দুলালীর বাপ - তুষার সরদার


।।এক।।

প্রথমে ডান পায়ের গোড়ালির চারদিকে ঘুরিয়ে চেপে ছুরি চালিয়ে গোল করে চামড়া কেটে নিল। তারপর পায়ের ভিতর দিক বরাবর ছুরিটা চামড়ার তলায় চেপে ঢুকিয়ে সামনের দিকে জোরে চাপ দিতে দিতেই পায়ের চামড়া লম্বালম্বি কেটে কেটে একেবারে তলপেটের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে গেল। একই ভাবে বাঁ পায়ের ভিতর দিক বরাবর চামড়া কেটে কেটে তলপেটের ওই একই জায়গায় এসে মেলাতে হবে। তার পর সেখান থেকে মোটামুটি সরলরেখায় পেটের মাঝবরাবর ছুরি চালিয়ে চামড়া কেটে এগোতে এগোতে বুক পেরিয়ে একেবারে গলা পর্যন্ত ছুরিটা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

খুব দ্রুতই এসব করতে হবে। দেরি করে ফেললেই নানা বিপদ ঘনিয়ে আসবে। গণেশ পিছন দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে সম্ভাব্য কোনো বিপদ আসছে কিনা সেই সম্ভাবনাটা একবার ভালো করে দেখে নেয়। নাঃ! যতদূর নজর চলে এ তল্লাটে কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। পিছনের ডান পায়ের চামড়া ছাড়ানো হয়ে গেছে। এবার একই ভাবে বাঁ পায়ের চামড়া ছাড়াতে হবে। তারপর সামনের যে কোনো একটা পায়ের চামড়া পুরো ছাড়িয়ে নিলেই হবে। তাহলেই মেরুদণ্ড পর্যন্ত একদিকের চামড়া ছাড়িয়ে ফেলা সম্ভব হবে।

কোনোমতে মেরুদণ্ড পর্যন্ত চামড়া ছাড়িয়ে ফেলতে পারলেই কেল্লা ফতে। তারপরে অন্য কোনো ভাগীদার এলেও আর তাকে এই চামড়ার ভাগ দিতে হবে না। ছুরি চালাতে চালাতেই গণেশ আবার একবার চারপাশ তাকিয়ে নেয়। এবারেও আপাতনির্জন গো-ভাগাড়টার আশেপাশে বা দূরে কাউকেই দেখতে পেল না সে। রক্ত রস লেগে পিচ্ছিল হয়ে যাওয়া হাত গামছায় মুছে নিয়ে মৃত গোরুটার চামড়ার ভাঁজে ছুরি চালানোর গতি বাড়ায় গণেশ।

।।দুই।।

গণেশ দাস মুচি সম্প্রদায়ের লোক। সমাজ-জীবনের এবং দারিদ্র সীমার অনেক নীচের দিকে এদের অতি কুণ্ঠিত ও অশুচি অবস্থান। অনিশ্চিত মরসুমি দিনমজুরি এদের জীবিকা অর্জনের প্রধান উপায়। মরসুমি দিনমজুরি ছাড়া গৃহস্থের ব্যবহার্য নানারকম বাঁশ ও বেতের জিনিস যেমন ধামা, কুলো, পালি, চুপড়ি ইত্যাদি তৈরি ও মেরামত করে থাকে।

শিক্ষিত রুচিবান সুসভ্য মানুষের সমাজে স্মরণযোগ্য কাল থেকে এরা নিতান্ত অস্পৃশ্য সম্প্রদায়ের লোক। ভবিষ্যতেও এরা একই রকম অবস্থানে থেকে যাবে। সমাজজীবনের বাইরে এদের স্থান বলে এদের হাতের জল-অচল বটে। তবে এদের হাতের তৈরি করা বা মেরামত করা জিনিস সব শ্রেণির সব বর্ণের গৃহস্থই সম্পূর্ণ নির্দ্বিধায় গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহার করে থাকে।

তাছাড়া যে কোনো বিভিন্ন মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে এমন কী বিভিন্ন ছোটোবড়ো ঠাকুরের বারোয়ারি বা গৃহস্থের পুজোর শুদ্ধাচারসম্মত আয়োজনেও এদের অপবিত্র ধিক্কৃত হাতের তৈরি বাঁশ ও বেতের জিনিস পূজোপচার সাজাতে বা বহন করতে অপরিহার্য ভাবে কাজে লাগে। তবে ওই জিনিসগুলোর সৃষ্টিকারী এই মানুষরা অবশ্য ঘৃণ্য এবং নিতান্ত অসম্মানযোগ্যহয়ে আছে ওই মানুষের সমাজে।

ওইসব জীবিকা ছাড়া সময়ান্তরে গো-ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া মৃত গবাদি পশুর চামড়া ছাড়িয়ে বিক্রি করে কিছু উপার্জন হয় এদের। তবে এগুলো মরসুমি দিনমজুরির কাজ জোটার থেকে অনেক বেশি অনিশ্চিত। মৃত গবাদি পশুর প্রধানত গোরুর চামড়া ছাড়িয়ে বিক্রি করতে পারলে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পাওয়া যায়। তবে সে চামড়ার ভাগীদার জুটে গেলে মুশকিল। গৃহপালিত মোষের চামড়ার দাম অবশ্য আরো বেশি। কিন্তু বাংলার গ্রামাঞ্চলে গবাদি পশু হিসেবে মোষের তেমন চলন বা কদর নেই। যদিও যমের বাহন বলে বিদিত এই পশুটি গোরুর তুলনায় অনেক বেশি কাজের, কষ্টসহিষ্ণু এবং শান্তও বটে।

।।তিন।।


এই মৃত গবাদি পশুর চামড়া যারা ছাড়ায় তাদের মধ্যে চামড়ার দাম ভাগাভাগির একটা অলিখিত কিন্তু অবধারিত নিয়ম আছে। সে নিয়ম ওদের সম্প্রদায়ের সবাই মান্য করে চলে। ভাগাড়ে পড়ে থাকা মৃত গোরু বা মোষের চামড়ার উপর ওদের সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা চামড়া ছাড়াবার কাজ করে তাদের সকলের সমান অধিকার আছে। তবে প্রথমে কেউ এসে পড়ে মৃত পশুর যে কোনো একপাশ থেকে মেরুদণ্ড পর্যন্ত চামড়া ছাড়িয়ে ফেলতে পারলে সেক্ষেত্রে আর সেই চামড়াটার উপর অন্যের কোনো দাবি খাটবে না।

কিন্তু মেরুদণ্ড পর্যন্ত চামড়া ছাড়িয়ে ফেলতে পারার কঠিন ও সময়য়সাপেক্ষ কাজটা করে ফেলার আগে কেউ এসে পড়ে ভাগাড়ে থাকা সেই মৃত গোরু বা মোষ ছুঁয়ে দিলেই চামড়ার উপর তার অধিকারও প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। তখন তারা দুজনে মিলেই মেরুদণ্ড পর্যন্ত চামড়া ছাড়ানোর কাজটা যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি করতে থাকে। কারণ তার মধ্যে আবার যদি ওদের মতো অন্য কেউ এসে পড়ে ছুঁয়ে দেয়, তাহলে সেই তৃতীয়জনও আরো একজন ভাগীদার হয়ে দাঁড়াবে।

বরাত দোষে অনেক সময় একটা গোরুর চামড়ার চারপাঁচ জন ভাগীদার জুটে যায়। সেক্ষেত্রে সবারই প্রাপ্তি খুবই কমে যায়। এদের মধ্যে এমন কেউ কেউ থাকে যারা গোপনে গৃহস্থের বাড়িতে বৃদ্ধ বা অসুস্থ গবাদি পশুর নিয়মিত খোঁজখবর রাখে। মারা গেল কিনা খবর নেয়। মারা যাবার খবর পেলেই দ্রুত সেখানে পৌঁছে যায়। পৌঁছে গিয়ে সেই গৃহস্থকে সাহায্য করে মৃতদেহ ভাগাড়ে বয়ে নিয়ে যেতে।

অনেক গৃহস্থ আবার ভাগাড়ে নিয়ে যাবার আগে পর্যন্ত তাদের নিজস্ব সংস্কারবশত মৃত গোরুকে এদের ছুঁতে দেয় না। সেই সময় কেউ যদি ঘটনাচক্রে সেখানে উপস্থিত থাকে তবে সে অদূরে অপেক্ষা করতে থাকে। ভাগাড়ে গোরুটির মৃতদেহ পড়ামাত্রই সে ঝাঁপিয়ে পড়ে চামড়া ছাড়ানোর কাজ শুরু করে দেয়, যাতে অন্য কাউকে সেই চামড়ার ভাগ দিতে না হয়, যাতে তার অনটনে ক্লিষ্ট সংসার চলার জন্য কিছুদিনের করুণ রসদ জোগাড় হতে পারে।

।।চার।।

গণেশের বড্ড হাঁপ ধরে যাচ্ছিল। তার বয়স তিনকুড়ি পেরিয়ে গেছে। গোরুর চামড়া ছাড়ানো খুবই পরিশ্রমসাধ্য কাজ। চামড়ার সম্ভাব্য ভাগীদার এড়াতে খুব তাড়াতাড়ি কাজটা করতে হয় বলে আরও বেশি কষ্ট হয়। আবার খুব তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে চামড়ায় ছুরির পোঁচ তিন গণেশের বড্ড হাঁপ ধরে যাচ্ছিল।

তার বয়স তিনকুড়ি পেরিয়ে গেছে। গোরুর চামড়া ছাড়ানো খুবই পরিশ্রমসাধ্য কাজ। চামড়ার সম্ভাব্য ভাগীদার এড়াতে খুব তাড়াতাড়ি কাজটা করতে হয় বলে আরও বেশি কষ্ট হয়। আবার খুব তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে চামড়ায় ছুরির পোঁচ পড়ে যাতে চামড়া কেটে না যায় সেটাও খেয়াল রাখতে হয়। কেটে যাওয়া চামড়ার ভালো দাম পাওয়া যায় না।

চামড়া ছাড়াতে ছাড়াতে গোরুর মৃতদেহের রক্তে রসে হাতের আঙুল আর ছুরি দুই-ই পিচ্ছিল হয়ে ওঠে। সেজন্য বারবার কাজ থামিয়ে হাত ভালোভাবে মুছে নিয়ে চামড়া ছাড়াবার কাজ চালিয়ে যেতে হয়। আজ ভাগ্যবলে যদি এই চামড়ার কোনো ভাগীদার না জোটে তাহলে সংসারের অভাবের কিছু সুরাহার সঙ্গে সঙ্গে হয়তো গণেশের বহুদিনের অন্য একটা সাধ পূর্ণ হলেও হতে পারে।

গণেশ একজন ঢাক-শিল্পী। কিন্তু প্রায় একবছর হতে চলল তার ঢাকের একদিকের চামড়ার ছাউনি ছিঁড়ে গেছে। অভাবের তাড়নায় ঢাকটা আর মেরামত করে উঠতে পারেনি। সেজন্য গত দুর্গাপুজোর মরসুমে ঢাক বাজানোর বায়না এলেও ঢাক বাজাতে যেতে পারেনি সে। ঢাক বাজিয়ে যেমন কিছু রোজগার হয় তেমনই মনের তৃপ্তি হয় গণেশের।

ঢাক বাজানোর ক্ষেত্রে মজুরির টাকা পাওয়া ছাড়াও অন্য একটা ব্যাপার আছে গণেশের মধ্যে। ঢাক বাজাতে গিয়ে প্রায়ই সে যেন আস্তে আস্তে তার নিজের বাজনার মধ্যে ঢুকে পড়ে। নিজেরই সৃষ্ট লয়সমৃদ্ধ দক্ষ ধ্বনি তরঙ্গে সে এক সম্মোহিত অবগাহন করতে থাকে। তাই ঢাক বাজানোর কোনো প্রস্তাব এলে বিশেষ দরদস্তুর না করে বায়নাটা নিয়ে নেয় গণেশ। এবারে দুর্গা পুজো বা কালী পুজোর সময়ে খুব ইচ্ছা থাকা সত্বেও সেটা আর সম্ভব হয়নি।

।।পাঁচ।।

একদিকের চামড়া ছাড়িয়ে মেরুদণ্ড পর্যন্ত যখন সত্যিই পৌঁছে গেল গণেশ তখন তার বুকটা হাপরের মতো প্রচণ্ড জোরে ওঠানামা করছে। ছুরিটা একপাশে ফেলে রেখে মাটিতে থেবড়ে বসে পড়ে হাঁপাতে থাকে সে। বহুদিন পরে সে একটা পুরো চামড়া পেতে চলেছে। এটাতে নিয়ম মাফিক আর কেউ এসে ভাগ বসাতে পারবে না। এখন সে বেশ খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিতেই পারে।

এমন সময় সে দেখতে পেল তাদের পাড়ার মাধাই দাস সেই গো-ভাগাড়ের দিকে ছুটতে ছুটতে আসছে। একেবারে কাছাকাছি এসে মেরুদণ্ড পর্যন্ত অর্ধেকটা চামড়া ছাড়ানো হয়ে গেছে দেখে খুব হতাশ গলায় মাধাই আক্ষেপ করে ওঠে -

‘মেরে দিলে গণেশদা? একা একা পুরো চামড়াটাই আজ মেরে দিলে?’

হা-ক্লান্ত গণেশ মাধাইয়ের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে হাঁপাতেই থাকে। দেখে শুনে মাধাই চোখ সরু করে ফিকির খোঁজে -

‘খুব দমছুট হয়ে পড়েছ দেখছি। চামড়ার বাকিটা বরং আমিই ছাড়িয়ে দিই। শ’দুয়েক টাকা ধরে দিও।’

‘শতখানেক টাকা দিতে পারি, যদি রাজি থাকিস তো লেগে যা। না হলে আমি কাজটা করে নেব।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে, তাই দিও, তবে ভালো দাম পেলে বিশ পঞ্চাশ উপরি দিও।’

গণেশ কোনো উত্তর দিল না। মাধাই নিজের ছুরি বের করে চামড়া ছাড়ানোর কাজ শুরু করে দেয়। মাধাইয়ের বয়স কম, গায়ে শক্তিও বেশি। মৃত গোরু-মোষের চামড়া সে-ই বেশি পেয়ে থাকে। আশেপাশে গ্রামের অসুস্থ বা বুড়ো গোরুর সব খবরাখবর রাখে মাধাই। নিয়মিত টহল দেয় সে সব জায়গায়। এজন্য গৃহস্থরা মাধাইকে মোটেই ভালো চোখে দেখে না। কেন না সে তো সব সময় কোনো না কোনো গোরুর মৃত্যুর প্রতীক্ষায় ঘুরে বেড়ায়।

গণেশ কখনই তা করে না। তার স্বভাবই আলাদা। সে বেতের জিনিসপত্র তৈরি বা সারাই করার জন্য বেত আর প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। সে সবের ফাঁকে যদি কখনো মৃত গোরু চোখে পড়ে এবং সেই গোরুটা যদি বলদ বা ষাঁড় হয় একমাত্র তখনই চামড়া ছাড়ানোর জন্য সেটাতে হাত লাগায়। গাভী হলে গণেশ কখনই তা ছোঁবে না। তার এই আচরণের এক গভীর করুণ কারণ আছে।

।।ছয়।।


এখন গণেশের একটিই সন্তান, সেটি ছেলে। সাবালক হবার পর ছেলেটি হলদিয়ায় একটা কারখানাতে কাজ জোগাড় করেছিল। কাজের সূত্রে সেখানেই সে থেকে যায়। বাড়িতে আসত না বা মা-বাবার কোনো খোঁজখবর নিত না সে। টাকাপয়সা সাহায্য করা তো অনেক দূরের কথা। সেখানে কাজ করতে করতে একসময় বাবা-মাকে না জানিয়ে একটা বিয়ে করে সেখানেই সংসার পেতে ফেলেছে। এখন তো বাবা-মার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্কই নেই।

গণেশ অবশ্য প্রথম থেকেই মনে প্রাণে কন্যাসন্তান কামনা করেছিল। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে প্রথমে জন্মালো ছেলে। ছেলে জন্মাবার পর গৃহদেবী মা মনসার কাছে মানত করেছিল গণেশ একটি কন্যাসন্তানের জন্য। মানত সফল করে সাত বছর পরে জন্মেও ছিল এক কন্যা।

মহা আনন্দে কন্যার নামকরণ করেছিল গণেশ – দুলালী। সাধ্যমত আড়ম্বরে মানত চুকিয়েছিল মা মনসার। কিন্তু গভীর দুর্ভাগ্যে মাত্র আটত্রিশ দিন পরে কৌশল্যার কোল হঠাৎ খালি করে দুলালী চিরতরে চলে যায়। বছর দুই পরে সে দুঃসহ শোক কোনোমতে একটু সামলে নেবার পর গণেশ আবারও মানত করেছিল এক কন্যাসন্তানের জন্য। কিন্তু মা মনসা আর দেননি।

বেশ কয়েক বছর পরে গোপন কন্যাতৃষ্ণা মেটাতে গো-হাটা থেকে একটি মাতৃহারা বকনা বাছুর কিনে এনেছিল গণেশ। সাধ করে তারও নাম রেখেছিল দুলালী। দুলালী দেখতেও ভারী সুন্দর ছিল। তার গায়ের রঙ চকলেটের মতো। কপালে সাদা রঙের তিলকের মত দাগ।

সারা দেহ মসৃণ উজ্জ্বল ঠাসা লোমে ঢাকা। নিবিড় আদর ও যত্নে দিনে দিনে চন্দ্রকলার মত বেড়ে উঠেছিল মাতৃহারা 'দুলালী'।

গণেশ তাকে চোখে হারাতো। গণেশকে বেশিক্ষণ না দেখলে দুলালীও অস্থির হয়ে পড়ত। সকালে দুপুরে রাতে নিয়ম করে দুলালীর সারা গায়ে কতক্ষণ সস্নেহে হাত বোলাত গণেশ। তাছাড়াও দুলালীর গলার নীচটা, ঘাড়ের দিক, দুটো কানের গোড়া, দুটো শিং এর গোড়া আর কপালটা ভালো করে চুলকে আদর করে দিত। দুলালীকে নিয়ে গণেশের রকম-সকম দেখে তার বউ কৌশল্যা হেসে বলেছিল –

‘হ্যাঁ গো দুলালীর বাপ, দুলালী তোমার মানুষ মেয়ে হলে বিয়ে দিতে কী করে?’

‘দিতাম গো বিয়ে। মেয়ের বিয়ে দিতাম ঠিকই, তবে দেখেশুনে খুঁজেপেতে ঘরজামাই করে বিয়ে দিতাম।’

।।সাত।।

গণেশের বড়ো কপালমন্দে সেই দুলালীও খুব বেশিদিন তার কাছে থাকল না। দুবার দুটো বাচ্ছার জন্ম দেবার পর হঠাৎ একদিন ছ্যারানি রোগ হল দুলালীর। কাছের গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার সময়মতোই ডাকা হয়েছিল, কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেল। দুলালী বাঁচল না। গণেশের বুক খালি করে দিয়ে এই দুলালীও চলে গেল। মাটিতে লুটিয়ে ছটফট করে কাঁদতে লাগল গণেশ। প্রতিবেশিরা এসে অনেক কষ্টে তার কান্না থামিয়ে তাকে শান্ত করে বলল -

‘যত কষ্টই হোক, নিয়ম মেনে এবার তো দুলালীকে গো-ভাগাড়ে নিয়ে যেতেই হবে।’

একসময় কান্না থামিয়ে শোকাহত গণেশ খানিকক্ষণ নিঝুম হয়ে বসে রইল। তারপর ভাঙা গলায় বলল -

‘হ্যাঁ, তা তো নিতেই হবে। দুলালীর সৎকার করা তো দরকার। কিন্তু আমার দুলালীকে বাঁশে ঝুলিয়ে নিয়ে যাস না।’

বাঁশের মোটা বাখারির তৈরি ধান ঝাড়াই করার একটা পাটাতন জোগাড় করে তাতে তুলে কয়েকজন মিলে কাঁধে করে দুলালীকে নিয়ে যাওয়া হল। গণেশ নিজে কাঁধ দিয়েছিল। গো-ভাগাড়ে নিয়ে যাবার পর পাড়ার একজন খানিক ইতস্তত করে বলল -

‘গণেশ নিজে মনে হয় চামড়াটা ছাড়িয়ে নিতে পারবে না। ওর হয়ে যদি অন্য কেউ...’

‘না!’ –আর্তনাদ করে উঠেছিল গণেশ - ‘আমার দুলালীর গায়ে কেউ হাত দিবি না। আমি ওকে মাটি দেব।’

অগত্যা অতি বিরল ব্যতিক্রমে সেই গো-ভাগাড়ের এক প্রান্তে একটা বিশাল গর্ত খুঁড়ে তাতে দুলালীকে মানুষের মতই সমাধি দেওয়া হয়েছিল। বাড়ি ফিরে আসার পরও নাওয়া খাওয়া ভুলে কদিন ধরে বুক চাপড়ে নীরব কান্না কেঁদেছিল গণেশ তার দুলালী মেয়ের জন্য।

তার পর থেকে সে যতই অভাব অনটনের দাঁতে চর্বিত হোক না কেন, কখনও কোনো মৃত গাভীর বা বকনার চামড়া ছাড়ানোর কাজটা কখনও করত না। মৃত গাভী দেখলেই তার মনে পড়ে যায় দুলালীর কথা। খুব কষ্ট হতে থাকে তার। সেখান থেকে যত দ্রুত পারে সরে যায় গণেশ। দেখতে দেখতে প্রায় চারবছর হয়ে গেল দুলালী চলে গেছে। তবুও তার সেই কষ্ট কমেনি।

।।আট।।

মাধাইয়ের অবশ্য এই ধরণের কোনো সমস্যা নেই। সে খুব বাস্তববাদী – অত্যন্ত হিসেবি লোক। তার বাড়িতেও গাইগোরু আছে। সেই সব গোরু সময়ে বা অসময়ে মারা গেলে চামড়াটা নিজের হাতে ছাড়িয়ে নিতে মাধাই কোনো অসুবিধা বোধ করে না। গোরু সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গিটাই আলাদা। কেউ দেখে গোরুর স্বাস্থ্য। কেউ দেখে গোরুর উচ্চতা, - হালে জুড়লে মানাবে কী না। কেউ দেখে বয়স – অর্থাৎ আরও কত বছর গোরু কর্মক্ষম থাকবে। কেউ কেউ গোরুর গায়ের রঙ ও সৌষ্ঠবও দেখে।

কিন্তু মাধাই শুধু দেখতে পায় কত বড়ো চামড়া দিয়ে গোরুটা ঢাকা। গোরুর গায়ে কোনো নতুন বা পুরনো ক্ষত আছে কী না, অর্থাৎ গোরুটার চামড়ায় খুঁত আছে কী না। নিখুঁত চামড়া হলে কী রকম দামে বিক্রি হতে পারে তার হিসেবও কষে। বুড়ো হয়ে মরে যাওয়া গোরুর চামড়া সে ছাড়ায় বটে তবে তাতে তেমন ভালো দাম পাওয়া যায় না। কারণ বুড়ো গোরুর চামড়ায় নানারকম খুঁত থাকেই। তার চেয়ে অসুখ বিসুখ হয়ে অকালে মরে যাওয়া জোয়ান গোরুর চামড়াতেই তার বেশি আগ্রহ। কারণ সেইসব চামড়ার জন্য ভালো দাম পাওয়া যায়।

গোরুর অকাল মৃত্যুতে গো-পালক গৃহস্থ শোকগ্রস্ত এবং যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিন্তু তেমন কোনো খবরাখবর পেলে মাধাইয়ের মন গোপন খুশিতে নেচে ওঠে। চামড়াটা একা একা ছাড়িয়ে নিয়ে পারলেই একলপ্তে অনেক টাকা হাতে আসবে। অবশ্য সেও বেতের আসবাব সারানোর কাজ কিছু কিছু জানে। তবে তার হাতের কাজ ভালো নয়। গণেশের মতো দক্ষ মিস্ত্রি সে নয়।

আসলে এসব মেরারমতি কাজের অজুহাতে সে ঘোরাঘুরি করে বেড়ায় কোথায় কোন গোরু অসুস্থ হয়েছে সেই খোঁজ নেবার জন্য। অদক্ষ হাতে বেতের আসবাব তৈরি করে বা মেরামতির কাজ করে যে মজুরি পায় সে তাতে তার ঠিকমতো পোষায় না। মেরামতির কাজের ব্যাপারটা তার পছন্দেরও নয়। কম সময়ের কাজে অনেক বেশি টাকা রোজগারের পক্ষপাতী সে।

।।নয়।।

বর্ষার শেষের দিক বা শরতের প্রথমের দিকটা গ্রামের মানুষের পক্ষে বেশ অসুবিধার সময়। বিশেষ করে দরিদ্র শ্রমজীবি মানুষদের বড়ো কষ্টে কাটে এই সময়টা। তাদের ঘরে অভাব অনটনের চূড়ান্ত অবস্থা চলে এসময়ে। প্রাকৃতিক নানা অসুবিধাও এই সময়ে খুব বেশি হয়।

এসময় মাঠঘাট সব জলে টইটম্বুর হয়ে থাকে। ফলে সেসময় গবাদি পশুর চারণক্ষেত্র বলে কিছু থাকে না। বাধ্য হয়ে রাস্তার ধারে ধারে যেখানে অল্পস্বল্প ঘাস থাকে সেখানেই খোঁটা পুঁতে তার সঙ্গে দড়ি দিয়ে দুপুর পর্যন্ত গোরু বেঁধে রাখা হয়। দুপুর হলে গোরুটাকে আবার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এই সময় নানা রোগ ব্যাধিতে গবাদি পশুর মৃত্যুর হারও বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেড়ে যায়।

তবুও সুধন্য মণ্ডলের সাদা মস্তবড়ো সুস্থসবল জোয়ান বলদটা যখন হঠাৎ করে ধড়ফড়িয়ে মারা গেল তখন পাড়ার সবাই কমবেশি অবাক হয়েছিল। অসুস্থ বলদটার চিকিৎসার জন্য ডাক্তার ডাকারও সময় পাওয়া গেল না। অদ্ভুতভাবে মাধাই সে সময় কাছাকাছি কোথাও ছিল। গোরুটা মারা যাবার পরেই সে পৌঁছে গেল সেখানে। মৃত গোরুটা ভাগাড়ে নিয়ে যাবার পর সে-ই চামড়াটা ছাড়াল, একাই ছাড়িয়ে নিল।

চামড়া ছাড়ানোর কাজ শুরু হবার আগেই গৃহস্থরা সেখান থেকে চলে যায়। নিজের পোষা প্রাণীর দেহের চামড়া ছাড়ানো দেখতে কারোও ভালো লাগে না। কিন্তু সুধন্য মণ্ডল চলে গেল না। চামড়া ছাড়ানোর কাজটা শেষ হওয়া পর্যন্ত সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল। এবার সে এগিয়ে গিয়ে মাধাইকে বলল বলদটার পাকস্থলী চিরে দেখাতে। মাধাই সেকাজ করতে গিয়ে গাঁইগুঁই করতে লাগল। কিন্তু সুধন্য মণ্ডল তাকে বাধ্য করল কাজটা করতে। অগত্যা মাধাই মৃত বলদটার পাকস্থলী চিরে ফেলল।

পাকস্থলী চিরে ফেলতে সেখানে দেখা গেল সবুজ কলাপাতার বেশ কিছু টুকরো আছে। অর্থাৎ গোরুটা খেয়েছিল। সেই কলাপাতা খেয়ে হজম করতে পারার আগেই গোরুটার মৃত্যু ঘটেছিল। আর গোরুটা যেখানে বাঁধা ছিল তার আশপাশে কোনো কলাগাছ ছিলই না। পরিষ্কার বোঝা গেল গোরুটাকে মারবার জন্য নিশ্চয়ই কেউ কলাপাতার মধ্যে বিষ দিয়ে অবোধ গোরুটাকে খাইয়ে দিয়েছিল। প্রতিবেশিদের সঙ্গে সবারই কিছু না কিছু শত্রুতা কম বা বেশি থাকে। কিন্তু সেজন্য এতবড়ো নিষ্ঠুর অন্যায় কাজ প্রতিবেশিদের মধ্যে কেউ করবেই না।

স্বাভাবিক ভাবেই সব সন্দেহ গিয়ে পড়ল মুচি সম্প্রদায়ের যে কজন লোক এদিকে চামড়া ছাড়াতে আসে তাদের উপরেই। প্রধানত মাধাইয়ের উপরেই সব সন্দেহ গিয়ে পড়ল। কিন্তু মাধাই কেঁদেকেটে একসা করে মা মনসার নামে দিব্যি খেয়ে বলল এ কাজ সে কখনই করেনি। ব্যাপারটা তখনকার মতো চাপা পড়লেও সবার মনেই গভীর সন্দেহ ও আশঙ্কা দানা বেঁধে গেল।

।।দশ।।

এই দুর্ঘটনার দিন পনেরো কুড়ি পর। সেই গ্রামের দক্ষিণ পাড়াতে ঢোকার রাস্তা দিয়ে দুর্বল পায়ে গণেশ আসছিল। প্রায় মাসখানেক হয়ে গেল নিজের গ্রামের বাড়ি থেকে বেরোতে পারেনি সে। প্রচণ্ড জ্বরে খুব কাবু হয়ে কতদিন পড়ে ছিল বিছানায়। ওদের জ্বরটর হলে ওষুধপত্রের তেমন ব্যাপার-স্যাপার নেই। ডাক্তার বদ্যি দেখানোর বিলাসিতা গণেশদের পোষায় না। ওষুধের দোকান থেকে অল্প পয়সায় কেনা দু’চারটে অনিয়মিত ট্যাবলেটই ভরসা।

দিন তিন চার আগে জ্বর ছেড়ে গেলেও তার শরীর বড়ো দুর্বল। আজ তার ট্যাঁকে গোরুর চামড়া ছাড়াবার ছুরিটা গোঁজা নেই। ইচ্ছা করেই ছুরিটা নেয়নি সে। গোরুর চামড়া ছাড়াবার ক্ষমতা এখন নেই তার শরীরে। তবু সে বেরিয়েছে পেটের দায়ে। ঘরে গতকাল থেকেই ঘরে চাল বাড়ন্ত। গৃহস্থের বেতের তৈরি জিনিসপত্র মেরামত করে যদি কিছু রোজগার হয় সেই আশায় শরীরে কষ্ট নিয়েও তাকে বেরোতে হয়েছে।

দক্ষিণ পাড়ায় ঢোকার মুখে ডানপাশে একটা পুকুর আছে। পুকুর পাড়ে ছোটোবড়ো গাছের জটলার মাঝে একটুআধটু ফাঁকা জায়গাও আছে। পাড়ায় ঢোকার রাস্তা ধরে পুকুরটার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল সে। হাঁটতে হাঁটতে পুকুরটা প্রায় পেরিয়ে গিয়েছে সে, এমন সময় গলার মধ্যে ডেকে ওঠা একটা হালকা হাম্বা-রব ভেসে আসে পুকুরপাড় থেকে। ডাকটা অনুসরণ করে তার দৃষ্টিটা ঘুরে যায় সেদিকে। তার পরেই বুকটা সজোরে ধড়াস করে ওঠে তার -

- দুলালী! - দুলালী!

সেই চকলেট রঙের ঠাসা লোমে ঢাকা শরীর। সেইরকম ছোটো ছোটো ভারী সুন্দর দুটি বাঁকা শিং। কপালের মাঝখানে সেইরকম সাদা তিলক! একদৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে দুলালী! মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেদিকে পায়ে পায়ে এগোতে থাকে গণেশ।

দুলালী!! কিন্তু কী করেই বা তা সম্ভব? চার বছর আগেই সে তো নিজের হাতেই তার আদরের দুলালীকে গো-ভাগাড়ে মাটি দিয়েছে। অবশ্য দুলালীর দু’বারে দু’টো বকনা বাছুর হয়েছিল। দুটো বকনাই তাদের মায়ের গায়ের রঙ অবিকল পেয়েছিল। অভাবের তাড়নায় সে দু’টো বকনা একটু বড়ো হবার পর বাধ্য হয়ে বেচে দিয়েছিল। এটা কি তাহলে তাদেরই কেউ? নাকি তাদেরই কারও সন্তান এটা?

।।এগারো।।

এসব ভাবতে ভাবতে তার পা-দুটো আপনা থেকেই সচল হয়ে ওঠে। কিছুটা সম্মোহিতের মতো ধীরে ধীরে গাইগোরুটার দিকে এগিয়ে যায় সে। এটা এই পাড়ার কারও গরু হবে। ফাঁকা জায়গা দেখে এখানটায় বেঁধে দিয়ে গেছে তারা। অল্পস্বল্প ঘাসও আছে সেখানটায়। গাইগোরুটার একেবারে কাছে গিয়ে তাকে ভালো করে দেখে সেটার হামলে ওঠার কারণ বুঝতে পারে গণেশ।

শরৎকালে বড়ো বেশি ছিনেজোঁকের উপদ্রব হয়। গাইগোরুটার চারটে পায়েই খুরের রক্তমাখা ভাঁজে অনেকগুলো বড়ো বড়ো ছিনেজোঁক কামড়ে ধরে আছে। বার বার পাগুলো ছিটকে রক্তপানরত জোঁকগুলো ছাড়াবার ব্যর্থ চেষ্টা করছে সে। মানুষ দেখে সাহায্যের আশায় হামলে উঠেছে গোরুটা। তার কষ্ট দেখে বুঝে বুকটা মুচড়ে ওঠে গণেশের।

পরম যত্নে সেই হঠাৎ দেখা ‘দুলালী’র চারটে পায়ের খুরের ভাঁজ থেকে জোঁকগুলো টেনে ছাড়িয়ে ফেলে দেয় সে। খুঁজে খুঁজে ঢোলকলমি গাছের পাতা তুলে আনে। দু-হাতের তালুতে ঘষে রস করে রক্তপাত বন্ধ করার জন্য আর ব্যথা কমানোর জন্য সেই রস গভীর মমতায় লাগিয়ে দিতে থাকে জোঁক কামড়ানোর আহত জায়গাগুলোতে।

সেই দুলালী’ বুঝতে পারে এসব যত্ন আর পরিচর্যা। আরও আদর পেতে সে এবার গণেশের কাঁধে তার মাথাটা নিজেই তুলে দেয়। দুলালী-হারা গণেশ এবার কেঁদে ফেলে। হাত দিয়ে গোরুটার গলার নীচ, কানের গোড়া সাদরে চুলকে দিতে থাকে। আরামে ‘দুলালী’র চোখ বুজে আসে আর গণেশের চোখ অরব অশ্রুতে ভেসে যেতে থাকে। ঠিক এইভাবেই তার কাছে আদর খেত তার সেই দুলালী। দু'হাতে ‘দুলালী’র গলাটা জড়িয়ে ধরে অস্পষ্ট গাঢ়স্বরে সে বলতে থাকে - দুলালী - আমার দুলালী মা!

দুপুর গড়িয়ে গেছে। প্রায় দুটো বাজে। গোরুটাকে যে বেঁধে দিয়ে গেছিল সে এবার গোরুটাকে বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য সেখানে চলে এসেছে। সেখানে আসার পর তার চোখে পড়ল এক অপ্রত্যাশিত দৃশ্য। গণেশ মুচি তার গাইগোরুটার গলা জড়িয়ে ধরে আছে। একবার তাকিয়ে দেখেই আতঙ্কে চিল চিৎকার করে ওঠে সে -

‘কে কোথায় আছিস ছুটে আয়! দেখে যা কী হচ্ছে এখানে! শালা গণেশ মুচি এসে আমার গোরুটাকে বিষ খাওয়াচ্ছে!’

তার সেই তীব্র চিৎকার শুনে আশপাশ থেকে কয়েকজন লোক সেখানে ছুটে আসে। গাইগোরুটার সঙ্গে ওই অবস্থায় গণেশকে দেখে প্রচণ্ড খুনে রাগ চেপে যায় সবার মাথায়। এই তো মাত্র সপ্তা দুয়েক আগেই সুধন্য মণ্ডলের জোয়ান বলদটাকে এইভাবে কেউ না কেউ এসে বিষ খাইয়ে দিয়ে মেরে দিয়েছিল।

কে জানে এই শালা গণেশ ব্যাটাই সেই বলদটাকে বিষ খাইয়ে দিয়েছিল কী না! এখন আবার এই গ্রামে এসে এই গাইগোরুটাকে দুপুরের ফাঁকতালে বিষ দিয়ে আজ মারবার চেষ্টা করছে! গাইগোরুটা মরে যাবার পর তার চামড়াটা ছাড়িয়ে বেচে দেবার মতলব করেছে!

উগ্র বন্য রাগে অন্ধ হয়ে যায় তারা। কল্পিত ভীষণ প্রতিহিংসায় একসঙ্গে সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়ে গণেশের উপর। ভালো করে সব কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের মিলিত নির্মম হিংস্র কিল চড় ঘুঁষির তলায় হারিয়ে যেতে থাকে দুলালীর বাপের জ্বরক্লিষ্ট দুর্বল দেহ।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন