প্রাথমিকে - প্রতীক মিত্র



ইস্কুলে বলা ছিল আগে থেকেই। তবে ফল তেমন আশানুরূপ হয়নি। উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ইস্কুল প্রাঙ্গনে গিয়ে দ্যাখে অভিভাবক নেই বললেই চলে। প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষককে যখন সবাই মনে মনে দোষী ঠাওরাতে প্রস্তুত শিক্ষক মহাশয় নিজেই নিজের সাফাই গাইতে শুরু করেছেন। মানে পঞ্চম শ্রেণীতে ছাত্রছাত্রী এমনিতেই কম কিম্বা অভিভাবকদের কেউ কেউ আগে থেকেই মনস্থির করে ফেলেছে সন্তানকে কোথায় পড়াবে ইত্যাদি ফলে ওনার একার কিছু করার নেই। বেশ খানিকটা দুর থেকে উচ্চ বিদ্যালয়ে যারা আসে, তাদের কাছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এভাবে বিদ্যার্থী ভিক্ষা চাওয়াটা নতুন,অস্বস্তিকরও বটে। নতুন যারা তারা তো প্রথম প্রথম খুব অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল। তবে এখন সয়ে গেছে। আশেপাশের ইস্কুলগুলোর বেহাল অবস্থা তাদের চোখ এড়ায় না মোটেও। তারা বেশ বুঝে গেছে কোমর বেঁধে না লাগলে কপালে দুঃখ আছে বেশ। ‘সিক স্কুল’-এর তালিকায় ওদেরটারও নাম যে কোনোদিন উঠতে পারে। সেটাকে যদি রুখে দেওয়া যায়! দূর থেকে যারা আসে তাদের বোধ হয় ঘুম তখনও ভাঙেনি। আসা-যাওয়া নিয়েই তারা এতটা চিন্তিত যে অন্য কিছুতে আর মনোযোগ দিয়ে উঠতেই পারে না। ইস্কুলের ভালো হোক এটা তারাও চায়; খালি নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে কিছু করার আগে মনটা খচখচ করে। সেই জন্য কথাও শুনতে হয় কখনও সহশিক্ষক কখনও রাজনৈতিক মোড়লদের থেকে। তারা অভ্যস্ত হয়ে গেছে



আজ অবশ্য প্রাথমিকের অভিভাবকদের সাথে সাক্ষা হবে শুনে বেশ অদ্ভুত লাগছিল। শিক্ষক-অভিভাবকদের মিটিং হলে ওরা যে থাকে না তা নয়, তবে সেখানেও বাড়ি ফেরা ট্রেন ধরার তাড়াটাই থাকে মূল। আজও তাই ছিল। কিন্তু প্রাথমিকের প্রাঙ্গন প্রায় অভিভাবকশূন্য আর যেসব শিক্ষক এই ভর্তি নিয়ে তৎপরতা দেখাচ্ছে তাদের মুখে হতাশার ছাপ দেখে ওদেরও আবেগ-অনুভূতি-ভাবনায় অদল-বদল হতে শুরু করেছে। স্কুল উঠে গেলে ওদেরকে কোনো স্কুলের সরকারি অন্য কোনো বিভাগে স্তুপাকারে ফেলে রাখা হবে এই নিয়ে ক’দিন আগে একটা আলোচনা চলছিল। ওরা ওই আলোচনায় কেউই বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি। আজ এই মুহূর্তে কেন যেন ওদের মনে হচ্ছিল বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার সময় এবার এসেছে। যেমন সময় এসেছে এই বিদ্যার্থী ভিক্ষার সাথেও নিজেকে যুক্ত করার। ফলে কিছুটা অনীহা কিছুটা সন্দেহ নিয়েই ওরাও বাকিদের সাথে দুশ্চিন্তায় সামিল হতে চায়।

ঘন্টাখানেক বড় শ্রেণীকক্ষের আসবাবগুলোকে অনুকরণ করে থাকার পর একটা-দুটো করে মানুষ, তা তাদের হাবভাব এবং হুলিয়া যতই ওদের পাতে দেওয়ার মতন না বলে মনে হোক, আসতে থাকে। তাতে ওরাও বেশ নিশ্চিন্ত এবং পুলকিত হয়ে শ্রেণীকক্ষের পেছনের বেঞ্চ ছেড়ে সামনে এগিয়ে যায় বাংলা ভাষাটাকে মনে মনে ঝালিয়ে নিয়ে। অভিভাবকদের দাবীদাওয়া সবই যথেষ্ট পিছিয়ে পড়া। তবু ওরা নিরুপায়। কিছু না বললে কি হয়? বলা কি যায় যদি ওই অভিভাবকরাও খুশি হয়ে যায়? যদি দু’একজনও প্রত্যাশার বাইরে গিয়েও ভর্তি হয়!

 


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন