রেলবস্তিটা এখন চুপচাপ। মহিলারা চলে গেছে ঠিকে কাজের বাড়িতে। আর পুরুষগুলো এখন স্টেশনে জমায়েত হয়েছে। বার্ণপুর এক্সপ্রেস আসার সময় হয়েছে যে! ওরা তো কুলি। রেলবস্তির বাচ্চারা কেউ পাঠশালায় যায় না। বাবা-মা যে যার কাজে বেরিয়ে গেলে তারাও পিঠে ঝোলা আর হাতে কঞ্চি নিয়ে বেরোয় পেছনের আস্তাকুঁড়ের উদ্দেশ্যে। ভাঙা প্লাস্টিক-কাঁচ কুড়িয়ে টিনভাঙা দোকানটায় বিক্রি করলে বস্তা পিছু পাঁচ'টাকা করে দেয়। আস্তাকুঁড়েতে ভাঙা কাঁচ-প্লাস্টিক খুঁজতে খুঁজতে ঘনা একটা ঘড়ি পায়। ঘড়িটা দেখতে অন্যরকম। ঘনা ঘড়িটাকে সবার চোখ এড়িয়ে জামার ভেতরে লুকিয়ে নেয়।
স্টেশনের ঘড়িতে বিকেল চারটে বাজে। পরের ট্রেন আবার সেই বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। বস্তির লোকেরা যে যার বাড়ি ফিরে এসেছে। সবাই যখন দুটো খেয়ে ঘুমিয়েছে, তখন ঘনার কানে আসে তার আবর্জনার ঢিপি থেকে আনা ঘড়িটা হঠাৎই টিক টিক টিক করে বেজে যাচ্ছে। বিষয়টা বোঝার জন্য ঘড়িটা হাতে নিয়ে একটু জোরে নাড়াতেই তাতে প্রচণ্ড জোরে বিস্ফোরণ হয়।
পরেরদিন খবরের কাগজে ছাপে, 'এক রহস্যময় বিস্ফোরণে রেলবস্তিতে মৃত্যু মিছিল পড়ে গেছে।' অকুস্থল থেকে অনেকটা দূরে থাকা একটা মাল্টিন্যাশনাল কনস্ট্রাকশন অফিসে মোবাইল বেজে ওঠে।
'হমম.…..। তোমার বাকি পেমেন্ট পৌঁছে যাবে।'
হোটেল অ্যারিনায় শহরের তাবড় তাবড় ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টদের একটা বিশাল পার্টি চলছে। নামি ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট মিঃ আগরওয়াল পার্টিতে আসতেই মিঃ পাকরাশি এগিয়ে এসে হ্যাণ্ডশেক করে বলেন, 'রেলবস্তির ব্যাপারটা শুনলেন!'
একটা চরুট ধরিয়ে মিঃ আগরওয়াল বলেন, 'এখন নিশ্চয়ই রিসর্টের পথে আর বাধা নেই।' মিঃ পাকরাশি কথাটা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে যান।
একসপ্তাহ পর মিঃ আগরওয়ালের নামে একটা পার্সেল আসে। পার্সেল খুলতেই তা থেকে বেরিয়ে আসে আধপোড়া একটা ঘড়ি। ঘড়িটা হুবহু রেলবস্তিতে ফেলে আসা টাইম বোম্বটার মতো।
পরেরদিন নিউজ হেডলাইন আসে, 'গতকাল শহরের দাপুটে শিল্পপতি ডঃ আগরওয়ালের রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয়। পুড়ে ছাই হয়েছে তার শরীর। অথচ ঘরের অন্য কিছুতে পোড়ার কোন চিহ্ন নেই।'
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন