তর্পণ - মাখনলাল প্রধান

 

লঙ্গরখানার সামনেও অতবড় লাইন দেখা যায় না । সকাল থেকেই যেন যজ্ঞ শুরু হয়েছে পুকুর ঘাটে , নদীর ঘাটে , খানাডোবায় । উপরে নীচে মানুষের ভিড়ের সঙ্গে কত রকমের কথাবার্তায় একটা মহান কর্তব্যের দায়িত্ব নিয়ে যে তাদের আগমন সেটা জোর গলায় শোনাতে  ভোলে না । ধর্মের এতবড় মহাযজ্ঞ পৃথিবীর আর কোথাও হয় না । পৃথিবী হয়তো অবাক চোখে এদিকেই তাকিয়ে আফশোস করছে । শ্রদ্ধা আর ভক্তিমার্গের এতদূর প্রকাশ জাতিকে আভিজাত্য দান করে।


এক কোমর গঙ্গায় দাঁড়িয়ে জল পাতালের কোন সুড়ঙ্গ পথের নেশায় সুর মেলাচ্ছে সুরলোক সন্ধানীরা , তা বামুন নিশ্চয়ই বলে থাকবেন  যতজন ডাঙ্গায় ততোধিক জলে । তবে তিনি মানে বামুন ঠাকুর সিঁড়িতে বসে ভারিক্কি মেজাজে তড়াপাচ্ছেন । ব‍্যস্ততার সময় কোনো দিকে তাকাবার অবসর থাকে না  নগদ নারায়ণের উপাসক বামুন বাবাজি সেই উত্তেজনায় মাঝে মাঝে বেশ ভারী উপদেশ ছড়ান ।

 - হুঁহু বাবা ,  আমাদের চোদ্দ পুরুষ পরলোকে গিয়েও জল পায় । দুনিয়ায় একমাত্র আমাদের—

উৎবেগের সঙ্গে ডাঙ্গায় অদূরে দাঁড়িয়ে একটি বছর বারো বয়সের ছেলে কাকাকে জানায় যে , বাবার জ্বরটা বেড়েছে ।ঠাকুমা তোমাকে ডাকছে

বামুন মিষ্টি করে বলে - বছরে একটা দিন একটু তর্পণ করবে - জ্বরের আর ত্বর সইলো না। থাম থাম, এক ঘন্টায় মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। ডাক দেয় - নিরঞ্জন, কটা হল?

ছেলেটি মুখ কাঁচুমাচু করে অস্থিরতা প্রকাশ করে। কাকা তো এখন সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে, কাছে যাওয়া যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত মরিয়া হয়ে জোর গলায় বলে - বাবার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। ঠাকুমা কাঁদছে, তুমি তাড়াতাড়ি চল

বামুন অবহেলে বলে - পরলোকে জল পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। বলো - শাণ্ডিল‍্য গোত্রস‍্য –

কাকা আ আ … , বলেই ছেলেটি কেঁদে উঠলো

কাকা কী যেন ভেবে তড়াক করে জল থেকে উঠে আসে। ছেলেটি যেন কাকার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। কাকা আপন মনে বলে যায়,  মৃতের জন্য এখন সময় নষ্ট করে লাভ নেই। পৃথিবীটা আগেই পৃথিবীবাসীর জন্য। বলেই সে কোনো দিকে না তাকিয়ে হাঁটা দেয়

তার হাঁটার দিকে ফ‍্যালফ‍্যালিয়ে চেয়ে থাকতে থাকতে বামুন বলে - কলির নবতম সংস্করণ

 

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন