বড় রাস্তার পাশে শশ্মান। বাঁশে দড়ি দিয়ে বাঁধা
কমলি বৌ,দুলে কমলি! কাল রাতে মরেছে,তার একরত্তি বছর দশেকের
মেয়েটা কেঁদেই চলেছে। পচে গিয়ে
গন্ধ উঠবে এই ভেবে পড়শি কেউকেটা নেতা গোছের অনিচ্ছের দড়ি বেঁধে
ফেলে দিয়ে গেছে, 'চললুম রে ফুলকি, এবার বুঝে নে, আর কিছুই করতে পারবনি'। অসহায় ফ্যালফ্যালে চোখ
কাঁদতে ভুলে গেছে, শুধু গোঙাতে থাকে। বাঁশটা ছুঁয়ে বসে থাকে, বড় রাস্তায় অবহেলার চোখ, মৃত্যু ব্যপারটাকে কেউ আমূল
দেয় নি। স্বাভাবিক ঘটনা ভেবে পড়শিও এড়িয়ে যায়। দুলে আবার যক্ষ্মাতে মরেছে। শুচি আর সংক্রমণের ভয়ে কেউ
শ্মশানের দিকে তাকাচ্ছেও না।
রামাই দেখতে পেয়ে ফুচকার গাড়ি থামিয়ে ব্যাপারটা বুঝে ফেলে 'কি রে ফুলকি কাঁদিস না ,আমি আছি! তোর মায়ের সদগতি আমরা করব। বলে ফুচকার গাড়িটা শ্মশানের কাছে দাঁড় করিয়ে বস্তিতে চলে যায়। সেখানে ভোলা কানাই শ্যামা আছে ওরা ইস্কুলের দরজা দেখেনি। কেউ প্লাস্টিক কুড়োয়, কেউ মাথার চুল নিয়ে বিক্রি করে, কেউ হকারি করে, তবে খেয়ে মেখে মোটামুটি আছে। এরা রামাইয়ের শাগরেদ। রামাই মাত্র আট ক্লাস পড়েছে। মা ফুচকা বানিয়ে দেয়, রামাই ঠেক ঠেকে বিক্রি করে। 'এই কানাই ভোলা সব আয় কাজ আছে।‘ সবাই হৈ হৈ এসে শ্মশানের কাজে লেগে পড়ে। কাঠ গোলা থেকে কাঠ এনে আনকোরা হাতে চিতা সাজায় রামাই।
'তোর ভয় নেই আমরা তোর দাদা না! আমাদের কাছে থাকবি, আমাদের ফাইফরমাস শুনবি'। আগুনের ধোঁয়া বড় রাস্তা ছুঁয়ে বস্তি ছুঁয়ে মিলিয়ে যায়
মহাশূন্যে! সমবেত শব্দ অস্ফূটে বলে ওঠে, ‘বেশিদুর লেখাপড়া
শিখতেই পারিনি ভাগ্যিস!’
কঠিন বাস্তব লিখেছেন...নাম গুলো সুন্দর দিয়েছেন রামাই ভোলা শ্যামা কানাই...
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন