নিরামিষে মুখ বদল - বাণী মিত্র


ছোটবেলায় দেখেছি মা রান্না করার সময় একটি ছোট ডায়রি থেকে দেখে দেখে রান্না করতেন। পেপার পত্রিকায় কোনও ভালো পদের রন্ধন প্রণালী পেলেই তা ওই ডায়রিতে লিখে রাখতেন। আজকাল আমাদের প্রজন্ম ঘরে বাইরের ব্যস্ততায় নাজেহাল দশা সামলে এই ধরণের লেখালিখি করার কথা ভাবতেই পারে না। ফলে বহু পুরনো অত্যন্ত সুস্বাদু আহার আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। হাজারো ব্যস্ততার পরে সময় সুযোগ জুটলে যখন রান্নার ইচ্ছা জাগে তখন আন্তর্জালের জগত হাতড়ে যা পাওয়া যায় তাই দিয়েই আমরা কোনও মতে প্রিয়জনের জিভকে সন্তুষ্ট করি। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় পাতে পড়ে সেই এক গতে বাঁধা রান্না। আজ ইচ্ছা হল কিছু পুরনো অতি সুস্বাদু নিরামিষ রান্নার খোঁজ দিতে। আমিষ খাবারের থেকে কিছুক্ষণের জন্য স্বাদ বদলও ঘটবে আবার সেই দিদিমা – ঠাকুমার হাতে বানানো খাবারের স্বাদও ছুঁয়ে দেখা যাবে।


নিরামিষ ডিমের ডালনা


 

উপকরণঃ

  • ছানা – ৪০০ গ্রাম
  • ছোলার ডাল – ২০০ গ্রাম
  • ময়দা – ৫০ গ্রাম
  • আলু  – ১০০ গ্রাম ( ছোট ছোট টুকরো করে কাটা)
  • আলু সেদ্ধ – ৩ চা চামচ
  • টমেটো বাটা – ১০০ মিলি
  • টক দই – ১০০ গ্রাম
  • আদা বাটা – ৫ টেবিল চামচ
  • কাঁচালঙ্কা লঙ্কা বাটা – ৬/৭ চা চামচ
  • হিং – ১ চা চামচ
  • গোটা জিরে – ১ চা চামচ
  • নুন – পরিমাণ মত
  • চিনি – পরিমাণ মত
  • হলুদ – পরিমাণ মত
  • লঙ্কা গুঁড়ো – ১ চা চামচ
  • আমচুর পাউডার – ১ চা চামচ
  • গরম মশলা বাটা -২ চা চামচ
  • তেজপাতা – ২ টো
  • শুকনো লঙ্কা – ২ টো
  • সর্ষে তেল – ২৫০ মিলি
  • ঘী – ৩ চা চামচ

 

প্রণালীঃ

  • ডিমের সাদা অংশ তৈরি করার জন্য সাদা কাপড়ের মধ্যে ছানা ঝুলিয়ে   রেখে ছানাজল ঝরিয়ে নিতে হবে।
  • জল ঝরানো ছানার সঙ্গে দুই-এক টুকরো আলু সিদ্ধ, স্বাদ মতো নুন, চিনি ময়দা মিশিয়ে খুব ভালো করে মেখে মণ্ড তৈরি করে নিতে হবে। মণ্ড যেন খুব মোলায়েম হয়, গায়ে ফাটল যেন না থাকে।
  • ডিমের কুসুম তৈরি করতে ছোলার ডাল সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর জল ফেলে ১ চামচ আদা ও কাঁচালঙ্কা বাটা মিশিয়ে ডাল মিহি করে বেটে নিতে হবে।
  • এবার কড়াইতে তেল গরম করে হিং, গোটা জিরে ফোড়ন দিতে হবে । তার মধ্যে নুন,চিনি, হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো ও একটু আমচুর পাউডার মিশিয়ে, ঢিমে আঁচে ডাল বাটা ভালো করে কষতে হবে । সব মশলা মিশে, মিশ্রণটা কড়াইয়ের গা ছেড়ে দিলে নামিয়ে নিতে হবে
  • এবার ছোলার ডালের মিশ্রণ থেকে ছোট ছোট ডিমের কুসুমের মতো গুলি তৈরি করে নিতে হবে
  • ছানার মন্ড থেকে পরিমাণ মতো ছানা নিয়ে তার মধ্যে ডালের গুলি ভরে, ওপর দিকে ছানা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে । তারপর হাত দিয়েই ডিমের আকার দিতে হবে।
  • ডিমগুলি সব গড়া হলে হাল্কা আঁচে তেলে ডুবো তেলে ভেজে তুলে রাখতে হবে
  • কড়াইতে বাকি তেল দিয়ে তেল গরম হলে কেটে রাখা আলু আগে ভেজে তুলে নিতে হবে। ওই তেলেই হিং, গোটা জিরে, শুকনো লঙ্কা আর তেজপাতা ফোড়ন দিতে হবে
  • আগে থেকে একটা বাটিতে টোম্যাটো বাটা, নুন, চিনি, লঙ্কার গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, আদাবাটা ও অল্প জল দিয়ে একটা ঘন মিশ্রণ তৈরি করে রাখতে হবে
  • ফোড়ন ফুটে গেলে তেলে মশলার মিশ্রণ দিয়ে কম আঁচে কষাতে হবে যতক্ষণ না মশলা তেল ছাড়ে।  তেল ছেড়ে দিলে দই মিশিয়ে অল্প কষিয়ে নিতে হবে।
  • এবার ভেজে রাখা আলুগুলি দিয়ে খানিকক্ষণ কষে, পরিমাণ মতো গরম জল দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। আলু সিদ্ধ হয়ে গেলে, ভেজে রাখা নিরামিষ ডিমগুলি দিয়ে একবার ফুটিয়ে, ঘি, গরম মশলা ছড়িয়ে নামাতে হবে

 

তেল বেগুন

 


উপকরণঃ

  • ছোট সরু বেগুন – ২ টো ( বোঁটা থেকে লম্বা করে দুই টুকরো করা)
  • নারকেল কোরা – ২ টেবিল চামচ
  • সাদা তিল – ২ চামচ
  • কাঁচা লঙ্কা বাটা৩/৪ চামচ  (এক সাথে পেষ্ট করে রাখতে হবে)
  • দই   ৫০ গ্রাম
  • নুন, - পরিমান মতো
  • হলুদ - পরিমান মতো
  • চিনি – পরিমান মতো
  • কাঁচা লঙ্কা – ৪/৫ টি
  • কালো জিরে – ১ চামচ
  • তেজপাতা – ২ টো
  • নারকেল দুধ – ১০০ মিলি
  • সরষের তেল – ২০০ মিলি 

 

প্রণালী

  • প্রথমে বেগুনের টুকরোগুলোতে নুন  ও সামান্য হলুদ মাখিয়ে রেখে দিতে হবে।
  • কড়াই গরম হলে বেশি করে তেল দিয়ে নুন হলুদ মাখা বেগুনগুলো ভেজে তুলে নিতে হবে
  • তেলে কাঁচা লঙ্কা আর কালো জিরে ফোড়ন দিয়ে একটু নেড়ে আঁচ কমিয়ে মশলার পেষ্ট, নুন, হলুদ দিয়ে বেশ ভালো করে কষতে হবে।
  • মশলা থেকে তেল ছাড়তে শুরু করেলে আধা কাপ উষ্ণ জল দিয়ে ঢাকা দিয়ে ফুটতে দিতে হবে
  • ঝোল ফুটে উঠলে ঢাকা খুলে নাড়তে হবে। ঝোল ঘন হলে নারকেল দুধ দিয়ে আর একটু ফুটিয়ে কাঁচালঙ্কা বাটা ও  ৪/৫ চামচ কাঁচা সর্ষের তেল দিয়ে ঢাকা দিয়ে আঁচ বন্ধ করে দিতে হবে
  • একটা পাত্রে কিছুটা ঝোল ঢেলে বেগুন ভাজা তার ওপর রেখে বাকি ঝোল বেগুনের ওপর ঢেলে আর একটু তেল ওপর থেকে ঢেলে দিলেই তেল বেগুন তৈরি। 


মোচার পোলাও



 উপকরণঃ

  • গোবিন্দ ভোগ চাল - ১৫০ গ্রাম,
  • মোচা - ১ টি মাঝারি আকৃতির,
  • মটর ডাল - ৫০ গ্রাম,
  • ধনে গুঁড়ো - ১ চা চামচ,
  • জিরে গুঁড়ো - ১ চা চামচ,
  • আদা বাটা - ১ চা চামচ,
  • টমেটো বাটা –  ৫০ মিলি
  • এলাচ – ২ টি
  • লবঙ্গ – ৫ টি
  • দারচিনি – ১ ইঞ্চি
  • গোটা জিরে – ১ চামচ
  • তেজপাতা  - ২ টি,
  • কাজু - ১০ গ্রাম
  • কিসমিস ১০গ্রাম ,
  • সরষের তেল ২০০ মিলি
  • হলুদ - ১ চা চামচ,
  • নুন -পরিমাণ মত,
  • চিনি-  ৪ চা চামচ,
  • ঘি – ৫০ মিলি ,
  • ভাজা মশলা - ২ চা চামচ

 

প্রণালীঃ

  • প্রথমে মোচা কেটে সেদ্ধ করে জল ঝড়িয়ে নিতে হবে
  • গোবিন্দ ভোগ চাল আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে ধুয়ে জল ঝড়িয়ে রাখতে হবে
  • মটর ডাল সারা রাত ভিজিয়ে নরম হলে ডালের সাথে অল্প আদা, নুন, কাচালঙ্কা মিশিয়ে বেটে ছোট ছোট বড়ার আকারে ভেজে নিতে হবে
  • কড়াইতে তেল গরম করে জিরে, তেলপাতা গোটা গরম মশলা ফোড়ন দিয়ে,  তার মধ্যে টমেটো বাটা, আদাবাটা সহ বাকি সব মশলা দিয়ে কষাতে হবে
  • নুন, হলুদ ও চিনি মিশিয়ে তেল ছাড়া অবধি কষাতে হবে।
  • মশলা কষতে কষতে সেদ্ধ করে রাখা মোচা দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে  উষ্ণ জল মেশাত হবে
  • মিনিট পর চাল দিয়ে আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে দমে বসিয়ে চাল সেদ্ধ হওয়া অবধি অপেক্ষা করতে হবে।
  • চাল জল শুষে ঝুরঝুরে ভাত হলে ভেজে রাখা বড়া, ঘি আর গরম মশলা মিশিয়ে নামিয়ে নিতে হবে।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন