একদিন - সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য্য

 


ট্রেন যখন স্টেশনে ঢোকে রানিহাটির মাটি কাঁপে। রতন অপেক্ষা করছে, একটু পরেই সরমা আসবে। স্টেশনে আসার সময় চটিটা গেল ছিঁড়ে। সেফটিপিন দরকার। কাঁধে সস্তা ভ্যানিটি ব্যাগ, কপালে শিখার মতো সিঁদুর, এক গাল হেসে দাঁড়াল সরমা। লাল রঙের বেঞ্চিতে এসে বসল দু'জনে। নাকের ডগাটা ঘামে ভিজে সরমার, আয়ার কাজ করে সময়ের আগে বেরোনো অসম্ভব। মেয়েটার জ্বর এসেছে কাল রাতে, শুনে ছেড়ে দিল মাসিমা।

রতন একটু ঘেঁষে বসে বলল, "কালও মেরেচে নাকি গো?"

"দ্যাকো বাপু, মাল টেনে সোহাগ করার মানুষ বড় নোকেদের ঘরে জোটেঅভাবের ঘরে পিরিত ঘুচতে দুদিন লাগে রোজের অভাবী আর রোজের রুগীর জন্য কেউ ভাবে?" ট্রেন না থাকায় স্টেশনটা একদম ফাঁকা। খুব কম মানুষ ওঠা নামা করে এখানে।


 সন্ধ্যের ছায়া নেমে আসছেসরমা সোহাগী গলায় বলল, "দ্যাকো, মাসিমা এটা দিল, ভালো না!" শাঁখা পলা পরা সরু কব্জিতে চকচক করছে একটা সোনালী ব্যান্ডের ঘড়ি। রতনের আঁতে লাগলো, শুকনো মুখে বিড়বিড় করে বলে, "বললাম পুজো অবদি একটু সময় দাও। ছেলেটা এবার বায়না ধরেচে, তার বাইক চাইটেন ক্লাস হয়ে গেছে, 'মাস গেল, মোবাইল চাইল দিলামমাসে মাসে সেই ধার শোধ। ছেলের সাথে বউটাও এখন তাল দিচ্চে! হাড় মাস কালি করে দুপয়সা রোজগারহুঁহ্!" দেখতে দেখতে হুড়মুড় করে একটা ট্রেন স্টেশনে ঢুকে পড়ল। শাড়ি ঠিক করে নিয়ে কাঁধে ব্যাগটা তুলতে গিয়ে সরমা দেখল, রবারের চটিতে সেফটিপিন লাগাচ্ছে রতন। সরমা একটা প্লাটিকের বাটি রতনের হতে ধরিয়ে দিয়েই ট্রেনে ভিড়ের মধ্যে মিশে গেল। স্টেশনের রাধাচূড়া গাছটার নীচে দাঁড়িয়ে একলা রতন। প্লাটিকের ঢাকনা খুলতেই বেরিয়ে পড়ল গাঢ় ঘন দুধের এক বাটি পায়েস। মনে পড়ে গেল, আজই তো ওর জন্মদিন...!


 


 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন