পুনরাবৃত্তি - জিনিয়া কর

 

 

চাপ চাপ রক্ত, কাঁচের টুকরোয় ছয়লাপ রাস্তা, যানজট। স্পট ডেড। বিরল কেশ , প্রায় বৃদ্ধ ভদ্রলোকের রক্তাক্ত শার্টের পকেটে ফোনটা জ্বলে উঠছে বারে বারে। ভিড় করে রাখা জনতার মধ্যে গুঞ্জন। কেন যে বয়স্ক মানুষ একা..... !সত্যি আজকালকার ছেলেমেয়েরাও..... গাড়ির সংখ্যা.... চালক.... রাস্তাঘাটের অবস্থা....! টুকরো টুকরো কথা ভিড়ের মধ্যে ভাসে। আবার মিলিয়েও যায় নানান শব্দের মাঝে। কে যেন বলল, ফোনটা বাজছে তুললে হতো না? না না পুলিশ কেস। প্রতিবাদ করে কেউ

            ওদিকে ঝাড়া দু'ঘণ্টা রেস্টুরেন্টে বসে আছে মধুমিতা। দামটা গায়ে লাগলেও দু কাপ কফি খেয়েছে। আজ মনে অদ্ভুত উত্তেজনা। ফেসবুকে আলাপ মিস্টার শিলাদিত্যের সাথে। তিন বছরের ভার্চুয়াল প্রেম।আজ প্রথমবার মুখোমুখি

প্রথম জীবনে সুমিতের সাথে প্রেম টা পরিনতি পায়নি। ছোট্ট একটা ভুল বোঝাবুঝির কারনে নিজেকে শেষ করে দিয়েছিলো সুমিত। তারপরে আরো দুবার ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলো মধুমিতা। বাবা মা মধুমিতাকে স্থিতু দেখতে চেয়েছিলেন । বিয়ের ঠিক আগের দিন রাতে এক্সিডেন্টের খবরটা এসেছিলো ফোনে ! হবু জামাইয়ের মৃত্যু সংবাদ টা শুনে বিশাল কষ্ট পেয়েছিলেন বাবা। বাবাকে নিয়ে ডাক্তার হসপিটাল শ্মশান.... ! ছোটা ছুটিতে মধুমিতা কাঁদতে ভুলে গেছিল ।তার বছর দুয়েক পরে অফিস কলিগ রঞ্জিতকে নিজেই মন প্রাণ দিয়ে বসে ছিল ও । কিন্তু টেকেনি। মারন রোগ কি ছিলোই? নাকি? কেজানে....

এবার তিন তিনটে বছর কেটেছে নির্বিঘ্নে।তাই অনেকটাই সাহস করেছে মধুমিতা ।মেকআপে ঢেকেছে বয়সের দাগ ছোপ ।অনেক বছর পর আলমারি খুলে শাড়ি বের করে পড়েছে, সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি ।পাকধরা চুলে কালার। 

মধুমিতা অধৈর্য হয়ে ফোনটা আবার তুলে নেয়। আরো একবার, মোট চল্লিশবার হোলো এই নিয়ে। ফোনটা বাজতেই থাকে। কেউ তোলে না

 

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন