সানস্ক্রিন জিনিসটা কি?
সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম হচ্ছে একধরণের সাময়িক ( topical) ওষুধ, যা লাগালে সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করা যায়। সানস্ক্রিন ক্রীম, জেল, লোশন- বিভিন্ন প্রকারে বাজারে উপলব্ধ হয়।
সানস্ক্রিনের প্রকারভেদঃ
ত্বকের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে জেল, ক্রীম, লোশন বিভিন্ন ধরণের ফর্মূলেশনে সানস্ক্রিন পাওয়া যায়। এক একটি এক এক ধরণের ত্বকের জন্য উপযুক্ত। একজন ত্বক বিশেষজ্ঞ কোন ত্বকের জন্য কোন ধরণের ফর্মুলা উপযোগী তার বিষয়ে জানাতে পারেন।
সানস্ক্রিনকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায় - ফিজিক্যাল ও কেমিক্যাল সানস্ক্রিন। ফিজিক্যাল সানস্ক্রীনে জিঙ্ক অক্সাইডের মত উপাদান থাকে, যা ত্বকের উপর সাদা রঙের অস্বচ্ছ আস্তরণ তৈরি করে যা আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মিকে ত্বকের ভিতরে ঢুকতে বাধা দেয়। অন্যদিকে কেমিক্যাল সানস্ক্রীনে অকটিনক্সাট জাতীয় উপাদান ত্বকের ভিতরে ঢুকে অতি বেগুনী রশ্মিকে শোষণ করে নেয়, যাতে তা ত্বকের গভীরে ঢুকে ত্বকের কোষের ক্ষতি না করতে পারে।
এছাড়া সানস্ক্রিন আরও দুই ধরণের হয়। আল্ট্রাভায়োলেট এ রোধ করার শক্তি ও আল্ট্রাভায়োলেট বি রোধ করার শক্তি অনুযায়ী।
আল্ট্রাভায়োলেট বি রোধ করার শক্তি মাপা হয় এস পি এফ (SPF-sun protection factor) দিয়ে। এস পি এফ বেশি মানে সেই সানস্ক্রিন তত বেশি সময় ধরে ত্বককে আল্ট্রাভায়োলেট বি রশ্মি থেকে রক্ষা করবে।
আল্ট্রাভায়োলেট এ প্রতিরোধ শক্তি মাপা হয় পি এ (PA+ to PA+++) দিয়ে। পি এ বেশি মানে সেই সানস্ক্রিন ত্বককে আল্ট্রাভায়োলেট এ রশ্মি দিয়ে কালো হয়ে যাওয়ার থেকে তত বেশি বাঁচাতে পারবে।
কোন সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত?
ত্বক শুকনো না তৈলাক্ত না মিশ্রিত, ত্বকে ব্রণ বের হয় কিনা, কতটা ট্যান আগের থেকেই রয়েছে ত্বকে, একজন ব্যক্তি দিনে কতক্ষণ সূর্যালোকে থাকেন - এই সব দেখে একজন ত্বক বিশেষজ্ঞ উপযুক্ত সানস্ক্রিন নির্বাচন করেন।
১. এস পি এফ ৩০ এর নিচে সানস্ক্রিনে বিশেষ কাজ হয়না। তাই এস পি এফ ৩০ বা তার বেশি সানস্ক্রিন কেনা উচিত।
২. এস পি এফ ৭৫/১০০ সানস্ক্রীনে অনেক বেশি লাভ পাওয়া যায় তা কিন্তু নয়, তাই এস পি এফ বেশি মানেই দারুন শক্তিশালী সানস্ক্রিন তা না ভাবাই উচিত।
৩. ব্রণ থাকলে সব সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যায়না। নন কোমেডোজেনিক সানস্ক্রিন লাগবে।
৪. শুধু এস পি এফ না, পি এ রেটিং ও জরুরি। আল্ট্রাভায়োলেট এ কিন্তু বি এর থেকে বেশি ক্ষতিকর। বেশিরভাগ সানস্ক্রিন ব্রড স্পেকট্রাম, অর্থাৎ এ বি দুটো থেকে বাঁচায় বলে লেখা থাকলেও, আসলে কিন্তু আল্ট্রাভায়োলেট এ তে কাজ করে এরকম সানস্ক্রিন কমই আছে। আগে বলা হত জিঙ্ক অক্সাইড এ বি দুটো রশ্মি থেকেই খুব ভালো সুরক্ষা দেয়, কিন্তু সাদা রং হয়ে যায় বলে অনেকেই ব্যবহার করতে চান না।
৫. শুধু কেমিক্যাল সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত না।
৬. মুখ ধুয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণে সানস্ক্রিন লাগানো উচিত। এবং দিনের শেষে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে ধুয়ে সানস্ক্রিন তুলে ফেলে ময়শ্চারাইজার বা নাইট ক্রিম লাগানো উচিত।
৭. বেশিক্ষণ রোদে থাকলে বারবার সানস্ক্রিন লাগানো প্রয়োজন। বেশিরভাগ সানস্ক্রিনের কাজ ৩-৪ ঘন্টার বেশি থাকেনা।
৮. মেঘলা দিনেও সানস্ক্রিন লাগানো প্রয়োজন। আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি মেঘ ভেদ করে আসতে পারে। গাড়ির মধ্যে মুখে রোদ লাগলেও সানস্ক্রিন লাগানো প্রয়োজন, এমনকি বাড়িতে থাকলেও মুখে রোদ লাগলে সানস্ক্রিন লাগানো প্রয়োজন। যারা কম্পিউটারের সামনে কাজ করেন, তার থেকে বেরোনো আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে বাঁচার জন্য তাদের অন্ধকার ঘরে থাকলেও সানস্ক্রিন লাগানো প্রয়োজন। মনে রাখা দরকার, বিপদ দৃশ্য আলো থেকে নেই, অদৃশ্য আলো থেকে আছে, যা এখনকার টিভি, মোবাইল, ঘড়ি অনেক কিছু থেকে বের হয়।
৯. ২৫ বছরের পর থেকে প্রত্যেকেরই মুখে সানস্ক্রিন লাগানো উচিত। সূর্যরশ্মি ত্বকের বয়স তাড়াতাড়ি বাড়িয়ে দেয় এবং অনেক রকম রোগের সৃষ্টি করে, এমন কি ত্বকের ক্যান্সারও হওাএ সম্ভাবনা থাকে। বৃদ্ধ বয়সে সানস্ক্রিন মাখতে আরম্ভ করলে অল্প বয়সে ত্বকে হয়ে যাওয়া ক্ষতিগুলি ঠিক হওয়া সম্ভব নয়।
১০. শুধু সানস্ক্রিন কখনোই আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে পুরো সুরক্ষা দিতে পারেনা। যদি কোনো রোগ থাকে যা সূর্যালোকে বাড়ে বা চামড়া খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয় অথবা সহজেই রোদে পুড়ে যায় এবং কাউকে দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকতে হয়, সেক্ষেত্রে ছাতা, মুখ ঢাকা রুমাল, ওড়না, রোদচশমা প্রভৃতি ব্যবহার করা প্রয়োজন।
ত্বকের ক্ষেত্রে কোনো আপস করা উচিত নয়। কসমেটিক সানস্ক্রিন না লাগিয়ে মেডিকেটেড সানস্ক্রিন লাগানো সব সময়েই বেশি ভালো। একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় সঠিক সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতি রোধ করা সম্ভব।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন