তূর্ণ ছোট থেকেই ঠাকুমার ন্যাওটা ছিল। ঠাকুমাই তাকে খাওয়াত, চান করাত। লেখাপড়ার সময় ছাড়া সে মায়ের কাছ ঘেঁষত না। ঠাকুমা না খাওয়ালে তার পেট ভরত না, ঠাকুমা গল্প না বললে ঘুম আসত না। ঠাকুমাও একমাত্র নাতি তূর্ণকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসতেন।
তূর্ণ তখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। একদিন সকালে হঠাৎই ঠাকুমা খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তূর্ণ পাশে বসে ঠাকুমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মাকে বলল, "মা, আজ স্কুল যাব না, আমি ঠাকুমার কাছে থাকব।"
কথাটা শুনেই মা রেগে বললেন, "যাবে না মানে! আজ ক্লাস টেস্ট আছে, তোমাকে স্কুলে যেতেই হবে। তাছাড়া তুমি থেকে কী করবে, তুমি কি ডাক্তার?" মায়ের ভয়ে তূর্ণ সেদিন নিতান্ত অনিচ্ছায় স্কুলে গেছিল। বাড়ি ফিরে জানতে পারে ঠাকুমা আর নেই। ঠাকুমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, কিন্তু বাঁচানো যায়নি।
এরপর
কুড়ি বছর কেটে গেছে। সেদিনের ক্লাস থ্রি-র তূর্ণ এখন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে
ফ্রান্সে চাকরি করে। কিন্তু আজও সে ঠাকুমার মৃত্যুর দিনটা ভুলতে পারেনি। মা জোর
করে স্কুলে পাঠানোয় সে ঠাকুমার মৃত্যুর সময় পাশে থাকতে পারেনি। এই আক্ষেপ আজও তার
যায়নি।
বছর
তিনেক হলো তূর্ণ ফ্রান্সে আছে। পর পর দু'বছর দুর্গা পুজোয় বাড়িতে এসেছিল। গতবছর সে
আসেনি, আর কখনো আসাতেও চায় না। ফ্রান্সে নাগরিকত্বের জন্যে আবেদন করেছে। এমিলিকে বিয়ে
করে ফ্রান্সেই থেকে যাবে।
মাসখানেক
হলো স্ট্রোকে তূর্ণের মা কমলা বসুর দেহের বাঁদিকটা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েছে।
শয্যাশায়ী হয়ে তিনি তূর্ণকে কাতর ভাবে ফোন করলেন,
"বাবু তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে
করছে। একবার আয়। কখন মরে যাব ঠিক নেই, একবার এসে শেষ দেখা দেখে যা!"
তূর্ণ
নির্লিপ্তভাবে কঠিন স্বরে জবাব দিল, "আমি গিয়ে কী করব, আমি
কি ডাক্তার? টাকা পাঠাচ্ছি। ভাল করে চিকিৎসা করাও।"
সব ক্ষেত্রে হয়তো টিট ফর ট্যাট সমর্থনযোগ্য নয়। তাও বলবো যে কোনও পাপই শাস্তিযোগ্য...
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন