ইলিশভাপাটা রেডি করে দোলা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এল। বারান্দায় উঁকি দিয়ে দেখল, অঞ্জন এখনো শম্ভুর সঙ্গে টবগুলো নিয়ে লেগে আছে। রবিবার করে শম্ভু নতুন নতুন গাছের চারা নিয়ে আসে। বিয়ের পর থেকেই দেখেছে অঞ্জনের ভীষণ গাছের নেশা।অবসর পেলে দোলাও অঞ্জনের সঙ্গে হাত মেলায়।কিন্তু ছেলে-মেয়ে কারোরই গাছের প্রতি নেশা বা ভালবাসা হলনা। এ নিয়ে ওদের দুজনের মনেই চাপা দুঃখ আছে।
অঞ্জন শখ
করে ছেলে-মেয়ের নাম ফুলের নামেই রেখেছিল। কুর্চি আর পলাশ। দুজনেই আই টি সেক্টরে চাকরি করে। ওয়ার্ক
ফ্রম হোম যখন ছিল তখনও দেখেছে সারাটাদিন ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত। এখনো তাই।ঘরের কাজে
হাত লাগানো দূরে থাক, মা-বাবার সঙ্গে বসে যে চারটে কথা বলবে সে সময় কোথায়!কিছু
বলতে গেলে কানে হেডফোন গোঁজা। অসন্তোষ প্রকাশ করলেই কথা কাটাকাটি।
মেয়ের ঘরে উঁকি মেরে দেখল
কুর্চির যথারীতি ল্যাপটপে চোখ। জানে ছেলেও তাই। হয় চ্যাট করছে না হয় কোনো ওয়েব
সিরিজে মগ্ন।
বর্ষাকাল।
কিন্তু এবারে বৃষ্টি কম। বড্ড ভ্যাপসা গরম। দোলা কুর্চি আর পলাশকে স্নানের তাগাদা
দিয়ে নিজে বাথরুমে ঢুকে গেল। টেরেসে হাউসকোটটা মেলে দিতে দিতে শম্ভুকে বলল, শম্ভু
তুমি কিন্তু আমায় এখনো লন্ঠন জবাগাছের চারা এনে দিতে পারলে না।
শম্ভু টবের
মাটি খুঁচোতে খুঁচোতে বলল,বৌদি মনে আছে।এতদিন লকডাউন ছিল ব’লে সাপ্লাই নেই।
নভেম্বরে পেয়ে যাব।
দোলা
ড্রয়িংরুমে এসে টিভিটা চালিয়ে দিল। একটা চ্যানেলে ‘বসন্ত বিলাপ’ সিনেমাটা হচ্ছে।
আগেকার দিনের সিনেমাগুলো সাদাকালো হলেও দেখতে বেশ ভাল লাগে। সিনেমা দেখতে দেখতেই
হোয়াটস অ্যাপটা খুলল। সকাল থেকে মোবাইলের সঙ্গে কোন সম্পর্ক ছিল না। দেখল সব
গ্রুপগুলোতেই মেসেজের বন্যা।হঠাৎ চোখ পড়ল,বৌদি লিখেছে,গতকাল রাতে কিঙ্করকাকু
কোভিদে মারা গেছেন। মেসেজটা সকাল দশটা বাইশে এসেছে। দোলা পড়ছে একটা সাতে। দোলার
বুকটা কী ধক্ করে দুলে উঠল!
সুভাষগ্রামে
বাবা যখন বাড়ি করে চলে এলেন দোলার তখন ক্লাস ফাইভ আর দাদার এইট। বাড়ির পাশেই
মুকুরকাকুর বাড়ি। দুটো পরিবারের মধ্যে হৃদ্যতা হতে দেরি হয়নি। মুকুরকাকুর যমজ
ছেলেমেয়ে। টুকি আর টুটু। তখন ওরা ক্লাস থ্রিতে পড়ত। আর মুকুরকাকুর ছোটভাই
কিঙ্করকাকু কলেজে।কিঙ্করকাকু টুকি টুটুর মতই ওদের ভালবাসত। ছোটখাটো আব্দারও মেটাত।
দোলা যেবার
মাধ্যমিক পরীক্ষা দিল সে বছর ওদের বাড়িতে দোলার পিসতুতো দিদি তুলিদি বেশ কিছুদিন
এসে ছিল। তুলিদি কলেজে পড়ত। দোলার সঙ্গে তুলিদির বরাবরই খুব ভাব। এই তুলিদিই ছাদে ঘুরতে
ঘুরতে বলেছিল,দোলা তোর কিঙ্করকাকু তো খুব হ্যান্ডসাম। লম্বা,ফরসা,স্মার্ট। আমার
সঙ্গে একটু ভাল করে আলাপ করিয়ে দে না। লাইন মারতে পারি কীনা দেখি।তুলিদি বলার পরেই
দোলা কে জানে কেন কিঙ্করকাকুকে নতুন চোখে দেখতে শুরু করেছিল।
মাধ্যমিকে
ভাল রেজাল্ট করে দোলা ইলেভেনে যোধপুর গার্লসে ভর্তি হল।তখন মা কিঙ্করকাকুকে ডেকে
বলেছিলেন,কিঙ্কর দোলা ওই বারুইপুর লোকালেই যাবে।পরের ট্রেনে গেলে হয়ে যেত। কিন্তু
ওই ট্রেনে তুমি যাও তো।তাই নিশ্চিন্ত থাকব। ঠিকমত ঢাকুরিয়া স্টেশনে নামিয়ে দিও।
ওখান থেকে ওর এক বন্ধুর সঙ্গে দোলা স্কুল চলে যাবে।
এই যাওয়ার
পথেই কিঙ্করকাকুর সঙ্গে দোলার একটু অন্যরকম বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল।
এক শনিবার
সকালে স্কুলের ফাংশন ছিল বলে দোলা শাড়ি পরেছিল। ঢাকুরিয়া স্টেশনে নামার মুখে
কিঙ্করকাকু বলেছিল,দোলা আজ তোকে খুব সুন্দর লাগছে।
কথাটা শুনে
দোলা চমকে গিয়েছিল।ঠিক তেমনি একদিন কলেজ ছুটির পর গেটের সামনে কিঙ্করকাকুকে দেখেও
দোলা অবাক হয়ে গিয়েছিল। সেদিন বালিগঞ্জ স্টেশনের সামনে একটা রেস্টুরেন্টে দুজনে
বসেছিল।সেদিন কী কী কথা বলেছিল আজ আর দোলার মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে কথা যেন
ফুরোতেই চাইছিল না।
-তোমার হলটা
কী?ডেকে ডেকে গলা ভেঙে গেল।বসন্ত বিলাপে এমন মজে রয়েছ যে ঘড়ির দিকে তাকাওনি
পর্যন্ত। অঞ্জনের কথাতে দোলার ঘড়ির দিকে চোখ গেল।ইস্ দুটো বেজে গেছে কখন খেয়ালই
করেনি।
কুর্চি তোয়ালে
মাথায় জড়িয়ে টিভির দিকে একপলক তাকিয়ে বলল,কী যে বস্তাপচা মান্ধাতা আমলের
সিনেমাগুলো দেখো!
দোলার
ভাবনার জালটা ছিঁড়ে গেল। ঈষৎ গম্ভীর হয়ে উঠে যেতে যেতে বলল,তোদের মাই তো মান্ধাতা
আমলের।
খেতে বসে
খুঁটে খুঁটে ইলিশমাছটা খেল।অঞ্জন খেয়াল করে বলল,ওভাবে খাচ্ছ যে? ভাপাটা তো দারুণ
হয়েছে।পলাশ মাথা নেড়ে থামস আপ দেখাল। কুর্চি বলল,গ্রেভিটা আর একটু দাও তো মা।
অঞ্জন কিছু একটা বলছে,দোলার কানে যাচ্ছে না ঠিকমত। মাথা নেড়ে গেল।
খাওয়া-দাওয়ার
পর অভ্যস্ত হাতে জিনিসপত্র তুলে রেখে টেবিল মুছল।এই সময়টা অঞ্জন টিভিতে খবরের
চ্যানেলগুলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে। তাই দোলা শোবার ঘরে চলে এল। নিশ্চিন্ত নিরিবিলিতে
খাটের রেলিঙে একটা বালিশে পিঠ ঠেকিয়ে বসল।অন্যমনস্কভাবেই আবার পিছনের দিনগুলোতে
ফিরে গেল।
একবার
সোনারপুরে এক বন্ধুর দিদির বিয়েতে গিয়েছিল।ফিরতে সাড়ে ন’টা বেজে গিয়েছিল। অত রাতে
হঠাৎ স্টেশনে দোলা কিঙ্করকাকুকে দেখে চমকে গিয়েছিল।
কিঙ্করকাকু
দোলাকে দেখে অপ্রস্তুত হাসি হেসে বলেছিল,সিগারেট ফুরিয়ে গিয়েছিল।তাই ভাবলাম
স্টেশনের দোকান থেকে কিনে আনি। সেই শুরু। তারপর থেকে কোচিং থেকে ফেরার পথে দোলা
জানত কিঙ্করকাকু ঠিক মোড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে থাকবে।
কলেজ
ফেস্টের দিনটার কথাও মনে পড়ছে।মুক্তমঞ্চ থেকে বেরিয়ে দেখেছিল,কিঙ্করকাকু দাঁড়িয়ে।
দোলাকে দেখে এক গাল হাসি হেসে বলেছিল, আজ অফিসে ডুব মেরে দিলাম। লেক কালীবাড়ির
পাশে আমার এক বন্ধু থাকে। একটা দরকারে এসেছিলাম। ভাবলাম তোকে নিয়েই একেবারে ফিরি।
কিঙ্করকাকুর
বলার ধরণ দেখেই দোলা বুঝেছিল,কথাটা সত্যি নয়।দোলা ধরা ছোঁয়া না দিয়ে বলেছিল, খুব খিদে
পেয়েছে।আজ মশলা ধোসা খাব। কেয়াতলালেনে একটা রেস্টুরেন্টে বসে দুজনে মশলাধোসা আর
কফি খেয়েছিল। সকাল থেকেই আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা ছিল। কিন্তু ফেরার পথে হঠাৎ করে
বৃষ্টি শুরু হল।একটা ছাতায় দুজনেই প্রায় কাকভেজা হয়ে গোলপার্ক পর্যন্ত এসেছিল।
তারপর হাতে টানা রিক্সা করে বালিগঞ্জ স্টেশনে পৌঁছেছিল।স্টেশনে এসে শুনেছিল আগের
ট্রেন বাতিল। আরো পঁয়ত্রিশ মিনিট পর ট্রেন। দোলা চোখ কপালে তুলে বলেছিল,ওরে বাব্বা
এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হবে?কিন্তু আশ্চর্য গল্পে গল্পে কখন যে সময়টা চলে গিয়েছিল
দুজনেই বুঝতে পারেনি।
মনে পড়ছে
সেই একত্রিশে অক্টোবরের দিনটা। হঠাৎ শুনল,ইন্দিরাগান্ধী গুলিবিদ্ধ। নিমেষের মধ্যে বাস
ট্রেন সব বন্ধ হয়ে গেল। দোলা যে কীভাবে বাড়ি ফিরবে বুঝে উঠতে পারছিল না। কলেজের
গেটের সামনে বন্ধুদের সঙ্গে ভিড় করে দাঁড়িয়েছিল। এমনসময় কিঙ্করকাকু হাঁফাতে
হাঁফাতে এসে ওর হাত ধরে টেনে এনে বলেছিল,যাক্ তোকে দেখতে পাব ভাবতে পারিনি। ভয়
হচ্ছিল যদি তুই বেরিয়ে যাস তাহলে কী করব?
দোলা
বিস্মিতকন্ঠে বলেছিল,তুমি অফিস থেকে এলে কী করে?
কিঙ্করকাকু
রহস্যময় হাসি হেসে বলেছিল,সেকথা না জানলেও চলবে। চল্ হাঁটা ছাড়া উপায় নেই।
এখনো মনে
আছে কিঙ্করকাকু ওর দিকে ঠোঙা ভর্তি ছোলা বাদামভাজা এগিয়ে দিয়ে বলেছিল,এর বেশি কিছু
জোগাড় করতে পারিনি। রাস্তায় তখন যাকে ব’লে জনস্রোত। তার মধ্যেই কথা বলতে বলতে ওরা
প্রায় যাদবপুর পর্যন্ত হেঁটেছিল। তারপর একটা ভ্যানরিক্সা পেয়ে দুজনে পিছনের দিকে
পা ঝুলিয়ে বসেও কত কথা বলেছিল। দোলার মনে আছে,ওইদিন প্রথম কিঙ্করকাকু বলেছিল,দোলা
আজ যে আমরা একসঙ্গে এলাম বাড়িতে বলব না। তুই আগে বাড়িতে যা। বলবি বন্ধুদের সঙ্গে
ফিরেছিস। আমি ক্লাবে যাচ্ছি। আরো ঘন্টাখানেক পর ফিরব।
দোলা বাধ্য
মেয়ের মত মাথা নেড়েছিল। তবে দোলার আশ্চর্য লাগত,এত কথা বলার পরেও কিঙ্করকাকু
কিন্তু মাঝে মধ্যেই বলত,দোলা অনেক কথা বলার আছে। সময় নিয়ে একদিন বলব। দোলা মাথা
নাড়াত। কিন্তু সেই অনেক কথা কখনো কী কিঙ্করকাকু বলে উঠতে পেরেছিল?
এখনো মনে
আছে একবার দাদার জন্মদিনে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘নামজীবন’ থিয়েটার নিয়ে
কিঙ্করকাকু বাবার সঙ্গে আলোচনা করছিল। হঠাৎ একটু আড়াল পেয়েই কিঙ্করকাকু দোলাকে
বলেছিল,যাবি তো বল। তাহলে শনিবারের শোয়ের টিকিট কাটব। এর আগে কিঙ্করকাকু কখনো
দোলাকে সিনেমা বা অন্য কোথাও যাবার কথা বলেনি। দোলা থতমত খেয়ে কী উত্তর দেবে বুঝে
উঠতে পারছিল না। এমনসময় মুকুরকাকু আর কাকিমা হৈ হৈ করে চলে আসাতে কথাটা আর এগোয়নি।
খুব ছোট
থেকে দুই পরিবারের এমনভাবে মেশামেশি ছিল যে কেউই ওদের সম্পর্ক নিয়ে কিছু ভাবত
না।আচ্ছা দোলারও কী এই সম্পর্কটা নিয়ে স্পষ্ট কোন ধারণা ছিল? কিঙ্করকাকু দোলার
থেকে দশবছরেরও বেশি বড়। তবু কিঙ্করকাকুর সঙ্গটা দোলার ভাল লাগত। কিন্তু অন্য কোন
অনুভূতি ছিল কি?
কত টুকরো
টুকরো ঘটনা জুড়ে আজ যেন কথার মালা হয়ে ধরা দিচ্ছে। অপরিণত বয়সের ছেলেমানুষীগুলোর
কথা মনে করে গলার কাছে কেমন যেন দলা পাকাচ্ছে।
কিঙ্করকাকু
ধানবাদে বদলি হয়ে যাবার পর থেকেই সম্পর্কটা কেমন যেন ছানাকাটা হয়ে গিয়েছিল। তখন
দোলাও ইউনিভার্সিটিটে ভর্তি হয়ে গেছে। পড়ার চাপের সঙ্গে স্বাধীনতার পরিধিটাও বেড়ে
গিয়েছিল। তাই কিঙ্করকাকু মাসে একবার করে এলেও যখন দেখা হত তখন মামুলি কথাবার্তা
ছাড়া দোলা কোন কথাই খুঁজে পেত না। স্থানের দূরত্ব দুজনের মধ্যেই একটা দূরত্ব তৈরি করে
দিয়েছিল। পরে আবার কিঙ্করকাকু সুভাষগ্রামে চলে এলেও দোলার সঙ্গে সম্পর্কটা আর
স্বাভাবিক হয়নি।
দোলার মনে
আছে,ওর বিয়েতে মুকুরকাকুরা সকাল থেকেই ছিল। কিন্তু কিঙ্করকাকু আসেনি। দোলা
কাকিমাকে জিজ্ঞাসাও করেছিল,কিঙ্করকাকু রাতে আসবে তো?
কাকিমা
তত্ত্ব গোছাতে গোছাতে ঘাড় নেড়ে বলেছিলেন,দ্যাখ না আজই কিঙ্করকে অফিসের কাজে চলে
যেতে হল। দোলা কারণটা বুঝে চুপ করে গিয়েছিল।
দোলার বিয়ের
পরের বছরই কিঙ্করকাকুর বিয়ে হয়। বিয়েতে অবশ্য নেমন্তন্ন পেয়েছিল। কিন্তু তখন দোলার
দিদিশাশুড়ি মারা গিয়েছিলেন বলে অশৌচ চলছিল। তাই যাওয়া হয়ে ওঠেনি।পরে এসে কাকিমার
সঙ্গে আলাপ করে গিয়েছিল।কাকিমা রেলে চাকরি করতেন।
পরে টুকির
মুখে শুনেছিল,কিঙ্করকাকু বাড়ি করেছে। দাদা বলেছিল,বাপরে কিঙ্করকাকু গৃহপ্রবেশে যা
বড় সাইজের পাবদা আর চিংড়ি খাইয়েছে না কী বলব। বাড়িটাও দারুণ সাজিয়েছে। সামনের
বাগানে কতরকমের গাছ লাগিয়েছে ভাবতে পারবি না।
তারপর
সুভাষগ্রামে গেলেও কিঙ্করকাকুর সঙ্গে আর দেখা হত না।
মনে মনে
হিসেব করল দোলা,কতদিন যেন কিঙ্করকাকুকে দেখেনি। হ্যাঁ তা প্রায় বছর সাত-আট তো
হবেই। হয়ত তার বেশিই হবে।আসলে বাবা-মা মারা যাবার পর সুভাষগ্রামে যাওয়া এমনিতেই
কমে গেছে।তাছাড়া এই নিউ ব্যারাকপুর থেকে সুভাষগ্রাম যাওয়াও তো কম কথা নয়।
আচ্ছা
কিঙ্করকাকুই তো নিজের হাতের রেখা দেখিয়ে ওদের সবাইকে বলত,জানিস আমার হাত যেই দেখে
সেই ব’লে সেঞ্চুরিটা পার করে দেব। সেই কিঙ্করকাকুই কোভিদে মারা গেল? কত আর বয়স
হবে? মনে মনে বয়সের হিসেব করে দোলা দেখল চৌষট্টি বছর।
-মা কী হল
তোমার? এমন সময় তো তুমি ঘুমাও না?মামা অনেকবার তোমায় ফোন করেছে। তোমায় না পেয়ে
আমায় করেছিল। বলল,তোর মাকে ফোন করতে বলবি। ওমা তোমার চোখে জল দেখছি? কী গো কোনো
খারাপ স্বপ্ন দেখছিলে নাকী?
পলাশের ডাকে
ধড়মড় করে উঠে পড়ে দোলা বলল,ইস দেখেছিস এইজন্যই দুপুরে এসি চালিয়ে আমি শুই না। কখন
চোখ লেগে গিয়েছিল বুঝতেই পারিনি। তোর বাবা কোথায়?কুর্চি?
-মহারাণীর
কী মুড হয়েছে জানি না। তুমি ঘুমাচ্ছ দেখে নিজেই চায়ের জল চাপিয়ে দিয়েছে।
আলতো হাসি
হেসে দোলা বলল,আজ কার মুখ দেখে উঠেছিলাম রে?
বাথরুমে
গিয়ে ভাল করে চোখে জলের ঝাপটা দিতে দিতে আয়নার দিকে তাকিয়ে ভাবল,সত্যি সত্যিই আজ
কার মুখ দেখে উঠেছিল কে জানে? যে মানুষটার কথা দীর্ঘদিন ভাবেনি মরে গিয়ে সেই
মানুষটা এতটা যে জুড়ে ছিল তা কী দোলা নিজেই জানত? মুখটা মুছে নিল। স্বাভাবিক থাকতে
হবে। কোথায় যেন পড়েছিল, অভিনয়ের মধ্যে নিজেকে মিশিয়ে দিয়ে চলার নামই জীবন।
সন্ধেবেলায় দাদাকে ফোন করল। দাদা বলল,কিঙ্করকাকু চলে গেল রে। ভাবা যায়! প্রথমে হোম কোয়ারেন্টিনেই ছিল। তারপর এত শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল যে নার্সিংহোমে দিতে হল। পরেরদিনেই শেষ। কাকিমা বলছিলেন,একটা মাত্র মেয়ে লকডাউনের জন্য পুনে থেকে আসতে পারল না। দোলা হঠাৎ বলে উঠল,হ্যারে দাদা পিছনের সেই স্থলপদ্মের গাছটা এখনো আছে না? কিঙ্করকাকু শিশিতে ডালটা বেঁধে শিকড় করে দিয়েছিল। তোর মনে আছে? এবারে যাব যখন তখন ওই গাছের একটা ডাল নিয়ে আসব।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন