নারীস্বাস্থ্যে মাল্টিভিটামিন - প্রিয়দর্শিনী সমাদ্দার


বিভিন্ন বয়সের অধিকাংশ মেয়েদের মধ্যে একটি বিষয়ে খুব মিল পাওয়া যায়। ত্বক, চুল অথবা বাহ্যিক ফিটনেস নিয়ে সজাগ থাকলেও স্বাস্থ্যের অন্যান্য ব্যাপারে তারা বড়ই উদাসীন। যেমন ধরা যাক ক্যালসিয়াম, আয়রন বা কোনো ভিটামিন। শরীরে এগুলির অভাব বাইরে থেকে চট করে বুঝতে পারা যায় না। কিছু কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেলেও সেগুলিকে অবহেলার চোখে দেখা হয়। ফলে স্বাস্থ্য আরো খারাপ হতে থাকে। ৩০ বছর বয়স সম্পূর্ণ হওয়ার পর থেকে মেয়েদের শরীরে এরকমই নানারকম খনিজ ভিটামিনের পরিমাণের মাপকাঠি স্বাভাবিক মাপকাঠির তুলনায় কম হিসাবে পরিলক্ষিত হয়। সেই কারণে একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর মেয়েদের জন্য মাল্টিভিটামিন অথবা নির্দিষ্ট কোনো ভিটামিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট কি?


মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেটে সাধারণ কিছু ভিটামিন এবং খনিজ উপস্থিত থাকে যেগুলির ঘাটতি সাধারণত আমাদের শরীরে দেখা যায়। এতে থাকে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন ডি, বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন বি, ভিটামিন , ভিটামিন কে, পটাশিয়াম, আয়োডিন, সেলেনিয়াম, বোরেট, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, বিটা ক্যারোটিন এবং আয়রন।

সকলেরই কি খাওয়া উচিত?

নিজে ইচ্ছামতো দোকানে গিয়ে মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট কিনে এনে খেয়ে ফেলা কখনই করা উচিত নয়। অধিকাংশের শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি থাকলেও সকলেরই যে থাকে, এমনটা কিন্তু নয়। চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চেকআপ করানোর পর এবং তিনি রক্ত পরীক্ষা করে তার রিপোর্ট দেখে প্রয়োজন মনে করলে তবেই মাল্টিভিটামিন খেতে হবে।

বিশেষ করে মেয়েদের কেন এবং কখন?

অধিকাংশ মেয়েরাই ভিটামিনের ঘাটতি এবং অ্যানিমিয়ায় ভোগে। হাড় সম্পর্কিত বেশি সমস্যা মহিলাদের মধ্যেই দেখতে পাওয়া যায়। শুধু হাড় নয়, অনেকসময় ভিটামিনের অভাবে অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও নজরে আসে। যেমন লোয়ার ব্যাক পেইন অথবা অত্যধিক চুল পড়া। বিশেষ করে ত্রিশ বছর বয়সের পর থেকে এবং সন্তান জন্মদানের পর মেয়েদের বিশেষভাবে ভিটামিনের প্রয়োজন হয়ে থাকে। অধিকাংশ মেয়েরাই তাদের দৈনন্দিন খাদ্য থেকে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি পায় না যা তাদের হাড়ের গঠনে একান্তভাবে প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে চিকিৎসক পরীক্ষানিরীক্ষা করার পর মাল্টিভিটামিন অথবা একক কোনো ভিটামিন ট্যাবলেট গ্রহণ করার পরামর্শ দেবেন।

যেকোনো মাল্টিভিটামিন খেলেই চলবে?

সব ভিটামিন ট্যাবলেট সকলের জন্য নয়। মাল্টিভিটামিনের প্রকারভেদ আছে, সবার আলাদা আলাদা। বাচ্চাদের, মেয়েদের, ছেলেদের, অন্তঃসত্ত্বাদের, পঞ্চাশের অধিক বয়স হলে, সবাইয়ের ভিন্ন ভিন্ন ভিটামিন। যে গ্রুপের মানুষদের যে যে ভিটামিনের প্রয়োজন সেগুলি থাকে সেই ট্যাবলেটে। যেমন, যাঁরা নিরামিষাশী তাঁদের মাল্টিভিটামিনে সাধারণত ভিটামিন বি ১২, ক্যালসিয়াম, আয়রন জিঙ্কের উপস্থিতির উপর বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়। কার কোনটা প্রয়োজন সেটি নির্দিষ্টভাবে বলতে পারবেন তাঁর চিকিৎসক।

তাহলে কি মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট ছাড়া গতি নেই?

তা কেন হবে! আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের দৈনন্দিন খাবার এবং হালকা কিছু শরীরচর্চা। ফলমূল শাকসবজি থেকে আমাদের শরীর যতোখানি সহজে ভিটামিন খনিজ গ্রহণ করতে পারে, ট্যাবলেট থেকে কিন্তু অত সহজে পারে না। সেই কারণে মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট সকলের ডায়েটে জরুরিভিত্তিক নয়, সকলের শরীরে ভিটামিন খনিজের সেভাবে ঘাটতি থাকেও না। সেই কারণে না জেনেশুনে মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট গ্রহণ করা একেবারেই অনুচিত। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য এটি আবশ্যিকভাবে দরকারি অথবা এটি খেলে হৃদরোগ, ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়া যায় অথবা বেশিদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকা যায়, এমনটা নয়। যাঁদের শরীরে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভিটামিনের প্রয়োজন তাঁদের জন্যই এটি।

চিকিৎসক পরামর্শ দিলে নিয়মিতভাবে ভিটামিন অথবা মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট অবশ্যই খাওয়া উচিত। তবে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলা কোনোমতেই স্বাস্থ্যকর নয়। কিছু কিছু ভিটামিন আছে জলে দ্রবীভূত হয়, যেমন ফোলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ১২। এগুলি অতিরিক্ত হয়ে গেলে মূত্রত্যাগের সাথে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু ভিটামিন , ডি, , কে এগুলি অতিরিক্ত হয়ে শরীরে জমতে জমতে একসময় শরীরের ক্ষতি করে। তাই চিকিৎসক পরামর্শ দিলে হেলাফেলা না করে প্রয়োজনীয় মাত্রায় অবশ্যই ভিটামিন অথবা মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট গ্রহণ করতে হবে।




Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন