআ _ !” জ্ঞান হারালেন শাহজাহান, প্রিয় ভ্রাতার মৃত্যুতে আর্তনাদ জাহানারার কন্ঠেও, তাকালেন আওরঙ্গজেবের দিকে - বিস্ময়, বিদ্বেষ, ক্রোধ, হতাশা, কি ছিলনা সেই দৃষ্টিতে। আওরঙ্গজেব পারলেন না দাঁড়াতে সেই দৃষ্টির সামনে। মুহূর্তের জন্য নত হল দৃষ্টি! দ্রুত সেই স্থান ত্যাগ করলেন

 



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন