শাহিদ - কৃতির গল্পের গরু গাছে - শ্রীমতি বিনোদিনী


 ♦ সিনেমা –  তেরি বাতোঁ মে অ্যায়সা উলঝা জিয়া

♦ অভিনয়ে – শাহিদ কাপুর, কৃতি শ্যানন

♦ পরিচালনা – অমিত যোশী ও আরাধনা শাহ

 

মানুষ এখন কোন জায়গায় পৌঁছায়নি! গোটা পৃথিবী জয় করার পর মহাকাশ, চাঁদ, মঙ্গল গ্রহ কাউকেই ছেড়ে কথা বলেনি তারা। বিজ্ঞানের অগ্রগতি আজ কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে! এটা ওটা সেটা বানানোর সঙ্গে দুর্দান্ত রোবটও বানিয়ে ফেলছি আমরা, ভাবতে পারেন! যাকে দেখলে বুঝতেই পারবেন না যে সে রোবট। শুধু দেখা! তার সঙ্গে সারাদিন সময় কাটিয়ে, আড্ডা মেরে, নাচা গানা করে, ইয়ে বাকিটা আর বললাম না, তাও বুঝতে পারবেন না যে সে রোবট! আরে মশাই, আমি আপনি কোন ছার! রোবটিক্সের বাঘা বাঘা ইঞ্জিনিয়াররাও ঘোল খেয়ে যাচ্ছেন! বিশ্বাস হচ্ছে না? "তেরি বাতোঁ মে অ্যায়সা উলঝা জিয়া" সিনেমাটা দেখে আসুন, তাহলেই ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন

প্রথমেই বলি, সিনেমাটার নাম যে ইয়াব্বড় কেন রাখা হলো সেটা আমার মাথায় ঢোকেনি। মনে হয় কাব্যি করে রেখেছে। সিনেমার হিরো আরিয়ান একজন বিশাল বড় হনু গোছের রোবটিক্স ইঞ্জিনিয়ার। তার মাসি আবার তার চেয়েও বড় হনু। নিজের টিমের সাথে মিলে লম্বা বেঁটে পালোয়ান সবরকমের রোবট বানিয়ে টানিয়ে একেকার কান্ড করেছে। এবার সে বানিয়ে বসেছে সুন্দরী তন্বী হালফ্যাশনের কেতাদুরস্ত এক মহিলা রোবট যাকে দেখে যন্ত্রমানবী ভাবার কোন জো নেই। সেই রোবটের পরীক্ষা নিতে মাসিমণি ডেকে পাঠায় আদরের বোনপোকে। কিন্তু তাকে জানায় না যে এটা আসলে কোনো মেয়ে নয়, একটা রোবট। এদিকে তার "মেধাবী" "বুদ্ধিমান" "ইঞ্জিনিয়ার" বোনপো রোবট-নারীকে গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে তার প্রেমে হাবুডুবু। জল এতদূর গড়িয়েছে জানতে পেরে মাসিমণি তো ক্ষেপে লাল! তার এতদিনের এত কষ্টে বানানো রোবটকে কিনা ওই ছোকরা বগলদাবা করে নিয়ে কেটে পড়বে! এমন কিছু ঘটলে মাসিকে না তার কোম্পানি আস্ত রাখবে, না তার বোনের পরিবারের লোকজনেরা ছেড়ে কথা বলবে। ওদিকে আবার সেই ছোকরা তার যন্ত্রমানবী গার্লফ্রেন্ডকে কিছুতেই ছাড়বে না, তাকে বিয়ে পর্যন্ত করতে চায়!

কী কাণ্ড! তাই না! কোথাকার গল্প কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সহজে হজম হতে চাইছে না তো? একটা ছোট্ট টোটকা বলে দিই। সিনেমাটা দেখার সময় ভাবনাচিন্তা আর বিশ্লেষণক্ষমতাকে বস্তাবন্দী করে দরজার বাইরে রেখে তবেই দেখতে শুরু করবেন। তাহলে কিন্তু খারাপ লাগবে না। হালকা চালের হাসি মজা মেশানো বেশ ভালো মুভি। দেখে মজা লাগবে, উপভোগও করবেন। শুধু কথায় কথায় লজিক খোঁজার মতো বিষম ভুল না করলেই হলো!

অভিনয়ের প্রসঙ্গে বলতে গেলে শাহিদ কাপুর যথাযথ। কৃতিও তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন। পার্শ্বচরিত্রের অভিনেতা অভিনেত্রীদের কাজ যথেষ্ট ভালো। এককথায় বলা যায়, অভিনয় নিয়ে কারুর সেভাবে কোনো খামতি নেই। যা প্রশ্ন সব ওই কাহিনীকে ঘিরে। একজন অ-সাধারণ মানুষ হয়েও আরিয়ান রোবট আর মানুষের মধ্যে তফাৎ করে উঠতে পারছে না! শুনেছি ভালোবাসা নাকি অন্ধ হয়। তাই বলে এতখানি! রোবটের মেমোরি মুছে গেলে সে সব ভুলে যাচ্ছে, কারুর আপদে বিপদে কোনো আবেগ নেই (যেটা থাকা সম্ভবও নয়), আর পাঁচটা লোকের থেকে তার মানুষ বয়ফ্রেন্ডের প্রতি আলাদা কোনো ঘনিষ্ঠতার পার্থক্য সে বোঝে না (যেটা না হওয়াটাই স্বাভাবিক), তা সত্ত্বেও এই সিনেমার হিরো তাকে জীবনসঙ্গী বানাতে বদ্ধপরিকর। এসব দেখে কিছুটা কেন, সম্পূর্ণটাই আজগুবি ঠেকে। তার উপর আবার শেষ দৃশ্য! এতো বড়োদরের ইঞ্জিনিয়াররা বিগড়ে যাওয়া রোবটকে ঠিক করতে পারলো না, শাহিদ কাপুরের তরবারি ঝট করে সেই কাজ করে দিল। বিজ্ঞানের সাথে এই তরবারির কী যোগসূত্র, ঠিক বোঝা গেল না

পুরোটা পড়ার পরও ব্যাপারটা পরিষ্কার না হলে আমার কিন্তু কোনো দোষ নেই। গোটা সিনেমাটা দেখে কতকিছুই যে বোধগম্য হলো না, এ তো নিছকই একখানা রিভিউ। আরেকটা কথা, হাসির সিনেমা ভেবে অনেকেই বাচ্চাদেরকে সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন। জানিয়ে রাখা ভালো, সিনেমাটিতে বেশ কিছু প্রাপ্তবয়স্ক দৃশ্য রয়েছে। তাই সেদিকটা বিবেচনা করার ভার যে যার নিজের। তবে মোটের উপর সিনেমাটি খুব খারাপ নয়। কমেডি ড্রামা এন্টারটেইনমেন্ট মুভি হিসাবে "তেরি বাতোঁ মে অ্যায়সা উলঝা জিয়া" একবার অন্তত দেখে ফেলা যেতেই পারে। 



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন