দিনটা ছিল বুধবার। সেদিন আমার স্বামীর অফিসে একটা জরুরি কাজ থাকায়
আমাকেই বাজারে যেতে হয়েছিল। আমার একমাত্র ছেলে মিন্টু, ভালো নাম মন্মথ, সেদিন আমার সাথে বাজারে যাবে
বলে বিশাল বায়না জুড়ে দিল। কোনোরকমে বাধ্য হয়েই ওকে বগলদাবা করে
ছুটতে হল। বাজারে গিয়ে মাংসের দোকানে লাইন দিয়েছি, দেখলাম আমার মিন্টুর চেয়ে
সামান্য কয়েক বছরের বড়ো একটি বাচ্চা ছেলে মাংসর দোকানে বসে মুরগি কাটছে। যেই
বয়সে বাকি আর পাঁচটা বাচ্চা স্কুলে যায়, পড়াশোনায় ফাঁকি দেয়, ভিডিও গেম খেলে, খাবার নিয়ে জ্বালাতন করে - সেই বয়সে
আরেকজন একই বয়সের একটা বাচ্চা ঘাম ঝরিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
ওখানে দাঁড়িয়ে মনে হলো- মুরগির গায়ের পালকগুলো যেন শুধু মুরগির ডানা নয়; ওই ছোট্ট বাচ্চাটার শৈশবের একেকটা দিন। নিজের হাতে পরিস্থিতির চাপে পড়ে
ছিঁড়ে ফেলতে হচ্ছে।
এসব আজগুবি
চিন্তাভাবনা করতে করতে লাইনে আমার নম্বর আসতেই বাচ্চাটা বলে উঠলো - "আন্টি
কতটা মাংস দেবো?"
আমি বললাম -
"সাতশো গ্রাম"।
মিন্টু ওখানে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকবার ঘেন্নায় থুতু ফেলল, নাকে হাত চাপা দিল অথচ সেই বাচ্চাটি ওভাবে মাংস কাটা হাত মুছে চট করে চায়ের গ্লাসে পাউরুটি চুবিয়ে একটা কামড় বসিয়ে দিল।
আমি আর চুপ
থাকতে না পেরে প্রশ্ন করলাম - " বাড়ি কোথায়? এখানে কাজ করো কেন? স্কুলে যাওনা?"
বাচ্চাটা
কাজ করতে করতেই উত্তর দিল -"বাবা অসুস্থ, তাই বাবার জায়গায় এখন আমি বসি। বাবা সেরে উঠলে আবার
স্কুলে যাব।"
বেশি টাকা
দিয়ে ওর এই সৎ পরিশ্রমকে ছোটো করতে চাইনি তাই ফেরার সময় ওর বাড়ির ঠিকানাটা ভালো
করে জেনে এসেছি। যদি কখনও পরিচয় গোপন রেখে ওদের জন্য কিছু করতে পারি তবে হয়ত
আরেকটা মিন্টু নতুন জীবন পাবে।
বেশ ভালো
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন