বাবা - অমিত দত্ত

 

 পরিত্যক্ত জেটির পাশেই একফালি জমি যেখানে গঙ্গা থেকে একটা খাঁড়ি টেনে আনা হয়েছে। এই সরু খাঁড়িতেই পাশাপাশি বেশ কিছু ডিঙি নৌকো ভাসানো আছে। সবই জেলেদের নৌকো। সাতসকালে সেই একফালি জমিতেই হরেন দু'দিকের দু'টো খুঁটিতে তার চুনো মাছের জালটা আড়াআড়ি মেলে দেখছিল কোনও ফুটোফাটা আছে কিনা। কিছুক্ষণ বাদেই সে নৌকো নিয়ে বেরিয়ে পড়বে। মুন্নারও চলে আসার কথা এখনই। দাঁড় ওই বাইবে।

কাল রাত থেকে মেজাজ ভালো নেই ওর। অভাবের সংসারে একমাত্র শান্তির জায়গা বিল্লু ওস্তাদের দেশি মালের ঠেক। সেখানেই মাঝে মাঝে যায় সে। কাল বোধহয় একটু বেশিই ঢেলেছিল গলায়। মাঝরাতে বাড়ি ফিরতেই ফুরফুরে মেজাজটা নিমেষে তেতো হয়ে গিয়েছিল লক্ষ্মীর চিৎকার আর কান্নাকাটির জেরে। মেজাজ ঠিক রাখতে না পেরে সেও দিয়েছিল কয়েক ঘা। এগুলো তো নিত্যদিনের অশান্তি। তবে তার নেশাগ্রস্ত চোখেও যেটা খারাপ লেগেছিল সেটা হল তার পাঁচ বছরের মেয়ে আশার ভয়গ্রস্ত  চোখে দুয়ার ধরে দাঁড়িয়ে থাকা। সেটাই ভাবছিল ও এখন


- ও হরেন, বেরুবি নি আজ ?

চমক ভেঙে হরেন দেখে যে গোপাল জেলে ওর দিকে তাকিয়ে আছে

- বেরুব নি তো সাত সক্কালবেলা করতিসিটা কী ? ব্যাটাচ্ছেলে মুন্নাটা এলিই ভাসি পড়ব অনে । তা তুমার মাইয়ার কুনও খপর পেলে ?

- কই আর পেলুম ? কার হাত ধরি যে মাইয়াটা বেইরে গেল কে জানে ? থানায় গেলি কুনও পাত্তাই দেয় নাকো। দোষটা আমারই বুইলি । মালের নেশা সব্বনেশে । রোজ রোজ সংসারে ঝামেলাই মাইয়াটারে আর ঘরে থাকতি দিলে নে। ওই তোর মুন্না এয়ে গেছে। পরে কতা হবে রে

হরেন বিড়িটা ধরানোর জন্য কোঁচড় থেকে দেশলাইটা বার করছিল। তার হাত থেকে বাক্সটা মাটিতে পড়ে গেল। বাতাসে কী একটা বাজে গন্ধ পাচ্ছে ও ?



2 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন