মূত্রতন্ত্রের (urinary system) যেকোনো অংশের
সংক্রমণকে মূত্রনালীর সংক্রমণ (ইউটিআই)
রূপে গণ্য করা হয়। বৃক্ক (kidneys), মূত্রাশয়, মূত্রনালী এবং মূত্রছিদ্র নিয়ে মূত্রতন্ত্র গঠিত হয়। মূত্রনালীর নিম্ন স্তরের অন্তর্ভুক্ত মূত্রাশয় এবং মূত্রছিদ্রে সর্বাধিক সংক্রমণ
ঘটে থাকে।
পুরুষদের তুলনায় নারীদের সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি
বেশি হয়। যদি কোনো সংক্রমণ মূত্রাশয়ের
মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, তা হলে তা বেদনাদায়ক ও বিরক্তিকর হলেও,
কিডনিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে তা চিন্তাজনক পরিস্থিতিতে পরিণত হয়। গর্ভাবস্থায়
সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে প্রসবজনিত সমস্যা হতে পারে, যা প্রসূতির ক্ষেত্রে সংকটজনক পরিস্থিতি
তৈরি করে।
লক্ষণঃ
মূত্রনালীর স্বল্প সংক্রমণের ক্ষেত্রে অনেক সময়েই লক্ষণ প্রকাশ
পায় না। কিন্তু সংক্রমণের মাত্রা বেশি হলে বেশ কিছু উপসর্গ প্রকট
রূপে প্রকাশ পায়।
১. বারংবার এবং লাগাতার প্রসাবের তাগিদ অনুভব করা।
২. মূত্রদ্বারে জ্বালা, চুলকানি ও মূত্রত্যাগের সময় যন্ত্রণা।
৩. সামান্য পরিমাণে বারংবার মূত্রত্যাগ প্রবণতা।
৪. ঘোলাটে বা হলুদ বর্ণের মূত্র
৫. মূত্রে রক্তের উপস্থিতি
৬. চড়া দুর্গন্ধ যুক্ত প্রস্রাব
৭. শ্রোণীচক্রে ব্যথা - বিশেষত শ্রোণীচক্রের কেন্দ্রস্থলে এবং পিউবিক হাড়ের আশেপাশে অসহ্য যন্ত্রণা।
৮. জ্বর ও তলপেটে ব্যাথা
সংক্রমণের প্রকারভেদঃ
প্রত্যেক প্রকারের সংক্রমণের পৃথক ও নির্দিষ্ট লক্ষণ দেখা দিতে পারে। মূত্রনালির কোন
অংশ সংক্রমিত হয়েছে তার উপর নির্ভর রোগের লক্ষণগুলি করে।
মূত্রনালীর সংক্রামিত অংশ |
লক্ষণ ও উপসর্গ |
কিডনি |
১.পিঠে ও শরীরে দুই পাশে ব্যাথা ২. প্রচণ্ড
জ্বর ৩. কাঁপুনি
আর তীব্র শীতের অনুভুতি ৪. গা গোলানো ৫. বমি |
মূত্রাশয় |
১. শ্রোণীচাপ ২. তলপেট
জুড়ে অস্বস্তি ৩. ঘন ঘন, বেদনাদায়ক প্রস্রাব ৪. প্রস্রাবে
রক্ত |
মূত্রছিদ্র |
১. প্রস্রাবের
সময় তীব্র জ্বালা ২. চুলকানি ৩. শ্বেতস্রাব |
সংক্রমণের কারণঃ
১. মূত্রনালীর সংক্রমণ সাধারণত মল থেকে
মূত্রনালীতে প্রবেশ করা ব্যাকটেরিয়ার কারণে ঘটে।
২.ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীর মাধ্যমে প্রবেশ করে এবং শরীর থেকে প্রস্রাব নির্গমনের
সময়ে মূত্রছিদ্রের মাধ্যমে নির্গত হয়।
৩. পুরুষদের তুলনায় নারীদের মূত্রনালীর আকার ছোট হওয়ায় ব্যাকটেরিয়া মূত্রাশয় এবং কিডনিতে দ্রুত পৌঁছায় এবং সংক্রমণ ঘটায়।
যে বিষয়গুলো ব্যাকটেরিয়ার মুত্রাশয়ে প্রবেশের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে সেগুলো হলঃ
১. অপরিচ্ছন্নভাবে যৌন সঙ্গম করা।
২. গর্ভাবস্থা।
৩. কিডনি পাথর প্রভৃতি কারণে মূত্রনালীর পথ অবরোধ হয়ে যাওয়া।
৪. পুরুষদের ক্ষেত্রে বর্ধিত প্রোস্টেট
এবং শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যর কারণে মূত্রাশয় পরিপূর্ণরূপে
খালি না হওয়া।
৫. মূত্রনালীর ক্যাথিটার ব্যবহারের ফলে।
৬. দুর্বল অনাক্রমতার কারণে। যেমন মধুমেহ আক্রান্ত রুগি বা অন্যান্য মারণ রোগে আক্রান্ত রুগিদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের প্রবণতা
বাড়ে।
৭. পর্যাপ্ত জল পান না করা।
৮. যৌনাঙ্গ পরিষ্কার এবং শুষ্ক না রাখা।
৯. অপরিস্কার স্থানে প্রস্রাব ত্যাগ করা।
১০. প্রস্রাব ত্যাগের পর প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখা।
সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থাঃ
নিয়মিত কিছু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বজায় রাখলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
১. মল – মূত্র ত্যাগের পরে মূত্রছিদ্র
থেকে পায়ু অবধি পরিষ্কার করা উচিত।
২. সর্বদা যৌনাঙ্গ পরিষ্কার এবং শুষ্ক রাখা দরকার।
৩. প্রচুর পরিমাণে জল পান করা দরকার।
দিনে কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন লিটার জল পান আবশ্যক।
৪. যৌন মিলনের আগে ও পরে যোনি ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল পরিষ্কার
জল দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করা দরকার।
৫. যৌনসঙ্গমের পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রস্রাব ত্যাগ করা।
৬. শিশুদের ক্ষেত্রে একই ডায়াপার ও মহিলাদের ক্ষেত্রে ঋতুকালীন স্যানিটারি প্যাড দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার না করে
সঠিক সময়ে পরিবর্তন করা।
৭. যৌনাঙ্গে সুবাসিত সাবান ব্যবহার না করা।
৮. প্রস্রাব দীর্ঘ সময় ধরে আটকে না রাখা।
৯. প্রস্রাব ত্যাগের সময় তাড়াহুড়ো না করাই উচিত। সম্পূর্ণ রূপে প্রস্রাব করে মূত্রাশয়
ফাঁকা করা দরকার।
১০. নাইলন বা সিনথেটিক কাপড়ের অন্তর্বাস ব্যবহার না করা।
১১. অতিরিক্ত পরিমাণে মিষ্টি জাতীয় খাবার, মদ এবং অন্যান্য নেশা সংক্রমণের প্রবণতা
বৃদ্ধি করে।
১২. গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা হিসাবে non-spermicidal lube ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত।
সংক্রমণ হলে ঘরোয়া উপায়ে সারানোর চেষ্টা না করে যথাশীঘ্র চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নেওয়া উচিত।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন