দুর্গা আজ শাড়ী পরেছে। দশমীর দিন। মা-কাকিমারা সবাই শাঁখা-সিঁদুর আর নতুন শাড়ীতে সেজেছে। মেয়ের তাই সখ হয়েছে শাড়ী পরার। বারো-তেরো বছরের ধিঙ্গি মেয়ে। সকাল থেকে মায়ের আঁচল ধরা হয়ে আছে। মেয়ের কান্না দেখে ছোট কাকিমা একটা লালের ওপর জরির কাজ করা শাড়ী পরিয়ে দেয়। সূর্য পাটে বসলে ঠাকুমা ডেকে বলল, ‘ও দুগ্গা, নদী থেকে হাঁসগুলান নিয়ে আয় দিদি।’ দুর্গা মুখ ভেঙছি দিয়ে বলে, তুমি যাও! আমি মন্ডপে গেলাম। শয্যাশায়ী ঠাকুমা অনুযোগের সুরে বলে, আমার মাজায় কি আর সেই জোর আছে রে ভাই। দুর্গা ততক্ষণে পূজা মন্দিরে। ছোট ভাই অপু ঢাকের তালে তালে কাঁসি বাজাচ্ছে। দুর্গা বলে, চ হাঁস আনতে যাই। অপু ইঙ্গিতে বোঝায়, কাঁসি সে হাত ছাড়া করতে চায় না। অগত্যা দুর্গাকে আজ একাই যেতে হয়। মজুমদারদের আম-কাঁঠালের বাগান পেরিয়ে নদী। চর যখন ফাঁকা ছিল সন্ধ্যা হলে হাঁসগুলো নিজেরাই ঘরে ফিরে আসত। এখন চরে কাশের বন ঘন হওয়ায় হাঁসগুলো ফিরতে ভয় পায়। দুর্গার ডাক শুনে হাঁসগুলো উঠে আসে। সাদা কাশফুলের বনের মাঝ দিয়ে এগিয়ে চলে। কি যেন একটা সড় সড় শব্দ শুনে হাঁসগুলো দল ভেঙে এলোমেলো হয়ে যায়। দুর্গা হাঁসগুলোকে লাইনে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করে। তখন মন্দিরে বিসর্জনের বাজনা বাজচ্ছে। বেদি থেকে মূর্তি নামানো হচ্ছে। কাশবনের ভেতরে দুর্গার চোখের সামনে অসুরের মূর্তিটা ভেসে ওঠে। হাঁসগুলো ঘরে ফিরে আসে। বিসর্জন শেষে রাতে বাড়ী ফিরে বাবা ডাকে, দুগ্গা ও-দুগ্গা। মা বলে, আছে হয়তো ঠাকুমার ঘরে। রাত দুপুরে মেয়েকে নিয়ে আর আদিখ্যেতা করতে হবে না।
সকালে দুর্গার বাবা তখন টেলিভিশনে খবর শুনছিল। রাশিয়ার যুদ্ধের খবর। দূর্গার মা এসে বলল, শুনছ! দুর্গাতো ঠাকুমার ঘরে নেই। যুদ্ধের খবর রেখে মেয়েটার একটু খোঁজ নিয়ে দেখতো, কোথায় গেল? এমন সময় সমু মুন্সি নদীর ঘাট থেকে খবরটা নিয়ে এলো। গ্রামশুদ্ধ লোক কাশবন ভেঙে নদীর তীরে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। দুর্গার কচি মুখটা তখন নদীর স্বচ্ছ জলে ভাসছে। কাকিমার জরির শাড়িটা শরীর থেকে খুলে নদীর কুলে কাদাজলে ঢেউ খাচ্ছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন