শেষের দেখা - চিত্রাভানু সেনগুপ্ত


খবরটা পেয়ে শেষ দেখাটা দেখতে মল্লিকা ছুটে গিয়েছিল, সৌমকান্তি তখন চিরশান্তির ঘুমে, নতুন বসনে ফুলের আবরণে ঢেকে নিশ্চিন্তে অমৃতলোকে পাড়ি দিয়েছেন। মৃতদেহের চারিপাশে থমথমে মুখের পরিচিত মানুষ, চোখে জল, আবার একই অপ্রিয় গুঞ্জন উঠেছে, ...বড় অভাগা ছিল! শেষের দিনগুলোয় শান্তি পায়নি একদিনও। বঞ্চিত হয়েছে সবদিক থেকেই। কাছের মানুষরা সকলে দুচ্ছাই করেছে, এতো হামেশাই হয় আজকাল। শেষের কটা দিন ফিরে তাকায়নি যাদের সঙ্গে তাঁর জন্মসূত্রে যোগ ছিল। আপন ভাইয়েরা, এমনকি নিজের মা-ও ঘরের চৌকাঠ ডিঙাতে মানা করেছিলেন। মল্লিকা দূর থেকে সবটাই লক্ষ্য করেছে। ভিড় ঠেলে কাছে যায়নি।

- “কুসন্তান যদ্যপি হয় কথাটা শুনে ফিরে তাকাল মল্লিকা। এক শুভাকাঙ্ক্ষী বিলাপ শুরু করল।

- সৌম্য শেষজীবনে মায়ের থেকে এমন অবহেলা সহ্য করতে পারল না। এত বড়বাড়ির ছেলে, শেষ জীবনে চিকিৎসাও হয়নি পয়সার অভাবে। কেন এমন হল?

মল্লিকা হঠাৎ বলল, বিনা চিকিৎসায়? উনি তো গভমেন্ট আন্ডারটেকিং কনসার্নে চাকরি করতেন। কী করলেন রিটায়ারমেন্টের এত টাকা?

- তা জানি না! তবে শেষের দিকে খুব অভাব ছিল।

বাজারে মুখরোচক খবরগুলো ছড়ায় বেশি, ঘুরে ঘুরে ক্রমশ ফুলে ওঠে। আসলটা জানতে চায় না কেউ। যে বলে, যে শোনে সবই দায়সারা।

ফিরে আসে মল্লিকা। দূরে দাঁড়িয়ে সৌম্যকান্তির মা, মল্লিকার পিসিমা।


- কিরে! সৌম্যকে দেখে এলি? কতটা অসুস্থবলেছিস, কিছুদিন আমার কাছে এসে থাকতে? আসবে বলেছে? বল না মলি!

- আসবে। এটুকু কথা ছাড়া কিছুই বলে উঠতে পারল না মল্লিকা। এই বৃদ্ধাকে এর থেকে কড়া কথা কেমন করে শোনাবে?  বছর দশেক আগে বাজারের পাওনাদারের দল এসে যখন এই মহিলাকে নির্বিচারে ধাক্কা দিতো!

কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন এমন চিটিংবাজ ছেলেকে? ওকে আমাদের হাতে তুলে না দিলে, আপনার বাকি ছেলেকেও ছাড়ব না!

সেইদিনই তো আধমরা হয়ে গিয়েছিলেন পিসিমা! আর কত?


 

2 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন