অন‍্য ষষ্ঠী - কাকলী কোলে

 

মেয়ের বিয়ের পর এই প্রথম জামাইষষ্ঠী।  নিমন্ত্রণ করতে এসেছেন মেয়ের বাবা মা, মামা মামী, পিসেমশাই এবং পিসি। ভীষন আনন্দ হইচই চলছে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে। জামাইয়ের প্রশংসায়  সবাই কি যে বলছে আর কি যে বলবে কম্পিটিশন চলছে রিতিমত

জামাইও এসে লাজুক মুখে বসলো, যেমন সুন্দর চেহারা তার তেমন লেখাপড়া তেমন চাকরি। এইটুকু বয়স আরও না জানি কত উন্নতি করবে এইটুকু বলে থামে মেয়ের বাবা। মেয়ের পিসির  একমাত্র জামাই আবার ঠিক সুবিধের হয়নি, ফলে মনে মনে জ্বললেও মুখের হাসিটি দেখে বোঝার উপায় নেই। সারাদিন প্রচুর আনন্দ করে এবার ফেরার পালা। মেয়ের বাবা জামাইয়ের কাঁধে হাত  দিয়ে বললেন, লজ্জা না করে বলে ফেলো কি চাই। জামাইও খুশী। বলল, বাজেট কত? হাসতে হাসতে হঠাৎ যেন সব কেমন থমকে গেলো। কেউই  নিজেদের কানকে বিশ্বাসই করতে পারছেন না। আরও ধাক্কা এলো যখন জামাই বলল, নগদ দিলে দু-দিন আগে দিলে সুবিধা হয়, না হলে আমি  লিস্ট দিয়ে দেবো সেইমত জিনিসপত্র নিয়ে এখানে চলে আসবেন। তারপর সবাইকে নমস্কার করে  গাড়িতে বসিয়ে  রওনা করে দিল।

ছি ছি ছি, একি করলি তুই।  লেখাপড়া শিখে এই পরিণতি। আমার উঁচু মাথা এভাবে হেঁট করে দিলি, ছেলের বাবার বিলাপ। মা তো বিছানায় সেই যে শুয়েছে না খেয়ে, কেঁদে কেঁদে চোখের জল বোধহয় শেষ। বাবাকে বললেন, হ্যাঁ গো একবার ফোন করে ক্ষমা চাও, কি ভাবছেন ওরা। বাবা বললেন, কি দরকার ছিলো ওকে কি নেবে জিজ্ঞাসা করার, ও তো আগে কিছু বলেনি। এসব দেখনদারী পয়সা ছড়ানো একেবারে ঠিক নয়। আমাদের বারণ করা উচিৎ, কালই ফোন করে বারণ করবো

এদিকে মেয়ের বাড়িতে কানাকানি। ফোনে ফোনে ঘুষঘুষ, কেউ আর বাকি নেই জানতে। কেউ কেউ বলেই ফেলল, আরও আদিখ‍্যেতা করুক, জামাই দিয়েছে নাকে ঝামা ঘষে। অবাক ব‍্যাপার মেয়েও জামাইয়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে রইল, একটা প্রতিবাদ করলো না।

বউমা তুমি তো কিছু বলছো না মা। বউমা বলে, ঠিকই তো আছে। বাবা জিজ্ঞাসা করেছেন বলেই তো ও বলেছে। আপনি অতো ভাববেন না, সব ঠিক আছে

জামাইষষ্ঠীর দিন লিস্ট মিলিয়ে দু'গাড়ি মালপত্র নিয়ে হাজির মেয়ের বাড়ির লোকজন। আগের দিন যারা ছিলেন তারা ছাড়াও আরও কয়েকজনও আছেন। মজাটা দেখতে হবে তো

মোট চারটে গাড়ি বোঝাই  মালপত্র নিয়ে  চলেছে তারা। শহর ছাড়িয়ে দূরে, প্রায় দু-ঘন্টা চলার পর থামলো এসে গাড়িগুলো একটা বড় বাগানঘেরা বাড়ির সামনে। নির্জন শান্ত পরিবেশ। গাড়ি থেকে নেমে সবাই এদিক ওদিক দেখছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হুড়মুড় করে বেরিয়ে আসছে ছোটো ছোটো বাচ্চারা, দাদা এসেছে দাদা এসেছে। জামাই এদের দাদা। সব বাচ্চাদের বসতে বলে দুই মায়ের হাতে দুটি পাখা দিয়ে জামাই বলে, এদের কেউ নেই। একটু আদর বাতাস করুন, আশীর্বাদ  করুন যেন ওরা বাঁচার মতো বাঁচে। এতোক্ষণে সবাই  বুঝেছে কি জন‍্য এতোসব আয়োজন। শ্বশুরমশাই এসে জামাইকে বুকে জড়িয়ে বললেন, যাদের সঙ্গে তোমার মতো মানুষ আছে তারা জয়ী হবে না! নিশ্চয়ই হবে। আমরা কখনও ভাবিনি এমন কিছু, স্বার্থপরের মতো ভোগ করেছি


আজ নির্মল আনন্দের দিন। এসো সবাই।

সারাদিন কাটল খেলে দেলে, তার সঙ্গে কব্জী ডুবিয়ে ভোজ, অনাথ বাচ্চাগুলি পেলো দাদু দিদা আর নতুন জামাকাপড়, অফুরন্ত আদর

ফেরার সময় বাচ্চারা দুঃখী মুখ করে বলল, তোমরা আবার আসবে তো?

নতুন দাদুরা বললেন, আসবো মানে! আমাদের সব কাজ শেষ। আমরা তোদের কাছেই থাকবো।

এরপর আর কোনো দুঃখই রইল না




Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন