ছবি - মেরি ক্রিসমাস
পরিচালক - শ্রীরাম রাঘবন
অভিনয়ে - ক্যাটরিনা কাইফ, বিজয় সেতুপতি, রাধিকা আপ্তে, অশ্বিনী কেলসেকর, সঞ্জয় কাপুর, ল্যুক কেনি
বাসস্ট্যান্ডে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। ভিড়ের মধ্যে হঠাৎই সুন্দরী এক তরুণী আপনাকে দেখে মুচকি হাসলো, কিম্বা কোনো রেস্তোরাঁতে, কিম্বা সিনেমা দেখতে গিয়ে। আপনিও খুশির আতিশয্যে অথবা সৌজন্যের খাতিরে সেই হাসি ফিরিয়ে দিলেন। এতো অবধি ঠিক আছে। কিন্তু মনে সাহস এনে আলাপচারিতা করতে এগিয়ে গেলে বা তরুণীটি নিজে থেকে সেই উদ্যোগ নিলে অবশ্যই সাধু সাবধান! কেন? উত্তর পেয়ে যাবেন "মেরি ক্রিসমাস" চলচ্চিত্রে।
নাহয় খুলেই বলা যাক। কাহিনীটি জানতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে আশির দশকে। মুম্বই তখন বোম্বে। সাতবছর পর এক যুবক অ্যালবার্ট নিজের বাড়ি ফিরেছে। পরিবার বলতে সে একা, অবিবাহিত। বড়দিনকে কেন্দ্র করে যখন আশপাশের সবাই আনন্দে মশগুল, অ্যালবার্টের সময় কাটে নিঃসঙ্গভাবে। অগত্যা ক্রিসমাস ইভে নিজের সঙ্গে নৈশভোজ সারতে একটি রেস্তোরাঁতে এসে উপস্থিত হয় সে। সেখানে দেখা মেলে এক রহস্যময়ীর, সঙ্গে একটি ছোট্ট বাচ্চা। সেই রহস্যময়ী অবশ্য উপযাচক হয়ে নিজে থেকে আলাপ করতে আসে না, বরং যথাসম্ভব এড়িয়ে চলারই চেষ্টা করে। কিন্তু কোন এক অমোঘ আকর্ষণে অ্যালবার্ট তার পিছু নেয়।
প্রাথমিক কথাবার্তার পর সে জানতে পারে মেয়েটি বিবাহিতা, তবে স্বামীর সঙ্গে সদ্ভাব নেই। হঠাৎ মেয়েটি যেন অ্যালবার্টের সঙ্গে একটু বেশিই সহজভাবে আচরণ করতে থাকে। তাকে নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানায়, সুরাপানের প্রস্তাব দেয়, একসঙ্গে নাচ করতে ডাকে। তবে অ্যালবার্টের সেভাবে খটকা লাগে না। মেয়েটি জানায়, এসব নিছকই তার একাকিত্ব দূর করার প্রচেষ্টা। খানিক পরে মেয়েটি তার বাচ্চাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে অ্যালবার্টকে বলে দু'জন মিলে কিছুক্ষণের জন্য বাইরে থেকে ঘুরে আসা যাক। অ্যালবার্ট সানন্দে সম্মত হয়। সময়টা বেশ ভালোই কাটে। নির্দিষ্ট সময় পর তারা যথারীতি মেয়েটির বাড়িতে ফিরে আসে।
ঘরে প্রবেশ করার পর যে দৃশ্য তারা দেখে তার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না। এতক্ষণ ধরে মেয়েটিকে রহস্যময়ী বলে মনে হলেও এবার অ্যালবার্টের অতীত জীবন প্রকাশ পায় যা যথেষ্ট রহস্যজনক এবং অস্বস্তিদায়ক। অ্যালবার্ট সেখান থেকে চলে গিয়েও মেয়েটির পিছু নেওয়া বন্ধ করতে পারে না। তার সাথে এতক্ষণ ধরে ঘটা একই ঘটনা একই সংলাপ তারই সামনে ঘটে যেতে থাকে অন্য একজনের সঙ্গে, যেন অ্যালবার্ট চলে গেছে কোনো সমান্তরাল পৃথিবীতে। শুধু তার জায়গায় অন্য চরিত্র, বাকি সবটা পুরোপুরি এক। এতেই শেষ নয়। যত সময় যায়, রহস্য ক্রমশ ঘনীভূত হতে থাকে। তারপর? এখানেই থামা যাক। সব বলে দিলে সিনেমায় কিছু আর দেখার থাকবে না।
নতুন বছরের ১২ই জানুয়ারি শ্রীরাম রাঘবনের নির্দেশনায় হিন্দি ও তামিল ভাষায় মুক্তি পেয়েছে "মেরি ক্রিসমাস" চলচ্চিত্রটি। মুখ্য ভূমিকায় ক্যাটরিনা কাইফ এবং বিজয় সেতুপতি। এছাড়াও বিশেষ কিছু চরিত্রে বিনয় পাঠক, রাধিকা আপ্তে এবং সঞ্জয় কাপুরের দেখা মেলে। রহস্যরোমাঞ্চ মুভি হিসাবে চলচ্চিত্রটি প্রকাশ পেয়েছে। তবে চলচ্চিত্রে রহস্য থাকলেও রোমাঞ্চের তুলনায় "ড্রামা"র আধিক্য বেশি চোখে পড়ে, যদিও তা অতিরঞ্জিত নয়। অভিনয়ের প্রসঙ্গে বলতে গেলে ক্যাটরিনা কাইফ খুব ভালো করে উঠতে পারেননি, তবে চেষ্টা করেছেন। বাকি সকলে সম্পূর্ণভাবে যথাযথ। চলচ্চিত্রটির কাহিনীতে কমবেশি ভুলভ্রান্তি রয়ে গেলেও "মেরি ক্রিসমাস" অন্ততপক্ষে একবার দেখে ফেলাই যায়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন